
'অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার'স ম্যান' নাকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পুরস্কার পেয়েছে! কিন্তু এটি আসলে কে বা কারা তৈরি করেছে এবং আল জাজিরার সঙ্গে এর সম্পর্ক কি - তা কিন্তু পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ফটোশপে এডিট করা কিছু ডকুমেন্ট, স্টিং অপারেশন ও সত্য-মিথ্যা মেশানো গল্পের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করে কুশীলবরা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য এরচেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছু হতে পারে না! অনেক পদক্ষেপ নেয়া যেতো কিন্তু প্রচলিত প্রতিবাদ ছাড়া কিছুই হয় নি। পদক্ষেপ নেয়ার মতো ক্ষেত্রগুলোর কয়েকটি উল্লেখ করছি:
১. বিতর্কিত ভিডিওর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক কি তা কি কোনোভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে?
(ভিডিওটি যে বানোয়াট তা তথ্য প্রমাণসহ লিখেছিলাম)
২. ভিডিও রিলিজের পর একমাত্র খালেদ মহিউদ্দিন কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। তখন তাসনিম খলিলের ভাষ্য ছিল - সে এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। নেত্র নিউজের কিছু ফুটেজ তারা ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রোডাকশন টিমের অন্যতম একজন ছিল সে। এছাড়া শহীদ খানের কথোপকথন বিক্রি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
৩. সামিকে উপস্থাপন করা হয়েছে একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে। সেই সামি অ্যামনেস্টি থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে কিভাবে? আল জাজিরা কি শুধু ডিস্ট্রিবিউটর ছিল? তাদের তদন্ত কি থার্ড পার্টি করে?
সামিউল আহমেদ খান ওরফে সামির বিরুদ্ধে কিশোর বয়স থেকে নানা ধরণের জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জাল সার্টিফিকেট দিয়ে সেনাবাহিনীতে ভর্তি কারণে তাকে বিএমএ থেকে বের করে দেয়া হয়। কয়েকবার গ্রেফতার হওয়ার কারণে নাম পরিবর্তন করে জুলকারনাইন সায়ের হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। নতুন নাম ও পিতার নাম আংশিক পরিবর্তন করে শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে হাঙ্গেরি পাড়ি দেন।
আল জাজিরার ফিল্মে সামির ভূমিকা ছিল একজন সোর্সের। এখন কোন যোগ্যতা বলে সে নিজেকে সাংবাদিক দাবি করছে? যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কার্টেসি জানে না, যাকে তাকে ট্যাগ দেয়, অসভ্যের মতো কে, কবে, কি পোস্ট দিল - সেদিকে ওঁৎ পেতে থাকে এবং অবিরাম প্রাইভেসি ভঙ্গ করছে - এমন একজন অর্ধশিক্ষিত "ফর্মা" কিভাবে আল জাজিরার আই ইউনিটের সদস্য পরিচয় দেয় - এই প্রশ্ন কি আল জাজিরাকে করা হয়েছে?
৪. সরকারি কর্মকর্তাদের বায়োডাটা বা সরকারি কিছু নথি জোগাড় করা কঠিন কোনো কাজ নয়। অনলাইনেই সরকারি কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট সহ অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সামির সরবরাহ করা নথিগুলি যে টেম্পারিং করা ছিল তা যাচাই করার মতো মেধাবী সাংবাদিক/গবেষক আল জাজিরা বা অ্যামনেস্টিতে নাও থাকতে পারে। কিন্তু সরকার তো এগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করে জবাব চাইতে পারতো!
৫. নেত্রীর এওয়ার্ড নিয়ে সামি যে মিথ্যাচার করেছে শুধু সেই ইস্যুতেই সামিকে হাঙ্গেরির আদালতে তোলা যায়।
সামি বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, টাকার মুখ দেখেছে হারিছকে পার্টনার বানিয়ে এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে তার অর্থ আত্মসাৎ করে। হারিছের সূত্রে উপস্থাপন করা অনেক ডকুমেন্টই টুইস্টেড ছিল। এমন কি টুজি মোবাইল যুগের ডিভাইসকে ২০১৮/১৯ সালের বলে দেখানো হয়েছে।
৬. হারিছকে বড় ব্যবসার লোভ দেখিয়ে আল জাজিরার ফিল্মে যা দেখানো হয়েছে সেটা ছিল একটি স্টিং অপারেশন। স্টিং অপারেশনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিই কোনো আদালতে দণ্ড পায় না। সুইডেন সহ অনেক দেশে স্টিং অপারেশন কেন্দ্রিক সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস সহ বড় বড় সংবাদমাধ্যমের নীতি হচ্ছে - পরিচয় না জানিয়ে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি না নিয়ে অডিও/ভিডিও ধারণ করা যাবে না। সরকার চাইলেই এ ভিডিও নিয়ে, এমন কি এ পুরস্কার নিয়ে তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে হলুদ সাংবাদিকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে।
৭. আল জাজিরার পুরস্কার গ্রহণ করতে পারে এজেআই ইউনিটের ফিল রীস বা তাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ। আই ইউনিটের একজন "ফর্মা" ও বিতর্কিত ব্যক্তি কিভাবে পুরস্কার গ্রহণ করে? এছাড়া একজন আন্ডারকভার রিপোর্টার যদি নিজের পরিচয় দিয়ে বেড়ায় তাহলে অনুসন্ধান হয় কিভাবে?
মাত্র কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করলাম এ কারণে যে, সরকার চাইলেই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারতো/পারে। এরা মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় ফেসবুকে পোস্ট করে এবং দেশের স্পর্শকাতর বিষয়কে টুইস্ট করে উপস্থাপন করে যেভাবে নোংরামি করে তাতে চুপ করে থাকা কঠিন।
চাইলে আমরাও কার বউ, বোন, ভাই কবে কার সঙ্গে কি করেছে তার তথ্য প্রমাণ প্রকাশ করতে পারি। রুচির প্রশ্ন।
Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: