
১৫ জুলাই ২০২২ তারিখে ডয়চে ভ্যালি বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা৷ দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ৷
গত ২৭ জুলাই রয়টার্স এর ঢাকায় সংবাদদাতা রুমা পাল লিখেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বুধবার বলেছে যে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পরে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরনের সহায়তা চাওয়ার জন্য দেশটি তৃতীয় হওয়ার পরে এটি বাংলাদেশের সাথে তার ঋণের অনুরোধ নিয়ে আলোচনা করবে।
নিউজের ইন্ট্রোডাকশন দেখেই বুঝা যায় তিনি হয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণের নাজায়েজ চেষ্টা করেছেন, উনি নিজে সংবাদদাতা না রয়টারের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তা বুঝতে পারলাম না।
১২ এপ্রিল ২০১২ সালে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ।
'গত এক দশক ধরে ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ। কারণ এই সময়ে রেমিটেন্স এবং রপ্তানি - দুটোই কম বেশি ভালো করেছে। কিন্তু এখন বিশ্বে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার কারণে রেমিটেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রপ্তানি ভালো হলেও আমদানি যে হারে বেড়েছে তাতে, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে একটা চাপ তৈরি করেছে।''
"আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) - সবার কাছ থেকেই স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া হয়। ঋণগুলো নেয়া হয় সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে''।
মি. শ্রীনিবাসন রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আভাস দিয়েছেন, বাংলাদেশকে হয়তো এই ঋণ পেতে হলে আইএমএফের এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির মতো নিয়মিত কর্মসূচীতে যেতে হবে।
সেক্ষেত্রে আইএমএফের দেয়া বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তের ব্যাপারে আলোচনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও।
রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশের এই অনুরোধের ব্যাপারে অক্টোবর থেকে আলোচনা শুরু হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে ঋণ বা আর্থিক সহায়তা নেয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। কিন্তু আইএমএফের এই তহবিল নিয়ে এতো আলোচনা কেন হচ্ছে?
আইএমএফ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিগত বিষয়ে সংস্কারের কিছু শর্ত দিয়ে থাকে। আর্থিক খাতের সংস্কারের এসব শর্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কায় অনেক সময় সরকার ঋণ নিতে চায় না।
বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি আছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷ বাংলাদেশেরও এই ঋণ প্রয়োজন৷ তবে এখন দর কষাকষির জায়গা হলো আইএমএফ-এর শর্ত৷ অর্থমন্ত্রী এর আগে শক্ত অবস্থানে থাকলেও এখন নমনীয়৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশকে আইএমএফ-এর ঋণ পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে রিজার্ভের হিসাব আইএমএফ-এর ফর্মুলা অনুযায়ী করতে হবে৷ তাদের হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভ আরো সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার কম ধরতে হবে৷ কারণ, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, শ্রীলঙ্কাকে ঋণ, বাংলাদেশ বিমানকে ঋণ, গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন ফান্ডসহ আরো কয়েকটি খাতে যে ডলার দিয়েছে, তা ওই রিজার্ভের হিসাবে ধরা হয়েছে, যার পরিমাণ সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার৷ এটা হিসাবের বাইরে রাখতে হবে৷
বাংলাদেশের $৪১৬ বিলিয়ন অর্থনীতি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে এর আমদানি বিল এবং চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়েছে।
আইএমএফ বলেছে যে বাংলাদেশ তার নতুন স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধার জন্য আগ্রহী যার লক্ষ্য দেশগুলিকে জলবায়ু-পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করা এবং একটি "সহগামী আইএমএফ প্রোগ্রাম" এর জন্য আলোচনার অনুরোধ করেছে।
আইএমএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, "আইএমএফ বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে পরিস্থিতি অনুকূল হলেই সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নেবে এবং বলেছিলেন যে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক আছে। "যদি আইএমএফের শর্ত দেশের অনুকূলে থাকে এবং আমাদের উন্নয়ন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, আমরা এটির জন্য যাব, অন্যথায় নয়," মন্ত্রী এ.এইচ.এম. মোস্তফা কামাল ড. "আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়ার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে।"
বাংলাদেশের ডেইলি স্টার সংবাদপত্র মঙ্গলবার জানিয়েছে যে সামগ্রিকভাবে, দেশটি বাজেট এবং ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সহায়তা সহ আইএমএফ থেকে $ ৪.৫ বিলিয়ন চায় বাংলাদেশ।
দেশের অর্থনৈতিক মূল ভিত্তি হল এর রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প, যা মন্দার জন্য প্রস্তুত কারণ ওয়ালমার্টের মতো মূল বাইয়াররাও ব্যাকলগে জর্জরিত কারণ মুদ্রাস্ফীতি জনগণকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে৷
খাওয়া আগে, গার্মেন্টসের পরে, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস, প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশ বাংলাদেশ।
এর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ জুলাই পর্যন্ত ৩৯.৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে - যা মাত্র পাঁচ মাসের বেশি মূল্যের আমদানির জন্য যথেষ্ট - এক বছর আগের $৪৫.৫ বিলিয়ন থেকে।
এর জুলাই থেকে মে চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতি ছিল $১৭.২ বিলিয়ন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় $২.৭৮ বিলিয়ন কম, কারণ করোনা পরবর্তী অবস্থা আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে মন্দার ফলে আমাদের দেশের রপ্তানি কমেছে ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বহু রেমিট্যান্স যোদ্ধা কে করনার জন্য চাকরি হারাতে হয়েছিল, তাঁরা দেশে বেকার বসে ছিলেন। তাঁরা কয়েকমাস আগে করোনা কমার পরে আবার বিদেশে পাড়ি দিলেও তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স ফ্লো আগের মত হয়নি, সময় নেবে কিছুটা তা দেশে রেমিটেন্সও কমেছে।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের একটি সদস্য দেশ। এর আগে একাধিকবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশের সব সরকারের আমলেই ঋণ নিলেও তা কখনো ১০০ কোটি ডলারের সীমা পার হয়নি। কারণ তাঁদের সেই যোগ্যতাই ছিল না। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে দেশের ফরেন কারেন্সী রিজার্ভ ছিল ৪ বিলিয়ন ডলারেও নীচে। জিডিপি’র অবস্থাও ছিল করুন। তাঁরা কোন সরকারের আমলেই ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ এই এম এফ এর কাছে চাইতে পারেনি।
এবারই এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে এত বড় অংকের ঋণ চাইছে বাংলাদেশ। এর কারণ হচ্ছে, যদি দরকার হয় ৫/৬ মাস পরে, তাই। চেয়েছে মানেই যে বাংলাদেশ নেবে, তা কিন্তু নয়।
আজ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমা শুরু করেছে। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় আর রাশিয়ার সম্মতিতে, ইউক্রেন থেকে খাদ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে, রাশিয়াও হয়তো রপ্তানি করবে। সংকট কেটে যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই ঋণ নেওয়া লাগবে না। সরকার নেবে না, কারণ এই এম এফ এঁর ঋণের শর্ত আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য যুতসই না।
এতো ঘটনার পরে রয়টার্স এর ঢাকায় সংবাদদাতা রুমা পাল কেন এই ইংগিত দিয়ে আর্টিকেল লিখলেন? তা হলে কী মিঃ রয়টার ও তার উত্তরাধিকারগন মারা যাবার পরে তার রয়টার বিকিকিনির বাজারে নেমেছে? ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের খবর নিয়েও কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এসেছে। শেখ হাসিনার সরকার কী মিডিয়াকে বলেছে যে, বাংলাদেশের ঋণ লাগবেই লাগবে? তাহলে কেন দেশের মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে?
© সায়েদুল আরেফিন
উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: