• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ০৫ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  সোমবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ০৫ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

আইডল কে? সেই প্রশ্নে সেকাল আর একাল ।

Abdullah Harun Jewel
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৫০ পিএম
আইডল, সেকাল, একাল, মানবিকতা , শিক্ষা, জ্ঞান
ফাইল ছবি

এক সময় তরুণদের আইডল ছিলেন রবীন্দ্রনাথ,‌ নজরুল; এখন তরুণদের আইডল সালমান মোক্তাদির, ডিজে, আরজেরা। আপামর জনতার আইডল ছিলেন বঙ্গবন্ধু, সুভাষ বোস; এখনকার আইডল নুরু, আজহারী ও হিরো আলম। রুচির দুর্ভিক্ষ হওয়াই স্বাভাবিক। নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ যথার্থই বলেছেন। তবে আমাদের ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজের মানসিকতার এই পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী নুরু গং ও ওয়াজিরা। ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যাদের মাঝে নেই তারা সমাজের স্বঘোষিত প্রতিনিধি হলে অধঃপতনই স্বাভাবিক।

 


শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলাম কারণ আমার কাছে মনে হয়েছিল - স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এই চক্রের মূল লক্ষ্য জাতীয় রাজনীতি। শঙ্কার বিষয় ছিল এটাই যে তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আরও কলুষিত করে দিবে। কারণ‌ এই আন্দোলনের সংগঠকদের প্রায় সকলেই অশিক্ষিত ও নিকৃষ্ট পরিবারের সন্তান। তাদের ভাষা, বক্তব্য, আচরণ ও মানসিকতা তার প্রমাণ। এরশাদের আমলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ক্ষুদ্র পরিসরে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার যে রেওয়াজ শুরু করেছিল তা পূর্ণতা পেয়েছে গণধিক্কার পরিষদের মাধ্যমে।


৭ই মার্চের একটি ভাষণের ফলস্বরূপ আট মাসের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, একটি দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু সেই ভাষণের একটি শব্দও আপত্তিকর নয়। ইয়াহিয়া খান বা ভুট্টোকে নিয়ে বিতর্কিত কোনো বক্তব্য নেই। যাদের শত্রু বলা হয়েছে তাদের কেউও এ ভাষণের কারণে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ হয় নি। বঙ্গবন্ধুকে যারা আইডল হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের বক্তব্যে, এমন কি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বক্তব্যেও নুরুদের মতো আপত্তিকর ভাষা দেখা যায় না।


এর কারণ অনুসন্ধান করা যাক। নুরু-তারেকদের বাবা-মায়েরা কেউ রিকশাওয়ালা চালায়, কেউ গৃহকর্মী, কেউ রাজমিস্ত্রী এবং সর্বোচ্চ পেশা চা দোকানদার। সাধারণত বাবা-মায়ের কথায় সন্তানরা চলে। কিন্তু অশিক্ষিত পরিবারে হঠাৎ করে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে সে-ই হয়ে উঠেছে সর্বেসর্বা। তাই পিতৃতুল্য বা মাতৃতূল্য কারও প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌজন্য দেখানোর শিক্ষা তারা পায় নি। শিক্ষক বা বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে বেয়াদবি করা তাদের জন্য আরও স্বাভাবিক ব্যাপার।
দ্বিতীয় কারণ জবাবদিহি না থাকা। যদি বিবেক থাকে তাহলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করার চেয়ে নিজের কাছে জবাবদিহি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

 

নুরাদের হারানোর মতো মানসম্মান নেই, তাই কে, কি বললো বা কি মনে করলো তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। ভিক্ষা করে ও কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের টাকায় রাজনীতি শুরু করেছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ হোক বা ধর্ষণের অভিযোগ হোক, কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না। ক্রমাগত গুজব ও অপপ্রচার করলে কিংবা জ্ঞানের অভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রচার করলে যে দায় স্বীকার করতে হয়, লজ্জিত হতে হয়, সে শিক্ষা তারা কখনো পায় নি, সেই বোধও তাদের মাঝে জন্ম হয় নি।


আমাদের কিশোর ও তরুণরা নুরুদের দেখে বড় হচ্ছে যাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা মানে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং ভিন্নমতের ব্যক্তি মানে দালাল। তারা শিখছে - বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতি কটাক্ষ ও কটুক্তি করা মানে সাহসের পরিচয় দেয়া। তাদের কাছে ভালো ও মন্দের পার্থক্য করার মাপকাঠি শুধুই রাজনীতি। 

 


প্রশ্ন আসতে পারে অশিক্ষিত পরিবারের কেউ কি রাজনীতিতে আসে নি! এসেছে; কিন্তু তারা দলীয় শৃঙ্খলায় থেকে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছে যা নুরুদের ক্ষেত্রে ঘটে নি। 


নুরুদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তর মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানির পর্যায়ের। বাংলাদেশে বসবাস করে তারা দেশবিরোধী মানসিকতার একটি শ্রেণী তৈরি করেছে যারা দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নকে কটাক্ষ করে। তারা আকুলভাবে কামনা করে বিদেশী কোনো শক্তি যেন এ দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হবে এই 'স্যাডিস্টিক প্লেজার' তারা কামনা করে কায়মনোবাক্যে। একটি প্রজন্মকে ধ্বংসের দায়ভার নুরুদের উপরই বর্তাবে এবং ভবিষ্যতে তাদের অপরাজনীতি বুমেরাং হয়ে তাদের দিকেই ফিরে আসবে।

 

Abdullah Harun Jewel

 

 

Daily J.B 24 / সোশ্যাল মিডিয়া

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ