
সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করলে সারা দেশে দেখা যাবে আওয়ামিলীগ আগামী নির্বাচনের জন্য রমরমা ফলন নিয়ে চলাচল করছে। সকলের মধ্যেই রয়েছে বুক উঁচিয়ে, মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর প্রবনতা। চায়ের স্টল থেকে অফিস আদালত সবই যেন আওয়ামিলীগ এর জোয়ার।
বিষয়টা দেখতে মন্দ লাগেনা। ভাবতে ভালই লাগে যে, #শেখ_হাসিনা তার দূরদৃষ্টি, বাস্তবতা নিরিখে সিদ্ধান্ত গ্রহন, প্রখর কুটনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন মেধা নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাবলম্বীতা এনে দিয়েছে, চতুর্মাত্রিক উন্নয়নে পিছনে ফেলেছে দক্ষিনাঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ভাবে দাপিয়ে বেড়ানো শক্তিগুলিকে। সেই শেখ হাসিনার দল সারাদেশে তাদের জয়জয়কার পতাকা ওড়াবে না তবে কে ওড়াবে? এই বিষয়গুলো সত্যি ভাবতে ভালো লাগে, দেখতেও ভালো লাগে।
এতসব ভালোলাগা কি আসলেই মাঠের বাস্তবচিত্রের কথা বলে? আমার ধারণা বলে না। গ্রাফ যখন উর্ধ্বাকাশে থাকে ঠিক তখনই তাকে জমিনে নেমে আসার জন্য তৈরি হতে হয়। পিক ভ্যালুতে শক্তি কখনই স্থায়ী নয়। আর তাই তাকে শক্তি হারিয়ে নিচে আসতে হবে, গ্রাফের এটাই চরিত্র। তবে সেই বিজয়ী যে, শক্তি পিক ভ্যালু হতে নিচের দিকে নেমে আসতে আসতে আবার তাকে পিক ভ্যালুর দিকে ধাবমান করতে পারে।
অল্টারনেটিভ কারেন্ট একবার জ্বলে, একবার নিভে যায়, এরপরেও অন্ধকারে ইলেক্ট্রিক লাইটকে আলো ছড়াতে দেখি। তার কারন একটাই, ইলেকট্রিক পাওয়ার পিক হতে গ্রাউন্ডে চলে আসার সাথে সাথেই আবার পিক ভ্যালুতে চলে যায়। এরফলে ইলেক্ট্রিক লাইট নিভে যাবার সাথে সাথেই আবার জ্বলে ওঠে। এখানে ইলেক্ট্রিসিটি অত্যান্ত সফল অর্থাৎ ইলেক্ট্রনের প্রবাহ অত্যান্ত সফল। যার ফলে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বলতে দেখি। অথচ এই জ্বলে থাকার মধ্যেই ইলেক্ট্রিসিটি কতবার, কত হাজার কোটিবার পিক ভ্যালুতে গিয়েছে, আবার মাইনাস পিক ভ্যালুতেও এসেছে তার খবর আমরা কেউ রাখিনি। আমরা শুধু চেয়েছি লাইট জ্বলুক, অন্ধকার দূর হোক।
শেখ হাসিনা জানে তাকে কতটা শ্রম, কতটা মেধা দিয়ে দেশকে চালাতে হচ্ছে, ১৮ কোটি মানুষের ১৮ কোটি চাহিদার যোগান দিতে, একিসাথে আআন্তর্জাতিক পাওয়ারের সমন্বয় করতে তাকে কি কি করতে হয়, সেটা সেই জানে।
আমরা শুধু চায়ের দোকান, অফিস আদালতে বসে নিজেদের ব্যাক্তি চাহিদাকে সবার উপর রেখে কথা বলে যাই। তাহলে প্রশ্নহলো - সারাদেশে আওয়ামিলীগের যে বুক উঁচিয়ে চলাচল সেটা কি একচেটিয়া বিজয়?
এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য, অনেক স্থান ঘুরেছি, অনেক এলাকার খবর নিয়েছি, অনেকের সাথে কথা বলেছি। যে উত্তর এলো সেই উত্তর মোটেও সুখের কোন বার্তা দেয় না। আপনারা হয়তো পদ্মাসেতু উদ্ভোদন কালে ১০ লক্ষ লোকের সমাগম চাইছেন, আপনারা হয়তো ১০ লক্ষ নয় তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের আওয়ামী স্লোগান সেখানে শুনতে পাবেন, দেখতেও পাবেন। অথচ ঠিক ঐ স্থানে ভোট কেন্দ্র তৈরি করে কয়েকটি ইভিএম মেশিন নিয়ে ভোট গ্রহন করুন। তখনই প্রমাণ পেয়ে যাবেন। তখন দেখতে পাবেন, একটু আগে যে পদ্মার পাড়ে আওয়ামিলীগ স্লোগানে মুখরিত ছিলো, ঠিক ঐ স্থানেই মুহুর্তে স্লোগান পরিবর্তন হয়ে শুনতে পাবেন ভাই লীগের স্লোগান। একি স্থানে আওয়ামিলীগে কত ভাই আছে তার প্রমান পেয়ে যাবেন। প্রমান পাবেন কিভাবে তখন এই ভাই লীগ নিজেদের মধ্যে রক্তের খেলায় মেতে ওঠে। ভাইয়ে ভাইয়ে প্রতিযোগিতায় বলি হয় কত মায়ের সন্তান। আপনি তখন আওয়ামিলীগ পাবেন না, পাবেন ভাইলীগ।
একটু আগে যে গ্রাফের কথা লিখলাম, যে কারনে পাওয়ার পিক ভ্যালুতে গিয়ে নিজের শক্তি বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না, ফলে নেমে আসে জমিনে - ঠিক একই কারনে আওয়ামীলীগের জয়জয়কার ভাইলীগে রূপ নিয়ে ভূমিতে নেমে আসতে বাধ্য। পদ্মার পাড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উল্লাস থাকা সত্ত্বেও আওয়ামিলীগ সেখানে হয়ে যাবে অসহায়।
কেন এমন হয়? কেন এমন হবে?
একমাত্র কারণ শেখ হাসিনা যেমন মুক্তবাজার অর্থনীতি নিজের মেধায় করায়ত্ব করে নিজের দেশকে করেছে স্বাবলম্বী, ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলের ভাইলীগ সেই অর্থের ভাগ চেয়েছে ব্যাক্তি উন্নয়নে। এখানেই ঘটেগেছে বিপত্তি। এখানে ব্যাক্তি উন্নয়ন বলতে অর্থ ও পাওয়ার বিবেচনায় রেখে কথা বলছি আমি।
স্বাবলম্বিতা যখন সেন্ট্রাল নিয়ন্ত্রণ হারায় তখনই সেখানে ব্যাক্তি উন্নয়নে পেশিশক্তি, ছলনা, এবং বেঈমানী প্রখররূপ ধারণ করে। বাংলদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টা আরো জটিল। বাংলাদেশে সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বাস, নির্ভরতা, ভালোবাসা কখনই চিরস্থায়ী ভাবে একস্থানে আটকে থাকেনা। চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর করে এই বিষয়গুলো মুভ করে। ধরে নিতে পারেন, বাজারের মাছের মতো। পেট চেপে, শরীর চেপে পছন্দ যেমন পরিবর্তন হয়, একই সাথে মাছ বিক্রেতাও পরিবর্তন হয়। অবশেষে মাছ ঘরে যায়। আজ যে মাছ বিক্রেতাকে পছন্দ হয়েছে, কালকে সেই হয়তো পচা মাছ দেবার দোষি দোষি হবে একি ব্যাক্তির নিকট হতে।
এলাকার ভাইয়েরাও তাই। ব্যাক্তি এলাকার ভাই পরিবর্তন করলেও নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে না। কিন্তু ভাইদেরতো ছোট ভাই লাগবেই, ছোট ভাইয়ের রক্ত ছাড়া, পেশিশক্তি ছাড়া তারাতো অচল। আর তখনই এলাকার ভাইয়েরা নিজ দলে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন নতুন পেশিশক্তি, নতুন নতুন রক্ত। এই ক্ষেত্রে এই সিলেকশনে কে কোন দল করে বিবেচ্য নয়, কে কার বাড়িতে কামলা দেয় সেটা বিবেচ্য হয়না। স্বাবলম্বিতা করায়ত্ব করতে এলাকার ভাই যাকে পছন্দ হয় তাকেই তার দলে দলভুক্ত করে নতুন মুখ। নতুন মুখ সেই সুযোগ গ্রহন করে নতুন কাপড় গায়ে জড়ায় ঠিক, কিন্তু তার নগ্নতা, তার বেড়ে ওঠা, তার সামাজিকতা, তার বিশ্বাস থেকে যায় পূর্বের স্থানে। সাইকোলজিক্যাল এই বিষয় এলাকার ভাইয়েরা কখনই বিচার করেনা। বরং কেন্দ্রে পাঠায় বড় ধরনের প্রসংসা পত্র।
এমন একটি সামাজিক চিত্র কেন গ্রহন করবে না আওয়ামিলীগের বিরোধী শক্তি? কেন ব্যাবহার করবে না আগ্রাসী বিদেশি শক্তি?
অনেক আগে বলেছিলাম, #তারেক_রহমান প্রান্তিক অঞ্চল দখলে নিতে চাইছে ঠিক তালেবান স্টাইলে। আমার ধারনা #তারেক_রহমান_সফল। বিএনপির এবং সমমনা দলের উদীয়মান সমাজকে পেরেছে ভাইলীগে প্রবেশ করাতে। পেরেছে যে, তার প্রমাণ সারাদেশে ভাইলীগের একচেটিয়া আধিপত্য। সেখানে আওয়ামিলীগ আছে কি না জানিনা, যদিও #পদ্মাসেতু উদ্ভোদনে ১০ লক্ষ নয় আরো অনেক বেশি আওয়ামিলীগের স্লোগান সেদিন দেবে। বাস্তবতা পরীক্ষা করতে শুধু একবার উক্ত পদ্মার পাড়ে নির্বাচন দিয়েই দেখেন সেখানে কে জয়ী হয়, ভাইলীগ নাকি আওয়ামীলীগ?
প্রশ্নহলো - সেই ভাইয়েরাতো শেখ হাসিনার পাশেই বসে আছে। তাহলে কি শেখ হাসিনা সেটা বুঝতে পারছেন না? অবশ্যই পেরেছেন। আর তাই তিনি বেশ আগেই বলে রেখেছেন, এবার নির্বাচনে নিজের যোগ্যতায় জয় পেতে হবে। আমরা বাঙালি, আমি আবারও বলছি আমরা বাঙালি, শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পজেটিভ দিক কোন ভাই নেবেনা। সকল ভাই আরো এলাকায় নতুন মুখের সন্নিবেশ ঘটিয়ে নিজের প্রভাবকে ধরে রাখতে সচেষ্ট হবে। ফলে সেখানে ভাইলীগ হিসাবে প্রবেশ করবে, আওয়ামিলীগ নয় এমন ব্যাক্তি বর্গ। কারণ তৃনমুলের সেই ত্যাগি আওয়ামিলীগ এখন আর শক্তি পায়না। ভাইলীগের নিকট মার খেতে খেতে হতাশায় চলে গেছে পরপারে, যারা আছে তারা পিছনের দরজায় বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। আর নক্সাতো আজ থেকে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, অনেক আগে থেকেই ভাইয়েরা কেন্দ্রে বসে এই স্ক্রিপ্ট লিখছে। সেই স্ক্রিপ্টে কোথাও শেখ হাসিনার নাম লেখা নেই।
এলাকা ভিত্তিক ঘুরে ঘুরে এতটুকুই বুঝতে পেরেছি, শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আবার আসবে। সেই আগমন ঠেকাতে বিএনপি সহ সমমনা সকল দলের একমাত্র পথ ভাইলীগের উত্থান জোরদার করা। কারন ভাইলীগে আওয়ামিলীগ নেই। আছে অতিলোভী চরিত্র। যারা মাছের মতো মাছ বিক্রেতার মতো অতি সহজে পরিবর্তিত হয়। অর্থ আর ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয় প্রতি মুহুর্তে।
যেহেতু শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবে, সেহেতু বর্তমানকে নিজের করে রাখতে শুধু পদ্মার পাড়ে নয়, সারাদেশে আওয়ামীলীগ স্লোগান শোনা গেলেও, মাঠের বাস্তবতা বলছে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ভাইলীগের তৎপরতার কথা। জানিনা, শেষ মুহুর্তে #আধুনিক_বাংলাদেশের_রূপকার #শেখ_হাসিনা কোন ভাবে নিজেকে সামনে এনে দাঁড় করাবেন।
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: