
মহামারী করোনা এবং বিশ্ব অস্থিরতার জন্য বাংলাদেশ রিজার্ভ কিছুটা চাপে পড়ে যায় । তবে সেই চাপ বিপদজনক অবস্থায় কখনই ছিলনা বলাচলে নিরাপদ অবস্থায় ছিলো বলেই জানা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের চাপ কমাতে এবং সংখ্যা বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করে । যার মধ্যাযে আমদানি নিয়ন্ত্রন ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা অন্যাতম । ফলে ঘুরে দাড়াচ্ছে বাংলাদেশের রিজার্ভ তেমনটাই জানাগেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাতে।
রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত, আন্তর্জাতিদক মুদ্রা তহবিল থেকে দ্রুত ঋণের অর্থ ছাড় এবং সর্বোপরি গৃহীত উদ্যোগে আস্থা ফেরায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অগ্রসর হতে শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশের রিজার্ভ রয়েছে ৩২ দশমিক ২২৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও পূর্বের মাসগুলোতে রিজার্ভ বর্তমান থেকে বেশি ছিল । করোনাকাল, বিশ্ব অস্থিরতার মধ্যে আমদানি ব্যয় মেটানোর ফলে ক্রমান্বয়ে রিজার্ভ কিছুটা কমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বরাতে জানা যায় কমার পথগুলো বন্ধ করা হয়েছে, রিজার্ভ এখন সঠিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে ।
বিনিময় হার নমনীয় ও একদরের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ, সুদ হার বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ ও প্রবাসী আয় পাঠানো সহজ করায় রেমিট্যান্স আসা আগামীতে ক্রমান্বয়ে বাড়বে। আর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রিজার্ভে এমনটাই জানাগেছে ।
প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ৭ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ দশমিক ৫০৪ বিলিয়র ডলার। আর চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭দিনে প্রবাসীরা দেশ পাঠিয়েছেন ১ দশমিক শূন্য ৫১ বিলিয়ন ডলার।
সেপ্টেম্বর মাসে কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও ডিসেম্বর মাস থেকে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ফেব্রুয়ারি মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
আগস্ট পর্যন্ত রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ছিল ।সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় নিম্নমুখী হয় মূলত ডলার বাজার অস্থির হওয়ার কারণে। এ সময়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর বাড়তি চাপ অব্যাহত ছিল। ফলে কিছুটা রিজার্ভে ঝুঁকি তৈরি হতে থাকে। হুন্ডি মার্কেটের দৌরাত্মাও চরমে ওঠার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে হুন্ডি ও অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা; রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা; রেমিট্যান্স পাঠাতে ফি প্রত্যাহারও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এর সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে। বাড়ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে অপ্রয়োজনীয়, বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। কোনো কোনো পণ্যে একশ ভাগ পর্যন্ত মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়। আমদানি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ৫০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি মূল্য দেখানোর বিষয় সামনে আসে। আমদানির নামে এসব প্রতিষ্ঠান ওভার-ইনভয়েজের মাধ্যমে টাকা পাচার করছিল। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় কমেছে।
রিজার্ভে ঝুঁকি কমছে। এর মূলে রয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় আস্থা ফেরানো। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্ন রকম উদ্যোগনেওয়া ও চাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবিলের (আইএমএফ) অনুমোদন ও ঋণ দ্রুত ছাড়ের ফলে বহুজাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দেশের অর্থনীতির অভ্যান্তরীণ শক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। দেশের ভেতরেও আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।
এসব উদ্যোগের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন (রিজার্ভ) আরও বাড়বে। কেটে যাবে অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, গৃহীত উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। সামনে রোজা ও ঈদ। সে সময় প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাবেন। এতে আগামী কয়েক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। ফলে রিজার্ভ আরও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ফিরবে।
জেবি/সি/এ
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: