
সকলেই এইদিনটিকে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ দিবস হিসাবে বিবেচনা করে । কিন্তু আমি সেটা মনে করিনা । কারণ শেখ হাসিনার মাইনাস ফর্মূলা সেদিন এতটাই কুৎসিত ছিলো যে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যে গ্রেনেড এসে আঁচড়ে পড়েছিলো তারচেয়ে ভয়ংকর ভাবে আজকের আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনাকে জাপটে ধরেছিলো ।
একটা মানুষ মারা গেলে তার আর কি হারাবার থাকে ? ২০০৪ এর ২১শে আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামীলীগের বাতি নিভিয়ে দেয়াই ছিলো উদ্দেশ্য । ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যা (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যাতিত) - ২১শে আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এই দুইটি বিষয়কে যদি বিবেচনায় আমরা নেই সেখানে আমরা দেখতে পাবো উভয় ক্ষত্রে খুনি জিয়া ও তার পরিবার সম্পৃক্ত । এবং সেই সাথে সেনাবাহিনীর পাকিস্তান ও আমেরিকার আজ্ঞাবহ একটি দল জড়িত । অর্থাৎ পাকিস্তান ও আমেরিকা থেমে নেই । তারা ৭১ এর পূর্ব থেকে এখন অবধি তাদের কার্য সিদ্ধি করার জন্য মরিয়া ।
আমরা ৭১ থেকে খুনি জিয়াকে চিনি , ৭৫ এ এসে তার মোটিভ উম্মোচিত হলো । ২১শে আগষ্টে এসে জিয়া পরিবারের মোটিভ উম্মোচিত হলো । তাহলে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট সেনাবাহিনীর কোন অংশকে এমন ঘৃণিত ও জঘন্য কাজে আমরা দেখতে পেলাম ?
আমরা যদি এই সময়ে খুনি জিয়ার মাধ্যমে ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে যারা জড়িত ছিলো তাদের পুনর্বাসনের দিকে তাকাই তাহলে সেখানে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দলকে দেখতে পাই যারা খুনি জিয়ার ছিলো অত্যান্ত আজ্ঞাবহ এবং পাকিস্তানের পক্ষের একটি অক্ষশক্তি । আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখবেন খুনি জিয়ার শাসনামলে পাকিস্তানপন্থী সেনাবাহিনীর সাথে বাংলাদেশ পন্থী সেনাবাহিনীর একটি বিরোধ ছিলো চরমে । এবং খুনি জিয়া বরাবরই পাকিস্তানপন্থী সেনাবাহিনিকে সর্বরকম সমর্থন করায় জেনারেল মঞ্জু সহ বাংলাদেশ পন্থী সেনাবিহীনি ছিলো ক্ষিপ্ত । যার ধারাবাহিকতায় খুনি জিয়া নিজেই খুন হয়ে গেলো ।
১৬ই জুলাই ২০০৭ এ এসে আমরা সেই চিত্রই আবার দেখতে পেলাম । এবার শুধু প্রাণ নিয়ে ক্ষান্ত হতে চায়নি একটি মহল । তারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস ফর্মূলার আয়েত্বে নিয়ে হয় প্রাণ না হয় দেশ থেকে বিতাড়িত করার মানষে কাজ চালিয়ে যেতে থাকে । যার ধারাবাহিকতায় দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ১৬ই জুলাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে ।
বলা বাহুল্য ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু যেমন লাল টেলিফোনে কল করেও অনেকের সহযোগিতা পায়নি, ১৬ই জুলাই ২০০৭ এ এসে শেখ হাসিনাও অনেক নেতাদের পাশে পায়নি । চুপ করে কখন দেশ ছেড়েছিলো হয়তো সে বা তারা নিজেরাও জানে না ।
১/১১ ঘটনা মাইনাস-টু ফর্মূলা ছিল না, ছিল মাইনাস শেখ হাসিনা ফর্মূলা। কারণ ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার জোট সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছর যেভাবে দুর্নীতি, অপশাসন ও মানবাধিকারের চরম লংঘন করেছিল তাতে দেশে বিদেশে খালেদা জিয়া চূড়ান্ত অর্থে তার রাজনৈতিক সত্ত্বা হারিয়ে দেউলিয়া হয়েগিয়েছিলেন। বাংলাদশের রাজনীতিতে তার আর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা ছিল না। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অপমৃত্যু ঘটে (political and notional death) ।
এর ফলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পরবর্তী নির্বাচনে নিরংকুশ জয়লাভ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন এটা পরিষ্কার হয়ে যায় । ঠিক তখনই ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিসমূহ নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। তারা ১৫ অগাস্ট, ৩রা নভেম্বর, ২১ অগাস্টের ষড়যন্ত্রগুলোর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা শেখ হাসিনাকে এদেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের সকল আয়োজন করে। সেই ষড়যন্ত্রের প্রকৃত মোটিভ আড়াল করার জন্যই এটিকে তারা নাম দিয়েছিল মাইনাস-টু থিওরি, যেটি প্রকৃত অর্থে ছিল মাইনাস শেখ হাসিনা থিওরি।
‘কিছু বর্ণচোরা রাজনীতিবিদ এবং উচ্চাভিলাষী সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও খুনি জিয়া কর্তৃক পুনর্বাসিত সেনা সদস্য, সেই সময়ে সেনাবাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তান সমর্থিত সেনা কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রে সাংঘাতিক অপমানজনকভাবে আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার ঘর তন্ন তন্ন করে সেদিন তল্লাশি চালানো হয়েছিলো। তার অসুস্থ স্বামী ড. ওয়াজেদকে পর্যন্ত তারা অপমান করেছিল। নেত্রীকে টানাহেঁচড়া করে আদালতে নিয়ে হাজির করেছিল।
অপমান থেকে মৃত্যু শ্রেয় । কিন্তু শেখ হাসিনাকে একদিকে যেমন একের পর এক হামলা করা হয়েছে মৃত্যু নিশ্চিত করতে , অন্যদিকে তাকে মৃত্যু থেকে ভয়ংকর ভাবে অপমান করে অন্ধকার কারাগারে যেতে হয়েছে । সেই ১/১১ এর কুশিলবগণ আজও সক্রিয় । তারা আবারও চাইছে যে কোন ভাবে হোক শেখ হাসিনাকে চরমপত্র প্রদান করতেই হবে ।
যে দলটি ৭১ এ স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা চায়নি, আজও চায় না , সেই দলটি ২১শে আগষ্টে ছিলো, সেই একই দল ১/১১ এ ছিলো , তারা আজও আছে । তবে সময়টা পাল্টেছে । সময় তাদের আর সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না। প্রকৃতির নিয়মই এমন - সুযোগ বারবার দেয় না ।
ভালো থাকুক আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা । বাংলাদেশ এগিয়ে যাক আপন শক্তিতে ।
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: