
ইডেন কলেজ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আর এর প্রমাণ নাপরিষদ নামে ছাত্রী সংস্থা ও গার্মেন্টসের মেয়েদের আজকের সমাবেশের ঘোষণা ও প্রস্তাবিত আপত্তিকর দাবি। আমি খুব অবাক হচ্ছি, এত অশালীন ও মানহানিকর অভিযোগ তোলার পরও ছাত্রীরা কিভাবে সহ্য করছে!
বলে রাখা ভালো, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাফাই দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটিকে প্রাইভেট হোস্টেল বানিয়েছে। রুমে ওঠার জন্য এককালীন টাকা দেয়া থেকে শুরু করে প্রতি মাসে আবাসিক ছাত্রীদের নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হয় ভাড়া হিসেবে। লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য এটি। রাজনৈতিক সকল মেরুকরণ ও দ্বন্দ্ব টাকার ভাগাভাগি নিয়ে। কিন্তু আর্থিক বা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য দেহ ব্যবসার অভিযোগ তুলে যেভাবে সকল ছাত্রীদের চরিত্রে কলঙ্ক দেয়া হয়েছে, তা খুবই আপত্তিকর ও হীন মানসিকতার প্রতিফলন।
তিন বছর আগে ছাত্রী সংস্থার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছিল, ঠিক সেই অভিযোগগুলো কিভাবে ইডেনের নামে চাপিয়ে দেয়া হয়! কিছু পত্রিকা শাকেরা আরজু নামের এক ছাত্রীকে কোট করেছে। দুজন শাকেরা আরজুর কথা জানা যায়। একজন ফেক আইডি। আরেকজন শাকেরা আরজু ছাত্রী সংস্থার নেত্রী, যার সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল।
সম্প্রতি ইডেন নিয়ে কি প্রচার হয়েছে তার উদাহরণ দিচ্ছি:
বটতলার কথিত সাংবাদিকরা নিউজ করেছে - ইডেন কলেজের সাবেক ছাত্রী শাকেরা আরজু ফেসবুকে লিখেছেন:
১. শুধু ইডেন নয়; মেয়েরা এখন কোনো ভার্সিটিতেই নিরাপদ নয়। সুন্দরী হলে তো বর্গা ফ্রী। হল তো হল নয়; যেন পতিতালয়।
২. ইডেনের ছাত্রীদের ডিএনএ টেস্ট করলে অনেক মেয়ের ব্লাডে জীবাণু পাওয়া যাবে। হল গুলোতে সতিত্ব ঠিক রেখে থাকা ইম্পসিবল। ইডেন নয় ; বান্ধবীরা যারা অন্যান্য কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ে খবর নিয়েছি, ফিজিক্যালি যন্ত্রণা আছেই। ভোগের রাজ্যে সবাই পাহারাদার।
৩. এভারেজ ছেলেরা দায়ী নয়; কিছু মেয়ে আছে দুশ্চরিত্রের। ওরা যতো পুরুষাঙ্গ দেখেছে, জীবনে এতো কাঁচা মরিচও দেখে নাই।
৪. অনেক মেয়ে নিজ থেকেই ছেলে পটায়, নাইট কাটে নিজ খরচে। আজীমপুর ও বকশীবাজারে ম্যাচ নেয় কয়েকজন মিলে। এই তো ম্যাচ নয়; সেক্স পাওয়ার কম্পিটিশন হাউস। এই ম্যাচেই কুমারিত্ব শেষ।
উল্লিখিত অভিযোগগুলো কি সুনির্দিষ্টভাবে ইডেনের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে?
বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হল বা হোস্টেল সম্পর্কে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তুলে ছাত্রীদের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ছাত্রলীগের চেয়ে সাধারণ ছাত্রীদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ তোলা হয়েছে।
হলে সতীত্ব রক্ষা যদি ইম্পসিবল হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক দেইল্লার আইটেম গার্ল নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছে কিভাবে! এ সম্পর্কে তার ভাষ্য:
"প্রতিদিন দুরাকাত সালাত আদায় করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম যেন, শকুনদের চোখে না পড়ি। আল্লাহ তায়ালা দুয়া কবুল করেছেন। আমাদের ম্যাচ মেম্বাররা সবাই ছিলাম নামাজি।"
ছাত্রী সংস্থার আইটেম গার্লরা দুই রাকাত নামাজ আদায় করে মুতা বিবাহ করার জন্য সম্ভ্রম রক্ষা করেছে, আর অন্যান্য ছাত্রীরা সম্ভ্রম বিকিয়ে দিয়েছে?
কিছু ছাত্রীর বক্তব্য আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি। বৈশাখীর কথা যদি টুইস্টেড না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে সে ছাত্রী সংস্থার অনুপ্রবেশকারী। ছাত্রীদের দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ যারা তুলেছে তাদের সবাই ছাত্রী সংস্থা এবং/অথবা বিকাশ অধিকার পরিষদের গণচাঁদা শাখার নেত্রী। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত হলে হয়তো মুতার বিবাহের নামে দেহব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
গণধিক্কার পরিষদের মামুনের ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া গেল না কেন? একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্রীর চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করা মানে কি? এমন ঘটনা ঘটলে কি কেউ প্রতিবাদ করতো না? ছাত্রীরা কি এখন এতটাই অবলা নাকি তারা ছাত্রী সংস্থার যৌ-জেহাদী?
অভিযোগ শুধু ইডেন নিয়ে তোলা হয় নি, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে। এ জাতীয় একটি ঘটনা ফাঁস হলে সামাল দেয়া যেত?
এত জঘন্য অভিযোগ তোলার পর ছাত্রীরা কিভাবে এদেরকে টলারেট করছে জানি না! ধর্মের নামে চরিত্র হরণ করা যায়, প্রেম-ভালোবাসার অভিনয় করে নারীকে ফাঁদে ফেলা যায়, কিন্তু কোনো ছাত্রীকে জোর করে দেহ ব্যবসা করাবে, তা অসম্ভব। এমন অভিযোগ ছাত্রীরাই কি মেনে নিবে?
অশালীন ও মানহানিকর অভিযোগ উত্থাপনকারী জঙ্গি নারীদের লক্ষ্য সাময়িক নয়। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে তারা অগ্রসর হচ্ছে। কারণ এর ফলে নারীদের উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না।
কলামিস্ট ও লেখক আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: