ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে নেত্র নিউজের কথিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখলাম। অসংলগ্ন কিছু তথ্যের ভিত্তিতে তারা যা বিশ্বাস করে তা-ই উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। আমার সীমিত পর্যবেক্ষণে ভিডিওর অনেক কিছু বানোয়াট মনে হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা হয়তো আরও ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারতেন বা পারবেন। নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের কোথাও ইলিয়াস আলীর গাড়ী যে আরেকটি গাড়ীকে ধাক্কা দিয়েছিল ও এ নিয়ে তর্ক হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয় নি। ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হওয়ার পর বহুবার আবেদন জানানোর পর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাকে সাক্ষাত দেন যা সংবাদপত্রেই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত নিয়েও ভুল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।
এ প্রতিবেদনটি পোষণ করা ধারণা থেকে সাজানো হয়েছে - এমন মনে করার কারণগুলো উল্লেখ করছি।
১. বলা হয়েছে র্যাব ও ডিবির মোবাইল/ফোন মনিটর করার ক্ষমতা আছে এবং এনএমসি পৃথক একটি সংস্থা। র্যাবের এ ক্ষমতা থাকলে আরেক সংস্থার সহায়তা কেন নিবে?
২. র্যাবের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে। র্যাব ইন্টেলিজেন্সের কোনো অপারেশনের তদন্ত করবে র্যাব-১ - এটা বাস্তবসম্মত বলে আমার মনে হয় না।
৩. যেকোনো নিরাপত্তা সংস্থা যোগাযোগের জন্য নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার কথা, যেখানে প্রিন্ট অপশন ছাড়া ইন্টারনেট, পেনড্রাইভ বা তথ্য বিনিময় করার মতো কোনো মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। ভিডিওর একটি অংশে বলা হয়েছে - "ক্যাপ্টেন তৌহিদের সিভিতে এক্সেস আছে এমন একজন জানিয়েছেন" - অর্থাৎ প্রতিবেদনেও তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ইঙ্গিত রয়েছে। তাহলে এমন কোনো ডকুমেন্টের সফট ভার্সন পাওয়া কি সম্ভব?
৪. সংবাদপত্র স্টাইলে 'ইলিয়াস গুমের রহস্য' - শিরোনামের ওয়ার্ড ডকুমেন্ট দেখানো হয়েছে যা ইউনিকোড ফন্ট ব্যবহার করে তৈরি করা। গোপন তথ্য সংরক্ষণে সাধারণত কাস্টমাইজড ফন্ট ব্যবহার হয় যা অন্য ডিভাইসে পড়া যায় না। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই টেক্সট কপি করে কোনো মাধ্যমে আনা হয়েছে, তাহলেও তা অন্তত ইউনিকোডে পড়া সম্ভব নয়।
৫. দুজন তৎকালীন ক্যাপ্টেনের অফিস এক্সেস লগ দেখানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তাদের সার্ভিস নম্বর ভুল ছিল। এর সাফাই দিয়ে বলা হয়েছে - এক্সেস কার্ড কাজ না করলে ম্যানুয়ালি প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এখন অনেক অফিসেই এমন ব্যবস্থা আছে। তারাই বলুন, ম্যানুয়ালি এক্সেস দেয়ার কি সুযোগ আছে? এটি সম্ভব অন্য কার্ড ব্যবহার করলে। আর সেটি করলে অন্য কারও নাম তালিকায় থাকবে। তা কি আছে? আর থাকলেও কি অভিযোগ করা যাবে?
৬. উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এক্সেস লগটি ফটো এডিটরে এডিট করে নাম বসানো হয়েছে। প্রমাণ কি? একজন ক্যাপ্টেনের কি কোনোভাবে টেকনিশিয়ান হওয়া সম্ভব? অভিযুক্ত দুজনের নামে ক্যাপ্টেন পদবী থাকলেও পরবর্তী কলামে "টেকনিশিয়ান" লেখাটি এডিট করতে ভুলে গেছে তারা। অর্থাৎ অন্য কারো নামে নাম বসানো হয়েছে।
৭. দুজন কর্মকর্তার এনএমসিতে থাকা মানে কি ইলিয়াস গুমের সঙ্গে জড়িত থাকা? গোয়েন্দা সাংবাদিকদের সমস্যা হচ্ছে দেশের ক্যাপাবিলিটি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। মোবাইল মনিটর করার জন্য পরিবহনযোগ্য ডিভাইস ব্যবহার হচ্ছে বহু আগে থেকে। এজন্য এনএমসির মঞ্জুরুল বা তৌহিদকে কেন লাগবে?
৮. গুমের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে কয়েকটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে যা সিটিসেল কোম্পানির এবং এই সিম/রিম/হ্যাডসেট কেনা তুলনামূলকভাবে কঠিন ছিল। এ কোম্পানির মালিক ছিলেন বিএনপি নেতা মোর্শেদ খান।
৯. ইলিয়াসের ফোন নম্বর গুমের দিন ট্র্যাকিং থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি অসম্ভব কারণ যেকেউ তথ্য দেখার সুযোগ পেলেও ডিলিট করতে পারে শুধু সিস্টেম এডমিন। অর্থাৎ নম্বর ডিলিট করতে হলে অফিসিয়াল প্রসিডিওর ফলো করতে হবে। র্যাবের জিয়া হাসান তখন লে: কর্নেল ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইন্টেলিজেন্সের পদে থেকে তা করা সম্ভব নয়। যুক্তি দেয়া হতে পারে যে, শীর্ষ পর্যায়ের অনুমোদন ছিল। এটি যদি সত্যি হয় তাহলে র্যাব-১, র্যাব ইন্টেলিজেন্সের তদন্ত করেছিল তা মিথ্যা হিসেবে গণ্য করতে হবে, কারণ শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি থাকলে র্যাব-১ এই তদন্ত করতে পারে না।
যে দৃশ্যে উল্লিখিত নম্বরগুলো দেখানো হয়েছে তার স্ক্রিনশট নিয়ে একটি নম্বর বের করেছি 01192088324। ট্রু কলারে এই নম্বর ব্যবহারকারীর নাম দেখায় এম নাছের রহমান। সাইফুর রহমানের ছেলের নাম কি নাছের রহমান? সাইফুর রহমানের সঙ্গে এবং তার মৃত্যুর পর নাছের রহমানের সঙ্গে কি ইলিয়াস আলীর কোনো বিরোধ ছিল? অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে অনুমানের উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য বিষয়ে ধারণা দেয়া হতে পারে। কিন্তু নেত্র নিউজ আগেই ফলাফল নির্ধারণ করে গল্প রচনা করেছে যাকে হলুদ সাংবাদিকতা বলে। মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশনের কি কোনো শাস্তি নেই?
আপনার মতামত লিখুন: