
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা অতিথি হিসেবে ছিলেন বেলজিয়ামের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। কিন্তু ১৫ আগস্ট সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে বদলে যান সানাউল হক।
. বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহেনা এক হৃদয়স্পর্শী সাক্ষাৎকার বলেন, ‘চেনা মানুষগুলো রাতারাতি বদলে গেলো। মানুষ যে এত দ্রুত বদলাতে পারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তা প্রথম বুঝতে পারলাম।’
স্মৃতিচারণে শেখ রেহানা বলেন, ‘আমার বয়সী সানাউল হকের মেয়েদের সাথে ওই রাতে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি। আমাদের উচ্ছলতা ও হাসাহাসির শব্দে দুলাভাই এক পর্যায়ে এসে ধমক দিলেন আমাকে। বললেন, ‘এত হাসাহাসি ভালো নয়, এতে সারা জীবন কাঁদতে হতে পারে।’ শেখ রেহানা বলেন, ‘দুলাভাই যত বলেন, আমরা তত আরও বেশি হাসাহাসি করি।’ তাঁর চোখ ছল ছল করা মন্তব্য, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই যে আমার এই হাসি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে, তা তখন কল্পনাই করতে পারিনি।’
বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ রেহেনা বলেন, আগের দিন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক সাহেবের বাসায় এসে উঠেছি। আমরা প্রেসিডেন্টের মেয়ে, খাতির যত্নের কি বাহার। পরদিন পৃথিবীতে আমাদের কেউ নেই। নিস্ব অসহায় আমরা দুটো বোন তখন সানাউল হক সাহেবের কাছে বোঝা হিসেবে পরিণত হলাম। আমাদের সরিয়ে দিতে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন।’
শেখ রেহানা বলেন সানাউল হক তাদের সরিয়ে দিতে অস্থির হয়ে উঠলেও তাঁর মেয়েরা ছিলেন খুবই আন্তরিক। তাঁরা তাদের শান্তনা দিচ্ছিলেন, অভয় দিচ্ছিলেন।
‘পরে শোনেছি সানাউল হক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকেও টেলিফোন করে বলেছেন “এইসব ঝামেলা আপনি আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন, তারাতারি এই ঝামেলা সরান।”
এসময় জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী টেলিফোনে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করলেও সানাউল হক তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি শেষ মুহূর্তে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জার্মানির সীমান্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনার পরিবারকে নিরাপদে দূতাবাসের গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করলেও সানাউল হক তাতেও রাজি হননি।
শেখ রেহানা বলেন, ব্রাসেলস ও জার্মানীর বোর্ডারে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আমাদের জন্যে গাড়ী পাঠালেন। আমরা সোজা গিয়ে তাঁর বাসায় উঠি। ‘ঐসময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর ভূমিকা আমরা দুবোন কোনদিন ভুলতে পারবো না। তিনি তখন আমাদের জন্যে ফেরেশতার মত আর্ভিভূত হয়েছিলেন। জনাব চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী দুজনই আমাদের শান্তনা দিচ্ছিলেন, দিচ্ছিলেন সাহস ও অভয়। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রীর চলাফেরা একটু অন্যরকম হলেও আমাদের মায়ের মত নিজের আচলের নিচে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমরা মধ্যভিত্ত ঘরের সন্তান। ফরেন সার্ভিসের লোক হিসেবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্ত্রীর হাই প্রোফাইল চলাফেরা ও তাঁর আঁচলের আশ্রয় থেকে আমাদের বঞ্চিত করেনি’। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে। ‘কয়েকজন বাংলাদেশী ও পাকিস্তানী ছেলে বন এ হাইকমিশন ভবণ ঘেরাও করে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর জন্যে জনাব চৌধুরীকে চাপ দেয়। আমাদের বেড় করে দিতেও বলে তাঁকে। হুমায়ুন রশীদে চৌধুরী তাদের চাপে নতি স্বীকার না করে উল্টো তাদের বলেন, ‘‘এই ভবন এখনও বাংলাদেশ। তোমরা যদি বেশি ঝামেলা করো আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো। ছেলেরা তখন চলে যায়।’’
. এই সানাউল হককে খুব স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন।
• সানাউল হকের জন্ম ১৯২৪ সালের ২৩ মে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার চাউরা গ্রামে। তার প্রকৃত নাম আল মামুন সানাউল হক।
নোটঃ শেখ হাসিনা শেখ রেহানা, তথা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের দুশমন সানাউল্লাহ, তার বংশের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় পদবী দখল করে বসে আছে কি-না খোঁজখবর নেওয়া অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি। আসুন নিজনিজ জায়গা থেকে খোঁজখবর নেই।
বিশেষ করে #কসবা উপজেলা আওয়ামী পরিবারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
Shahalam Sajeeb ভাই এর ওয়াল থেকে নেয়া।
Enamul Hoque Enamul ভাইয়ের ওয়াল থেকে
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: