• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

গুজব নয় গজব

সাংবাদিক, শাহীনুর ইসলাম নয়ন
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:২৩ পিএম
গুজব , গজব , গজব ধ্বংস , দেশ রক্ষা , ধর্মীয় আলোকে , চক্রান্ত
ফাইল ছবি

 

 

"গুজব ছড়াবেন না-
গজব ডেকে আনবেন না"

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশপ্রেমিক দামাল ছেলেরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষিতে নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে নাপাকবাহিনী, আন্তর্জাতিক মার্কিনীদের রক্তচক্ষু এবং দেশীয় কতিপয় জারজ রাজাকার-আলবদর- আল শামসগোষ্ঠী স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী এই তিন শক্তিকে পরাজিত করে স্বাধীনতার বিজয় সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো যা ইতিহাস স্বাক্ষী। ঠিক স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও এই সেই তিন শক্তিই বাংলাদেশের পিছনে পড়ে আছে কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে হট্টগোল বাঁধানো যায়, কিভাবে জল গোলা করে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বজায় রাখা যায়, আখের গোছানো যায়! কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করা যায় সেই চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম। এরা সারাজীবন পিছনেই পড়েছিল, পিছনেই পড়ে থাকবে এটাই মূলধারার শিকড়ের কথা। বাংলাদেশের উন্নয়নের সামনে, শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়ানোর কোন মেরুদন্ড কখনোই তাদের ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হবে না! 


এবার আসা যাক মূলকথায়- নাপাকবাহিনীর নাপাক দেশ ফাঁকিস্তানের আইএসআই, সাম্রাজ্যবাদ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী মার্কিনী আর দেশীয় কতিপয় রাজাকারের বালবাচ্চারা রাষ্ট্রবিরোধী, বাংলাদেশ বিরোধী, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ বিরোধী, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী এবং সর্বোপুরী ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত!  পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু, দিন দিন এই তিন অশুভশক্তি আদিম যুগে পিছনে ফিরে যাচ্ছে। মানুষ এখন কোরান রিসার্স করছে, জ্ঞানার্জন করছে, বিজ্ঞানের অবদানে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু, দেশিয় রাজাকারের বালবাচ্চারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে, কোরানের আলোয় জীবন না গড়ে নাপাকদেশের ফাঁকিবাজির মাসয়ালা শুনেই মূর্খের মতো একটার পর একটা গুজব ছড়াচ্ছে/রটাচ্ছে! এটা গুজব নাকি রাষ্ট্রদ্রোহিতা!  
না তারা মূর্খ নয়, তারা বর্বর, হিংস্র, জংলী-জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট! তারা অত্যান্ত সুকৌশলে সিঁধ কেটেই যাচ্ছে...... গুজব ছড়িয়েই যাচ্ছে.... 


সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত অনেক সংবাদের সঙ্গে যে শুধু সামাজিক স্বার্থ জড়িত থাকে বিষয়টা এমন নয়। রাষ্ট্রস্বার্থ কিংবা নিরাপত্তার বিষয়টাও বিবেচ্য হতে হবে। কিছু কিছু  খবর বা সংবাদ প্রচার মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে রক্ষা করে এবং কখনো কখনো বড় ধরনের বিপর্যয় থেকেও আত্মরক্ষার উপলক্ষ্য হয়। আবার কখনো মিথ্যা সংবাদ বা গুজব ছড়ানোর ফলে দাঙ্গা বেঁধে যায়, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। লাভটা হয় কার??? এমন জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারেও পবিত্র  ইসলামের নির্দেশনা হলো, সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশতঃ কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬) 


এখানে দুটি কথা বলা প্রয়োজনঃ

১।  সোস্যাল মিডিয়ায় যারা মিথ্যা তথ্য বা গুজব রটাচ্ছে/ছড়াচ্ছে তারা কি ঈমানদার? তাদের পরিচয় কি? তারা কে/কারা/কোন গোষ্ঠী?
২। গুজবের প্রতিরোধে রাষ্ট্রে আইন আছে। প্রয়োগ শুধু সাংবাদিকদের বেলায় কেন? সারা সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে গুজবের ছড়াছড়ি। তাহলে প্রসাশন নিরব কেন? নাকি গুজবগুলোই সত্যি!
আচ্ছা, এবার অন্য আরেক আয়াতে আসা যাক- বলা হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তরের প্রতিটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)


যে নেতিবাচক সংবাদের সঙ্গে সমাজ, জাতি ও উম্মাহর স্বার্থের সম্পর্ক নেই—শুধু ব্যক্তিগত রাগ, ক্ষোভ ও অভিমান থেকে হয়ে থাকে, তা প্রচার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তা অপবাদের স্তরভুক্ত হবে। পবিত্র কোরআনে অপবাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি রয়েছে। এমন নেতিবাচক সংবাদের যদি কোনো ভিত্তিও থেকে থাকে, তবে তা গিবত বা পরনিন্দা বিবেচিত হবে। শরিয়তে গিবতও জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের দোষচর্চা কোরো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা অপছন্দ করবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। ’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)


এবার আস যাক গুজব ছড়ানোর পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য কি! 
গুজব ছড়ানোর পিছনে মূলতঃ প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। তাদের আতঙ্কিত করা। মানুষের ভেতর বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে কোরআনে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৪৭)


তাহলে কি বুঝা গেলো। রাজাকারের বালবাচ্চারা বলল- জোড়াতালির পদ্মাসেতুতে জনগণ উঠবে না। এবার যখন কাজ শুরু হবে তখন তারা গুজব ছড়ালো- দূর্নীত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঋণ দিবে না। তারপর যখন পদ্মাসেতু উদ্বোধন হবে তখন নানা গুজব শুরু হলো। কোরান হাদিস অনুযায়ী এই গুজব সৃষ্টিকারীদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হবে। সুতরাং, সাবধান। 


এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে বিশ্বব্যাপী এক অস্থিতিশীল পরিবেশ পার করছে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আর আমরা বাংলাদেশে সোস্যাল মিডিয়ায় কি দেখছি- রাজাকারের বালবাচ্চারা-শাবকরা-পোনারা কূয়োর অল্পপানিতে বসে বসে গজব ছড়াচ্ছে, মশকরা করতেছে মূর্খের মতো। এসব জ্ঞানপাপীদের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রয়োজন ছিলো, স্বাধীন বাংলার আলো-বাতাস নয়। যাহোক- ওদিকে আবার যাদেরকে গুজব প্রতিরোধ করার জন্য বলা হয়েছে তাদের টিঁকিটার ছায়া দেখাও সৌভাগ্যের ব্যাপার-স্যাপার!
এখন সমাজে বা সামাজিক মাধ্যমে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুসলিম সমাজের উচিত কি? গুজবে আক্রান্ত না হওয়া এবং তার প্রসারে সহযোগিতা না করা। বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করা। পবিত্র কোরআনেও এমনটাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৩)


আলোচ্য আয়াত থেকে গুজব রটানো শয়তানের কাজ বলেই প্রমাণিত হয়। সুতরাং, রাজাকারের বালবাচ্চারা কি এবার সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত বিশিষ্টজনেরা নিজ নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসেও গুজবকে শয়তানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা শোনায়। অতঃপর লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেছি, যার চেহারা চিনি, কিন্তু নাম জানি না। ’ (সহিহ মুসলিম)

সুতরাং মুসলমানের দায়িত্ব হলো, সমাজে কোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তার প্রচার ও প্রসার থেকে বিরত থাকা। বাস্তবতা অনুসন্ধান করে নিজে সতর্ক হওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা অবগত করা। সর্বোপরি নিজের, পরিবারের, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আজকের এই পবিত্র হজ্জ্বের দিনে  মহান আল্লাহর দরবারে আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের জন্য একসাথে দোয়া করি।  


আসুন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।


লেখকঃ- শাহীনুর ইসলাম নয়ন
সাংবাদিক, দৈনিক মুক্তখবর
ঢাকা।

চীফ রিপোর্টার , 
জয়বাংলা২৪ ডট লাইভ 

Daily J.B 24 / গুজব প্রতিরোধ

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ