
হঠাৎ করেই একটি খবর ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নাকি শ্বেত হাতি। অর্থাৎ অত্যধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প যার উপকার খুবই কম। আবার শিরোনামে বড় করে লেখা আছে মাত্র 2400 মেগাওয়াট এর জন্য 12 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ তেরো হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর পরিশোধ করতে হবে 565 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সাধারণত এত বড় বড় সংখ্যা দেখে সবাই মেনেই নিবে আসলেই এটি একটি নিকৃষ্টতম সাদা হাতির প্রকল্প।
হাতি সাদা হোক আর কালো হোক হাতি লাভবান কিনা সেটা দেখা যাক।
প্রথমত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় 12 বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে 1 বিলিয়নের কিছু বেশি এবং রাশিয়া ঋণ দিবে 11 বিলিয়নের মতো। 2 টি পারমাণবিক চুল্লী চালু হওয়ার পর প্রতি বছর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে 565 মিলিয়ন ডলার। যেহেতু কিস্তি পরিশোধ করতে হবে তাই এই প্রকল্পের রিটার্ন থেকে কিস্তির অর্থ উঠে আসলে সবচেয়ে ভালো। তাহলে ভর্তুকির দরকার পরবেনা।
বিদ্যুত বিক্রি থেকে আয়:
দুটি চুল্লী থেকে বিদ্যুত পাওয়া যাবে 2400 মেগাওয়াট। 2400 মেগাওয়াট = 2,40,00,00 কিলোওয়াট বা ইউনিট। এক ইউনিট বিদ্যুত যদি 5 টাকায় বিক্রি করা হয় তাহলে এক ঘন্টায় আয় হবে 2400000×5= 1,20,00,000( এক কোটি বিশ লাখ টাকা)। 1 দিনে 24 ঘন্টা হিসেবে দৈনিক আয় 1,20,00,000×24=28,80,00,000( 28 কোটি 80 লাখ। আর বছরে 28,80,00,000×365= 10512,00,00,000( 10 হাজার 512 কোটি টাকা বার্ষিক আয়। যদি ডলার হিসেব করা হয়, তাহলে বার্ষিক আয় 10512,00,00,000÷85= 1,236,705,882. ডলার বা 1236 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মোট ব্যয়:
প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে জ্বালানী খরচ হবে 4.5-11.2 মার্কিন ডলার এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপারেশন খরচ হবে প্রতি মেগাওয়াটে 8-14 মার্কিন ডলার। এই দুই ধরনের ব্যয় মিলিয়ে প্রতি মেগাওয়াটে গড় খরচ হবে 16-18 ডলারের মতো। গড় খরচ এর বেশি হবেনা কারণ VVER-1200 সবচেয়ে আধুনিক চুল্লী এবং রাশিয়ান জ্বালানি তুলনামূলক সস্তা। প্রতি মেগাওয়াট 18 ডলার হিসেবে 2400 মেগাওয়াট এ খরচ হবে 2400×18= 43,200$ বা 36 লাখ 72 হাজার টাকা ঘন্টা। এক দিনে খরচ 43,200×24= 10,36,800 ডলার। এক বছরে খরচ 10,36,800×365= 378,432,000 ডলার বা 378 মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এবার ধরে নেওয়া যাক 2400mw এ না চলে ৯০% ক্ষমতাতে রান করলো। তাহলে এর ব্যয় কমে দাঁড়াবে 378×90%= 340 মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
পাশাপাশি আয়ও কমে দাঁড়াবে 1236×90%=1,112 মিলিয়ন ডলারে।
তাহলে বার্ষিক মোট লাভ কত?
Net income Total income - Total cost)
=(1112 - 340)
= 772 mln usd.
প্রতি বছর কমপক্ষে 772 মিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ হলে 565 মিলিয়ন মার্কিন ডলার কেন পরিশোধ করতে পারবেনা এই প্রকল্প?
এভাবে বিশ বছরে কিস্তি পরিশোধ করেও প্রতি বছর 200 মিলিয়ন লাভ হবে। আর এই 12 বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প থেকে 60 বছরে ফেরত আসবে প্রায় 60×1112= 66774 মিলিয়ন বা 66 বিলিয়ন 774 মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ 66÷12= 5.5ফেরত আসবে। এছাড়াও 60 বছরের পরেও উন্নতি করে চালানো যাবে।
এটাতো গেলো আর্থিক লাভের হিসাব, সাথে এর ফলে যে দীর্ঘ মেয়াদী পাওয়ার সোর্স পাওয়া গেলো, টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভর জ্বালানি থেকে তৈরি বিদ্যুতের অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচা গেলো তথা 'জ্বালানি নিরাপত্তা' নিশ্চিত হলো, এটা অন্যতম একটা বড় উপকারিতা এ প্রকল্পের। এই প্রকল্পকে ঘিরে যে হিউজ পরিমান দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলেছে, শিক্ষা খাতে একটা বুষ্ট এড হচ্ছে এমন অনেক বিষয়ই এই বিশিষ্ট 'বুদ্ধিজীবির' বিবেচনায় নেই?
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র হাতি সাদা হলেও কিন্ত খুবই উপকারী। সুতরাং বুদ্ধি বিক্রি করা কথিত বুদ্ধিজীবীদের অনুচ্ছেদ পরে বোকা না হয়ে নিজের বুদ্ধিটা কাজে লাগিয়ে একটু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে উত্তর বের করুন।
Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: