
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে কৃষকদের জমি দখল করে মৎস্য ঘের করার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চকরণ ইউনিয়নের দুই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।
নিজেদের জমি দখল মুক্ত করার দাবিতে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষেরা দীর্ঘদিন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করলেও কোন ফল পাচ্ছেননা তারা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার তেলিগাতী ইউনিয়নের মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার ২০০ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ঘের করছেন ওই দুই নেতা।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক আব্দুল বারেক হাওলাদার বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা মাঠে তার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। কয়েক বছর ধরে বদিউজ্জামান ও বাহাররা আমারসহ এলাকার অনেকের জমি দখল করে ঘের করে আসছে। তারা লিজের টাকা দেয় না, আবার লোনা পানি ওঠানোর কারণে আমরা ধানও চাষ করতে পারি না। ফলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
ঘেরের মধ্যে তিন বিঘা জমি থাকা ফণীভূষণ হাজরা বলেন, নিজের জমি থাকতে চাল কিনে খাই। তারা যেভাবে লোনা পানি ওঠায়, আমরা ধান চাষই করতে পারি না।
শুধু আব্দুল বারেক হাওলাদার ও ফণীভূষণ নন, এমন বক্তব্য জমির মালিক আব্দুল মান্নান আকন, অমল হাওলাদার, জামেনা বেগম, আলীম খানসহ প্রা
শুধু আব্দুল বারেক হাওলাদার ও ফণীভূষণ নন, এমন বক্তব্য জমির মালিক আব্দুল মান্নান আকন, অমল হাওলাদার, জামেনা বেগম, আলীম খানসহ প্রায় সবারই।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জয় কুমার মন্ডল বলেন, মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমি দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের করছেন পার্শ্ববর্তী পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার ও তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার। তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন রয়েছে। কিন্তু এই ২০০ বিঘা জমির মধ্যে তাদের কোনো জমি নেই।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে স্থানীয় অর্ধশত মানুষের ৮০ থেকে ১০০ বিঘা এবং অন্য এলাকার কয়েকজনের ১০০ বিঘা জমি রয়েছে।
বদিউজ্জামান ও বাহাররা জমির মালিকদের কোনো টাকাও দেন না। আবার টাকা চাইতে গেলে খারাপ ব্যবহার করেন ও মিথ্যে মামলার ভয় দেখায়।
তেলিগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খান জালাল আহমেদ লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি এলাকার নিরীহ মানুষদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে কৃষকরা ধানও চাষ করতে পারেন না। কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদা আক্তার বলেন, অন্য ইউনিয়ন থেকে এসে গায়ের জোরে মিস্ত্রিডাঙ্গা এলাকার মানুষের জমি দখল করে খাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এলাকার মানুষ আমার কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এলাকার কৃষকদের বাঁচাতে এখনই এই জমি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
অভিযোগ বিষয়ে পঞ্চকরণ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান মজুমদার বলেন, কৃষক ও স্থানীয়রা যে অভিযোগ করেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। ওই ঘেরে আমার বাবা ও চাচাদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। আমরা কারও জমি জোরপূর্বক দখল করিনি। ঘেরে অন্য যাদের জমি রয়েছে, তাদের নিয়মিত টাকা দিয়েই ঘের করা হয়। একটি প্রভাবশালী মহল এই ঘের করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।
তেলিগাতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাহার হাওলাদার বলেন, এই ঘেরে প্রায় ৬০ জন লোকের জমি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ লোক আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা কারও সঙ্গে জোর-জবরদস্তি করিনি। সবাই স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে জমি লিজ দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘের-সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং স্থানীয় জমির মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। শীঘ্রই এই বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান না হলে যেকোন সময় এলাকায় শান্তিভঙের ন্যায় যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সমুহ আশঙ্কা বিদ্যমান।
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ এসএম মোস্তাফিজুর
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: