
জিয়াকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠ করাটাও ছিলো জিয়ার একটি চক্রান্ত ।
কারণ সেনা অফিসার তখন কম ছিলো না, অথচ ৫২ সাল হতে ৭১ পর্যন্ত স্বাধীনতার পটভূমি নির্মানে যে মানুষের সামান্য সময় কোন প্রকার সংযোগ ছিলো না, তার সময় কেটেছে পাকিস্তান সেনাবাহীনিতে ।
যে ছিলো গোয়েন্দা কোর্স সম্পন্ন করা একজন অফিসার,
(১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি সেখানে দুই বছর চাকুরি করেন, তারপর ১৯৫৭ সালে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন।)
তারপ্রতি খুশি ছিলো পাকিস্তান সরকার। গোপন মিশন দিয়ে তাকে প্রেরণ করা হয়েছিলো পূর্ব বাংলায় । মুক্তযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলো বটে, কিন্তু তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো পাকিস্তানদের পক্ষে ।
এরপরে পাকিস্তান যদি যুদ্ধে জিতে যায়, তাহলেতো আর কোন কাজ রইল না । যদি না জয় পায় সেই ক্ষেত্রে জিয়া হবে তাদের ত্রুপের তাস । কিন্তু ত্রুপের তাস হতে গেলে তাকে বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে হবেই , অন্যথায় সেটা হওয়া সম্ভব নয় । আর তাই ২য়/৩য় জন হিসাবে জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে, অর্থাৎ সে যেন ঘোষণাপত্র পাঠ করতে পারে সেই স্ক্রিপ্ট লেখা হয় ।
বঙ্গবন্ধু অতি স্বল্প সময়ে যে ঘোষণাপত্র পাঠ করে গেলেন, সমগ্র পৃথিবীর মিডিয়া যা প্রকাশ করলো। সেই একই ঘোষণাপত্র -
“I major ziaur rahman , ,on behalf of our great national leader sheikh mujibur rohman , Supreme commander of bangladesh Do hereby proclaim independent of Bangladesh”
জিয়া সামরিক অফিসার হিসাবে পাঠ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজের পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম হয় ।
এখান থেকেই শুরু হয় পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী জিয়ার রথ যাত্রা । গোয়েন্দা কোর্স করার অভিজ্ঞতা থাকায় তারপক্ষে কৌশল ও গোপনীয়তা বজায় রেখে সকল কাজ করা সম্ভভ হয় - যার মধ্যে অন্যাতম হলো - ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার স্ক্রিপ্ট নির্মান করা ও নিজেকে পর্দার অন্তরালে রেখে দেয়া ।
যাদের দিয়ে এই হত্যাকান্ড করানো হলো, তাদেরকে করা হলো নিরাপদ । এটার পিছনেও কারণ আছে । যে একবার মানুষ হত্যা করে , তারপক্ষে সম্ভব আরো শত জনকে হত্যা করা ।
জিয়া যদি হত্যাকারীদের নিরাপদ না করে , তাহলে মেজর ডালিম, কর্নেল ফারুক ইত্যাদিদের অস্ত্র জিয়ার দিকেই ঘুরে যাবে , এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া কৃতজ্ঞতা বলতেতো একটা কথা থেকেই যায় ।
বঙ্গবন্ধুর আলো নিয়েই পরবর্তিতে সকল রাজনৈতিক ব্যাক্তি এবং জিয়া নিজেও আলোকিত হয়েছে । কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আলো নিয়ে , তার সাথেই বেইমানী করে আজ অবধি কোন রাজনৈতিক নেতা বা সামরিক অফিসার টিকে থাকতে পারেনি।
জিয়া তেমনই একজন, যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে নিজেকে লাইম লাইটে নিয়ে আসে । জনগনের মধ্যে নিজের পরিচিতি তুলে ধরতে এরচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র তার হাতে আর ছিলো না । গোয়েন্দা মেধা সম্পন্ন জিয়া অন্তত এই বিষয়ে কৃতিকার্য হয়েছিলো ভালোভাবেই । আর তাই ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে জিয়ার ভ্রুন পর্যন্ত জন্ম নেয়নি রাজনৈতিক বলয়ে, যে সময়কাল ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একা যুদ্ধ করে গেছে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সাথে , সেই বাঙালি জাতির জনকে পিছনে ফেলে - খুনি জিয়ার তাবেদারি করে আজকের উদীয়মান সমাজ ।
কিন্তু ফলাফল একটাই - বঙ্গবন্ধুর সাথে বেইমানী করে তাকে রাস্তায় কুকুরের মতো মরতে হবে । এবং হবেই । সত্য এভাবেই টিকে থাকে । থাকবেও ।
মোঃ তৈমুর মল্লিক
কলামিস্ট
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: