• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ;   ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

জেনোসাইডকে জেনোসাইড বলি! মাসকিলিং বা গণহত্যা না!

Hasan Murshed
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৪২ পিএম
জেনোসাইড,  মাসকিলিং,  গণহত্যা,
সংগৃহীত

"এক. 
জেনোসাইড আর মাসকিলিং এক জিনিস নয়। জেনোসাইড হচ্ছে একটা জনগোষ্ঠীকে তার নির্দিষ্ট পরিচয়ের অপরাধে সম্পূর্ণ/ আংশিকভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত অপরাধের সমষ্টি। 'নির্মূল করার উদ্দেশ্য' হচ্ছে মুল অপরাধ। জেনোসাইড পুর্ব পরিকল্পিত এবং এতে 'সাধারনত' রাষ্ট্রপক্ষ জড়িত থাকে। জেনোসাইডের অনেকগুলো অপরাধের একটি হচ্ছে মাসকিলিং। শুধু মাসকিলিং- পূর্ব পরিকল্পিত নাও হতে পারে। একটা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্য নাও থাকতে পারে। কোন ক্ষ্যাপাটে লোক তার মানসিক বিকৃতির জন্য কিছু মানুষকে একসাথে মেরে ফেললে সেটাও মাসকিলিং 


দুই. 
মাসকিলিং এর বাংলা গণহত্যা। যেহেতু জেনোসাইড এবং মাসকিলিং এক নয় সেহেতু জেনোসাইড এর বাংলা গণহত্যা হতে পারেনা। জেনোসাইড এর বাংলা যদি হয় গনহত্যা, মাসকিলিং এর বাংলা কী? পাকিস্তান রাষ্ট্রশক্তির নির্দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের অক্সিলারী ফোর্স এখানে যে নৃশংসতা ঘটিয়েছে তা গণহত্যা নয়- একেবারে ফুল ফেইজ একটা জেনোসাইড। জেনোসাইডের একশন হিসেবে আরো অপরাধের সাথে গনহত্যা ও ঘটেছে। 


তিন. 
জেনোসাইড '৭১ কে গনহত্যা বললে সমস্যা কী? আমরা তো আসলে জেনোসাইড অর্থেই গণহত্যা বুঝাচ্ছি। সমস্যা প্রকট। প্রথমতঃ- গনহত্যা বলে পাকিস্তান আর্মির মুল অপরাধকে আমরা খর্ব করছি। পাকিস্তান আর্মির মুল অপরাধ ৩ কিংবা ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা নয়। হত্যার মুল কারনটা অপরাধ। তারা বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে চেয়েছিলো। জাতি নির্মূলের লক্ষ্যে হত্যা সহ নানাবিধ অপরাধ ঘটিয়েছিলো। গনহত্যাকে জোর দিলে তার 'ইন্টেন্ট টু ডেস্ট্রয়' কে আড়াল করা হচ্ছে। 
দ্বিতীয়তঃ জেনোসাইডের অংশ হিসাবে গণহত্যা/ মাসকিলিং এর পাশাপাশি জেনোসাইডাল রেপ, এক কোটি মানুষকে ভারতে শরনার্থি হতে  ও তিনকোটি মানুষকে দেশের ভেতর পালিয়ে থাকতে বাধ্য করা, বিপুল পরিমান গ্রাম শহর অবকাঠামো ও সম্পদ ধ্বংস এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তকরনের মতো ভয়াবহ অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছে। এগুলো আউট অফ ফোকাস থেকে যাচ্ছে। এইসব অপরাধ মিলে প্রাইম অপরাধ হচ্ছে- জেনোসাইড। গনহত্যা শব্দ বাকী সব অপরাধকে ধারন করেনা। 


চার. 
তাহলে আমরা জেনোসাইড না বলে গনহত্যা বলছি কেনো? কারন আমাদের ধারনা পরিস্কার না যদিও আমরা নিজেরাই ভিক্টিম।  মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহে বহুবছর ধরে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মুনতাসীর মামুন। নমস্য তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম  "1971:Genocide -Torture Archive & Museum"  বাংলা করা হয়েছে "১৯৭১ঃ গনহত্যা- নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর" 
তার মানে ডঃ মামুনও জেনোসাইড এর বাংলা করেছেন গনহত্যা! 
আরেকটি বিভ্রান্তি আছে এখানে-  'Genocide -Torture' জেনোসাইড ও টর্চার দুটো আলাদা বিষয় নয়। টর্চার, জেনোসাইডেরই অংশ যেমন- গনহত্যা, গনধর্ষন, রিফিউজ, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরন 
জাতিসংঘের দেয়া জেনোসাইড এর সংজ্ঞায় দ্বিতীয় পয়েন্টই হচ্ছে 'Causing serious bodily or mental harm to members of the group' অর্থ্যাৎ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন। প্রথমটি হচ্ছে Killing members of the group 


পাঁচ. 
সরকারকে পারলে কেউ বুঝান 'গণহত্যা দিবস' বলে কিছু হয়না। যেমন 'নারী নির্যাতন দিবস' হয়না। জাতিসংঘের কনভেনশনের অফিসিয়াল নামটা দেখেন ' Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide' একটা অপরাধ প্রতিরোধের ঘোষনা দিয়ে দিবস পালিত হতে পারে। অপরাধের নামে নয়। 


সবচেয়ে বড় কথা- জেনোসাইডকে জেনোসাইড বলুন। যতোদিন সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ পাওয়া না যাচ্ছে ততোদিন জেনোসাইড বললে অসুবিধা নাই। এটা একটা আন্তর্জাতিক অপরাধ। সারা পৃথিবী জেনোসাইডকে জেনোসাইড হিসাবেই চেনে। জেনোসাইডেরই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হয়, অন্য কিছুর নয়। ভুল অনুবাদের ফাঁপড়ে যেনো আমরা পুরো বিষয়টাকে হাল্কা না করে ফেলি। বিষয় সামান্য নয়।"

 

Hasan Murshed

সংগৃহীত লিংক - Bokhtiar Rana 

Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ