
ডলারের কাল মেঘ কাটতে চলেছে। বাংলাদেশ বোধহয় এই যাত্রায় দেউলিয়া হবেনা। তবে...
জুলাই মাসে বিগত দুই বছরের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী ভাই বোনেরা। প্রায় $২.২ বিলিয়ন ডলার এসেছে।
এদিকে আমদানি কমছে। চলতি বছরের জুনে আমদানির জন্য এলসি মূল্য পরিশোধের হার প্রায় ১০% কমেছে। জুন মাসে $৭.৩৮ বিলিয়ন ডলার আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। মে মাসে ছিল $৮.২০ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসে জুনের তুলনায় আরো কমেছে। জুলাই মাসে দেশে মোট আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে $৫.৪৭ ডলারের যা জুন মাসের তুলনায় ৩১.৩২% কম।
জুনে এলসি সেটেলমেন্ট প্রায় ১৮% বেড়ে $৮.৫৫ ডলার হয়েছে। ডেফারড এলসি যারা খুলেছিলেন তারা কিছুটা বিপদে পড়বেন। তবে এলসি খোলার হার কমে যাবার ইম্প্যাক্ট পড়বে সেপ্টেম্বর এর পর থেকে। অর্থাৎ আগামী মাসগুলোতে আমদানি ব্যয় কমতে থাকবে। আমদানি কমা অর্থনীতির জন্য ভাল নয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন ডলারের সংকট কাটাতে আমদানি ব্যয় কমা সেই সাথে রেমিটেন্স বৃদ্ধি রিজার্ভের পরিমান $৪০ বিলিয়নের আশে পাশে ধরে রাখতে সাহায্য করছে।
এখন শুধু অপেক্ষা ডলারের বড় রকমের ক্রাসের। বলতে পারেন এটা কিছুটা প্যানিক সৃষ্টির মত কথা বলে ফেললাম। আসলে বর্তমানে বিশ্বে ডলার সংকটের জন্য ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের পলিসি রেট বৃদ্ধি করে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলাকে দায়ী করা যায়। এই মুহুর্তে ডলারের দাম বলা যেতে পারে মার্কেট ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে যেন আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করা যায়। কিন্তু পলিসি রেট চাইলেই অনন্তকাল বৃদ্ধি করা অবস্থায় রাখা যায় না। রেট কমিয়ে দিলে ডলারের বড় রকমের দরপতন আসন্ন। এক্ষেত্রে আমাদের সামনে বেশ বড় রকমের ঝুকি সৃষ্টি হবে। এর কারন হল, আমাদের রিজার্ভ কারেন্সি মিক্সে ডলারের পরিমান সিংহভাগ। ডলার ক্রাস করলে আমাদের জন্য সেটিও সুখবর হবেনা।
এরুপ ক্ষেত্রে দ্রুত আইএমএফ এর XDR কারেন্সিতে যেমন ইউয়ান, স্বর্ণ বা অন্য কোন ভাবে রিজার্ভের পরিমান বাড়ানোর বিকল্প নেই। বর্তমানে কারেন্সি সোয়াপ এরেঞ্জমেন্ট নিয়ে কথা চলছে। যদি এমন হয় যে ভারতের সাথে ট্রেডে কারেন্সি সোয়াপ করা যায় তবে সেটা শঙ্কটে কাজে আসবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে পরিমানে ভারতের সাথে ট্রেড করে অনুরুপ টাকা ভারতের কাছে থাকবে। এবং সমপরিমান রুপি বাংলাদেশের হাতে থাকবে। বিনিয়ম হার উঠানামা করলে টাকা ও রুপির বিনিময় সমন্বয় করে নেয়া হবে। এরকম এরেঞ্জমেন্টে ডলারের উপর চাপ ও নির্ভরশীলনা কমবে। তবে এটা বলে রাখা ভাল, কারেন্সি সোয়াপ কিছু রুপিতে ট্রেড নয়। রুপিতে ট্রেড করার সম্ভাবনা আপাতত দেখছিনা। কারন বাংলাদেশের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক লিগাল টেন্ডারে রুপি নেই। আইএমএফ এর লিস্টেও রুপি নেই। যেহেতু আইএমএফ ২০১৬ সালে ইউয়ান /রেমিনবি কে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুমোদন দিয়েছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ইউয়ান এ রিজার্ভ কারেন্সির এক্সপোজার এই মুহুর্তে বৃদ্ধি শুরু করতে পারে। চীনের সাথে বাণিজ্যের ভলিউম ও বৃহৎ। ডলারকে পাশ কাটিয়ে বাণিজ্য করা গেলে আমদানি খরচ ও কমবে। তবে ইউয়ান এর সমস্যা এটি ডলারের মত নিরাপদ ও স্ট্যাবল কারেন্সির আস্থা এখনো অর্জন করতে পারেনি।
আপাতত যারা ভাবছিলেন যে বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। অনেকের কাছে দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশ-বিদেশের অনেকের মতে ২০২৪ এর থেকে দেউলিয়া হওয়া শুরু হবে, তারা একটু স্বস্থির শ্বাস নিতে পারেন। আপাতত এরকম সুযোগ আর নেই। রিজার্ভের স্টাবিলিটি বজায় থাকবে যেহেতু আমদানি কমছে এবং আসন্ন মাসগুলিতেও কমবে।
রেমিটেন্স বৃদ্ধির জন্য প্রবাসীদের মন থেকে ধন্যবাদ দেয়া প্রাপ্য। শ্রদ্ধা তাদের জন্য যারা এই বিপদে দেশের পাশে থেকেছেন। এদেশের নোঙড়া মানুষগুলির হয়রানি যে সব প্রবাসীদের দেশের প্রতি ভালবাসা ও নিজ নিজ দায়িত্ববোধে চীড় ধরাতে পারেন নি। বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালে প্রবাসীদের জন্য ডেডিকেটেড পয়েন্ট নিশ্চিত করা দায়িত্ব। প্রবাসীদের ভেতর যারা বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠান তাদের পাসপোর্টের স্টাটাস বাড়ানো যেতে পারে। অনেকেই বোনাস বা অতিরিক্ত টাকা চান না। তাদের যথেষ্ট আছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে দেশবন্ধু বা দেশ সেবক এরকম মর্যাদার এলিট শ্রেনীর পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড প্রদান করা যেতে পারে। দেশে তাদের পরিবারকেও একি সম্মানে সম্মানিত করা যেতে পারে।
এত কিছুর পর এবার আসি আশঙ্কার অংশে। চীন তাইওয়ান পরিস্থিতিও ভাল যাচ্ছেনা। উত্তেজনা নিকট ইতিহাসের মধ্যে চরমে। অনেক ভিডিও বা অন্যান্য সুত্রে জানা যাচ্ছে চীন সামরিক এসেটস মুভ করছে তাইওয়ানের পার্শবর্তী অঞ্চলে। আবার তাইওয়ানের ভেতরের চীন পন্থীদের দিয়ে চীনের সাথে একিভূত হবার জন্য প্রচারনা চলছে। চীন ঝুকি নেয়না।
তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে যদি চীন চায় যে এই সুযোগে তারা তাইওয়ানকে মেইনল্যান্ড চীনের সাথে যুক্ত করবে তখন যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের পর আবারো এরকম পরিস্থিতি আমরা আশা করিনা। যদি সত্যিই এরকম কিছু হয় তবে বিশ্বের অর্থনীতি কলাপ্স করবে। বহু দেশ নি:স্ব হবে। সেসময় বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি হবে সেটি নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
#wasimahin
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: