
মিডিয়া বলছে প্রায় ২৯ লক্ষ ছিম গত কয়েকদিনে ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে চলেগেছে। এই বিষয়কে যদি একটু বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে যে বিষয়টা সামনে আসে, ঢাকার বাইরের জেলা থেকে এরা সবাই এসেছিলো বা এসেছে ঢাকায় নিজের ভাগ্য পরিবর্তনে। অর্থাৎ আয়রোজগারের সন্ধানে। প্রত্যেকেই কোন কোন পেশা বেছে নিয়ে জিবন পরিচালিত করে ঢাকায়। যাদের প্রায় ৭০ শতাংশ যুবক। এই ৭০ শতাংশকে ১০০শতাংশ হিসাবে হিসাব করলে প্রায় ৪০/৫০ শতাংশ বিভিন্ন রাইড পেশার সাথে জড়িত। বাকি সকলে গার্মেন্টস সহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত।
এবার ঈদ যাত্রায় আমরা বিভিন্ন নদীপথের ফেরিঘাটে যে সংখ্যায় মোটরবাইক দেখেছি, ইতিপূর্বে এমন দৃশ্য কখনই দেখা যায়নি। অর্থাৎ বলা চলে, যে সংখ্যায় মোটরবাইক ফেরিতে উঠেছে, সেই সংখ্যায় মানুষও দেখা যায়নি।
উক্ত হিসাব সম্পূর্ণ আমার মতামত, আমি ভুলও হতে পারি।
কাজের প্রতি মানুষের এই আগ্রহ মোটেও নেতিবাচক নয়। বরং উৎসাহব্যঞ্জক। দেশ ও দশের উন্নয়নে তাদের কন্ট্রিবিউশান অবশ্যই দেশকে গর্বিত করে।
আমার প্রশ্নটা সেখানে নয় -
১। আমার প্রশ্ন এই কাজের প্রতি অগ্রহ এবং তার বহিঃপ্রকাশ কেন নিজ এলাকায় তারা করতে পারলো না?
২। যেহেতু তারা সকলেই যুবক, সেহেতু তাদের কোন কর্মসংস্থান সরকার করতে পারলোনা।
৩। অন্যদিকে তারা নিজেরা হতে পারেনি উদ্দোক্তা অর্থনীতির যাতাকলে। উদ্দোক্তা তৈরিতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সুবিধার বাস্তব ফলাফল তেমন সুখকর নয়। বিভিন্ন শর্ত পূরণ করে ৫ টাকা উঠাতে ১ টাকা ছেড়ে আসার মরনাস্ত্র সেতো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু কেন?
৪। এদের মধ্যে প্রায় শতভাগ চাকরির বয়সসীমা পার করে বসে আছে, এমনকি একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়ভিত্তিক বায়োডাটা তৈরির যোগ্যতা নেই বললেই চলে। কিন্তু কেন?
উল্লেখিত সকল বিষয় পর্যালোচনা করলে দুইটি কমন বিষয় সেখানে দৃশ্যমান হয়, যার নাম -
১। পচনশীল রাজনীতি
২। দেশের সর্বত্র ধর্ম ব্যাবসায়ীদের ইসলাম প্রচারের নামে মনগড়া ফতোয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার, যার প্রধান উপাদেয় উগ্রতা, ধর্মান্ধতা, কট্টরপন্থী নীতি ও বিজ্ঞান বিবর্জিত সম্প্রদায় নির্মান।
এই পচনশীল দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতি পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যেকটি ঘরের রান্নাঘর অবধি। ঠিক একই ভাবে গ্রাস করেছে ধর্ম ব্যাবসায়ীদের আগ্রাসন।
যার যাতাকলে একটি প্রজন্ম নিশ্চিত ভাবে যোগ্য হীন ভাবে গড়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যে এগিয়ে থাকবে ধর্ম ব্যাবসায়ীগণ কারণ তারা ধর্মীয় আবেগ ও পরকালকে প্রচার প্রসারে বিনিয়োগ করতে পারেন অতি সহজে।
আপনারা লক্ষ্য করলে সেটাই দেখতে পাবেন চারদিকে।
অন্যদিকে পচনশীল রাজনীতি রান্নাঘর হতে শুরু করে সর্বস্তরে পৌছে দিতে পেরেছে অনৈতিক ভাবে অর্থ আয়ের নেতাদের। যারা এলাকায় বড়ভাই হিসাবে কাজ করে। যাদের পিছনে হাজার হাজার উদীয়মান মেধাগুলো দুইটি টাকা আর অনৈতিক সুবিধার জন্য মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে এমন কোন অন্যায় নেই যা করতে পারেনা।
এই অন্ধ নেশা প্রজন্মকে নিয়ে গেছে সঠিক জ্ঞান অর্জনের বিপরীতে। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শুধু পৈশাচিক মন্ত্রে যুব বয়সটাকে বিলিয়ে দিচ্ছে পচনশীল রাজনীতির পথে। নিশ্চিত ভাবে রাজনীতিতে নাম লেখাতে গেলে তার গন্ডি, যোগ্যতা ও ভেরিফাইড চরিত্র বাধ্যতামূলক করা উচিত। অন্যথায় বিপর্যয় অনিবার্য।
বিষয়গুলো একত্রিত করলে সেটাই প্রতিয়মান হয় যে, অলরেডি এই দ্বৈত ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে। সেখান থেকে ফিরে আসার বা প্রজন্মকে ফিরিয়ে আনার রাস্তা আমার মতে একটাই, সেটা হলো রাজধানীতে কাজের যে সুবিধা, সেই সুবিধা নিয়ে যেতে হবে দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চলে। কাজের ক্ষেত্র নির্মান করতে হবে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত। একমাত্র পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ প্রজন্মকে পচনশীল রাজনীতি ও ধর্মব্যবসায়ীদের কবল থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। করে তুলতে পারে মেধা সম্পন্ন যুব শ্রেনী। এছাড়া কোন উপায় নেই।
Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: