
আমি ঠিক যে কারনে জামাত-শিবির-হেফাজতকে ঘৃণা করি সেই একই কারনে আমি আর.এস.এস-বিজেপি-বজরঙদল এদেরকেও ঘৃণা করতে বাধ্য।
প্রশ্ন এটা না যে নুপুর শার্মা সত্য নাকি মিথ্যা বলেছেন, প্রশ্ন হচ্ছে সে কোন মোটিভে এবং কি ভঙ্গিতে কথাটা বলেছেন।
ধরেন আপনি কারও বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেন। এখন স্বামী-স্ত্রীর স্টেজের সামনে গিয়ে কি আপনি চিৎকার করে হাত তালি দিয়ে বলতে পারবেন, "ওরা আজকে সেক্স করবে, ওরা আজকে সেক্স করবে।" পারবেন বলতে? কেন পারবেন না? ওরা কি বাসর রাতে সেক্স করবে না? এটা তো সত্য কথা, আপনার যুক্তি অনুযায়ী আপনি সত্য বলেছেন। তাই স্বামী-স্ত্রী আপনার কথায় আহত হতে পারবেন না। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। এভাবে কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সত্য বললেও আপনাকে জুতার বারি খেয়ে ফিরে আসতে হবে। আমাদের বাংলাদেশেও আগে বাল্যবিবাহ চালু ছিল। আপনার দাদা-পরদাদারাও করেছিলেন। তো আপনি কি এখন মাইক নিয়ে বলতে পারবেন, আপনার দাদা বা পরদাদা ১২ বছরের একটা বালিকার সাথে সেক্স করেছে।
বা ধরেন এই ঘটনা কাউকে বলতে গেলে আপনি সাধারণত কিভাবে বলেন? আপনি কি বলেন, "আমার দাদা ১২ বছরের কিশোরীর সাথে সেক্স করেছিলেন?"
আপনি কিন্তু তখন বলেন,"আমার দাদীর বাল্যবিবাহ হয়েছিল" অথবা "আমার দাদা খুব কম বয়সে আমার দাদীকে বিয়ে করেছিলেন।" "সেক্স করেছিলেন" এবং "বিবাহ করেছিলেন", কথা কিন্তু দুইটাই সত্য। অথচ আপনার প্রকাশ ভঙ্গি আলাদা। একটু সম্মান রেখে আপনি বলছেন, "বিয়ে করেছিলেন।" এই যে সম্মানটা আপনি বা আমরা দেখাই এটাই স্বাভাবিক। নুপুর শার্মার কাছ থেকে এই স্বাভাবিক কাজটাই আশা করা হয়েছিল। সে কথাটা এই ভাবে ব্যাঙ্গ করে না বলেও মূল ভাবটা বোঝাতে পারতো। মুখ ভেংচে তার এই ব্যাঙ্গ করাটা তার অন্তরের মুসলিম বিদ্বেষকেই ইশারা করছে। আমার আপত্তিটা সেখানেই। এরমানে এই না যে আমি বাল্যবিবাহকে প্রমোট করছি। সব সুন্নতই হাদিস, কিন্তু সব হাদিসই সুন্নত না। সুতরাং সেই দিকে যাওয়ার কোন কারণই আমি দেখি না।
তারপরও এই কথাটা যদি কোন সাধারণ হিন্দু বলতো তাহলেও হয়ত আমি কানে তুলতাম না। কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে কোন যুক্তিতে আমি বিজেপি'র স্পোক পারসনের পক্ষে কথা বলবো সেটাও আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। নুপুর শার্মাকে বলা হয় লেডি সাম্বিত পাত্রা। সাম্বিত পাত্রারা আমাদের দেশের মোল্লা টাইপ অশিক্ষিতগুলোর চেয়ে কোন অংশেই কম না। সে (সাম্বিত পাত্রা) একবার এক টিভি ডিবেটে বলেছিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নাকি সিদ্ধান্ত দিয়েছে গরুর গোবর কোহিনূর হীরা থেকেও দামী। এরা সেই মানুষ যারা প্রচার করেছিল গরুর পেশাব পান করলে করোনা সারবে। এদের সাথে আমাদের মামুন মারুফ তত্ত্ব দেয়া ইব্রাহীম হুজুরের আচরণগত কোন পার্থক্যই নাই। যে কোন ইস্যুকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে হিন্দু-মুসলিমের দিকে নিয়ে যেতে এইসব স্পোক পার্সনদের জুড়ি নেই এবং তারা প্রতিনিয়ত করেও সেটা। কিছুদিন আগেও ক্যাব বা শাহীনবাগের বিক্ষোভকে তারা স্রেফ মুসলমান উগ্রবাদী কর্মকান্ড হিসেবে প্রচার করেছে। যৌক্তিক ইস্যু নিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের অপবাদ দিয়েছে দেশদ্রোহী পাকিস্তানের দালাল বলে।
করোনার সময়, "করোনা জিহাদ" নাম দিয়ে সারা ভারতে করোনা ছড়াবার জন্য তারা দায়ী করেছে স্রেফ মুসলমান তাবলিগ জামাতের সমাবেশকে। অথচ পরবর্তিতে প্লাজমা দিতে সেই তাবলীগের মানুষগুলোই এগিয়ে এসেছিল। করোনাকালে তাবলীগের সমাবেশ করা অবশ্যই নিন্দনীয় কিন্তু তাই বলে সারা ভারতে করোনার কারন হিসেবে কেবল তাদের সমাবেশকেই দায়ী করা এবং জিহাদের নামে এই প্রপাগান্ডা ছড়ানো যে ওরা ইচ্ছা করেই এটা করেছে (করোনা জিহাদ) সেটা নিশ্চয়ই গ্রহনযোগ্য না। সুতরাং অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে বিজেপির কর্মকান্ডকে সমর্থন করার কোন মানেই হয় না। কিছুদিন আগেই ভারতের স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানদের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্ম অবমাননার দায় তুলে অনেককে গ্রেফতার এবং তাদের পোগ্রামে ভাঙচুরও চালানো হয়েছিল। পান থেকে চুন খসলে ভারতে ধর্ম অবমাননার দন্ড কিন্তু বিজেপিরই খাড়া হয় সবার আগে। ভারতের সেক্যুলার সমাজ আমাদের দেশের চেয়ে অনেকটা শক্তিশালী বিধায় ওরা সেখানে এখনো সুবিধা করতে পারে নাই। কিন্তু সুযোগ পেলে ঠিকই করবে।
গত বছর কংগ্রেসের সাংসদ সদস্য শশী থারুর বলেছিলেন, "ভারত হিন্দু পাকিস্তান হওয়ার পথে হাটছে।" আমি এই হিন্দু পাকিস্তানের সমর্থনকারীদের সুরে সুর মেলাতে পারছিনা।
নুপুর শার্মা যা করেছেন তার শাস্তি তিনি পেয়েছেন৷ আদালতে মামলাও চলছে সুতরাং এটা পর্যাপ্ত। এর জন্য তার ফাসি চাওয়া বা বাংলাদেশে বসে নবীর অপমানে একেবারে পাগলপারা হয়ে জিহাদী জোশে লাফালাফিটাও যুক্তিযুক্ত না। বিষয়টার এখানেই ইতি হওয়া উচিত। আর এর সাথে সাথে এটাও মনে রাখতে হবে বিজেপি মানেই পুরো ভারত না বা সারা ভারতের হিন্দু না। নুপুর শার্মার বক্তব্যের প্রতিবাদ করা মানে ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে কিছু বলা না।
তাই বয়কট-ময়কটের মত বালসুলভ কর্মকান্ডও যেমন সমর্থনযোগ্য না তেমনি বিজেপি'র মুসলীম বিদ্বেষকে যৌক্তিক মেনে নেয়াটাও সমর্থনযোগ্য না। ভারতের চ্যানেলগুলোতে ডিবেটের নামে কি হয় বা প্রতিপক্ষ বক্তার উপর নুপুর শার্মারা কিভাবে ব্যাক্তিগত আক্রোশ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে সেটা অন্তত ভালোই জানা আছে।
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: