• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ;   ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

প্রশ্ন ছিলো- শেখ হাসিনা কি 'স্টেইটসম্যান' হতে পারবেন ?

ব্যারিস্টার নিজুম মজুমদার 
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:৩০ পিএম
নিঝুম মজুমদার , প্রধানমন্ত্রী , বাংলাদেশ,

আমি একবার এই ফেসবুকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম এই বলে যে, শেখ হাসিনা কি 'স্টেইটসম্যান' হতে পারবেন কিনা আমাদের এই ভূখন্ডে। 


প্রশ্নটা সংশয় নিয়ে ছিলোনা বরং ছিলো এই দ্বিধা ও জরাগ্রস্থ রাজনৈতিক অনাস্থার দেশে এক ধরনের শংকা নিয়ে। কারন এখানে মূল্যায়ন হয় তীব্র দলবদ্ধ দর্শনে। আমার বাবা একেবারে ছেলেবেলা থেকেই আমাদের ভাইবোনদের বলতেন প্রমথ চৌধুরীর একটা অমর কথা। 'যৌবনে দাও রাজটিকা'। এক সময় বুঝতাম না এই কথার পেছনের দর্শন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়বার সময় এই বাক্যের রহস্য পূর্ণভাবে বুঝতে সক্ষম হই। যৌবনে এসে প্রশ্ন করি, ব্যক্তির রাজটিকা ব্যক্তি তাঁর মেধার চর্চা ও পরিশ্রমে না হয় যদি করেও, রাষ্ট্রের রাজটিকা তাহলে কি? রাষ্ট্রের কি রাজটিকার দরকার নেই?


এই প্রশ্নের উত্তর এই রাষ্ট্র দিয়ে রেখেছে ১৯৮১ সালের ১৭-ই মে। আমরা অনেকেই তা বুঝিনি কিংবা বুঝতে চাইনি।  শেখ হাসিনার দেশে প্রত্যাবর্তনই এই দেশের রাজটিকার দিন। ঐ দিনই এই ভূখন্ডের রাজটিকা দেয়া হয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনৈক্যের এই দেশে কাল্ট ফিগার বলে যে ধারনা সেটি সব সময় উহ্য-ই থেকে যায়। যেই দেশে জাতির জনককে হত্যা করবার পর আইন করে বিচার বন্ধ হয়, সেখানে এসব আলাপ অর্থহীন। বাবা ছিলো একটা পুরো দেশ, মেয়ে হয়েছেন সেই দেশের সবচাইতে দীর্ঘ ও উঁচু পাহাড়। এটাই সত্য। আপনার ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক।  মইনুদ্দিন খান বাদল জাতীয় সংসদে এক কালজয়ী ভাষনে বলেছিলেন, হত্যাকারী আর হত্যার শিকার হওয়া ব্যাক্তির পরিবার, এই দুইয়ের একসাথে সংলাপ হয়না। একদিকে বোমা মারবেন অন্যদিকে সংলাপ চালাবার কথা বলবেন, এভাবে হয়না। কিন্তু হয়েছে। কোকো মারা যাবার পর হাসিনা গিয়েছিলেন পূত্রহারা মায়ের কাছে। দেখাই করলো না খালেদা। অথচ হাসিনার দরকার ছিলোনা যাবার। না রাজনৈতিক কারনে, না পলিটিকাল সৌহার্দ্য দেখিয়েও। কয়েক বছর আগেই তো তারেক তার বন্ধুদের নিয়ে গ্রেনেড মেরেছিলো মেরে ফেলবার জন্য। ফলে ঐসব সৌহার্দ্য কিংবা সম্প্রীতি নিয়ে কেউ প্রশ্নও তুলতো বলেও মনে হয়না। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংলাপে যেতে চাইলেন। কি দূর্ব্যবহারটাই না করলো খালেদা। দূরালাপনীর এই কথপোকথন আমাদের বিষ্মিত করেছিলো। খালেদা হরতাল বন্ধ করবেই না। হাসিনা অনুরোধের পর অনুরোধ করে গেলেন। হোলো না কিছুই শেষ পর্যন্ত।


বিরোধী দলে বি এন পির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শারিরীক নানাবিধ অসুখ। গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের এক সংলাপে ফখরুলকে দেখে প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থ মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন। ঠিক সংলাপ চলবার সময়েই প্রধানমন্ত্রী বি এন পি মহাসচিবের কাছে জানতে চান, তাঁকে এমন লাগছে কেন? মির্জা  ফখরুল প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত অসুস্থ। হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছি।’  প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করেন, কোথায় চিকিৎসা করাচ্ছেন? চিকিৎসা কেমন চলছে? মির্জা ফখরুল তাঁর চিকিৎসার বৃত্তান্ত প্রধানমন্ত্রীকে জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এসব শুনে সন্তুষ্ঠ হতে পারেন না। তিনি জানান- 'আপনার চিকিৎসা ঠিকমত হতে হবে। এই চিকিৎসার ভার আমি নিলাম'
এই হচ্ছে শেখ হাসিনা। পুরো চরিত্র বাবার মতন। মহীরুহের সব কিছু পেয়েছেন তিনি। লন্ডন থেকে তারেক গালাগালের উৎসব বইয়ে দিয়েছিলো। ম্যানর পার্কের 'রয়েল রিজেন্সি হল'-টাই এগুলোর সাক্ষী। কি-ই না বলেছিলো তারেক? দলবল নিয়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাই কমিশনটাও ভাংচুর করলো তার সমর্থকেরা। বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ালো, ভাঙ্গলো। চ্যারিটির অর্থ তছরূপের দায়ে খালেদার জেল হোলো। খালেদার ভাই-বোন সহ পরিবারের মানুষেরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যাক্তিগতভাবে দেখা করলেন। তিনি প্যারোলে ৬ মাসের জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করলেন। কয়েকদিন আগে আবার রিনিউ করলেন ৬ মাসের জন্য। সব কিছু ছাপিয়ে তিনি মানবিক হলেন। ইচ্ছে করলেই তিনি অনড় থাকতে পারতেন। থাকেন নি শেষ পর্যন্ত।


এই দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে মানুষ ভাবেনি। কিন্তু হয়েছে। একাত্তরের নরঘাতকদের বিচার হবে কল্পনাও করেনি। কিন্তু হয়েছে।  চরম আওয়ামীবিরোধী এক লোক আমাকে বলেছিলো, ভাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হবার পর বুঝলাম, এই মহিলা মারাত্নক। কাউকে ছাড়বে না' আমি হাসি। হাসতে হাসতেই বললাম, 'আপনারা পঁচাত্তরের মত ষড়যন্ত্র না করলে, একদিন হাসিনাকে স্টেইটসম্যান হিসেবে সাক্ষ্য দিবেন, লিখে রাখেন' সেই লোক এবার হাসে। আমি আমার কথায় স্থির থাকি। 


গত ইলেকশনের আগে এক বি এন পি সমর্থিত সি এন জি চালকের সাথে ভ্রমণ সময়ে খাজুরা আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ভদ্রলোক সহজ সরল। যা মনে আসে বলে ফেলে। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে তার হাজার শংকা। আমাকে বিষ্মিত করে তিনি বলেন- "হাসিনার মত একডা নেত্রী যদি আমাগো থাকতো! দ্যাখতেন খেলা' এইবারও আমি হাসি। সহজ কথায় কত সত্য সামনে চলে আসে। বিরোধী বুকেও হাসিনা পৌঁছে গেছেন কিভাবে। 'লখিন্দরের বেহুলার ছিদ্র আমি আর রাখব না। জেলে যাওয়ার শখ হলে ওগুলো নিয়ে থাইকেন', ব্যারিস্টার মওদুদকে উদ্দেশ্যে করে এটা ছিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। মওদুদ অবশ্য বারবার স্পেস চাইছিলেন শেখ হাসিনার কাছে। “নেত্রী একটা স্পেস চাই...স্পেস’


হাসিনার আবারো উচ্চারণ-


'এই মওদুদ সাহেব ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে ছিলেন। আবারও জেলে যেতে চান। এমন কোনো স্পেস দেব না যে অন্ধকারের লোকরা আবার আসতে পারে। অন্ধকারের লোকদের আমি আসতে দেব না' এই সংলাপ গত নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয় ঐক্যজোটের বৈঠকের দিন। খুব সম্ভবত ২০১৮ এর নভেম্বরের ১০ বা ১১ তারিখের। সমকালে প্রকাশিত হয়েছিলো এইসব কনভারসেশন। ঐ একই বৈঠকে শ ম রেজাউল করিম শেখ হাসিনাকে ধরিয়ে দেন,- 'আপা মান্না বলসে সে নাকি খালেদা জিয়ার জন্য জানও দিতে পারবে' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মান্না তুমি এসব কথা বলেছ?'
মান্না বলেন, 'আমি ওখানে যা বলেছি, আমার কথা পত্রিকায় মিসকোট করা হয়েছে। আমি এমন কথা বলিনি।' হাসিনা হাসেন। মান্নাকে রগে রগে চেনেন তিনি। 'এই যে মান্না, দলে নিয়ে এসে সাংগঠনিক সম্পাদক বানালাম। আহা, কী সাংঘাতিক বক্তৃতা আমার বিরুদ্ধে! বক্তৃতা দেওয়া ভালো, দাও ভালো করে দাও।' জবাবে মান্না বলেন, 'বক্তৃতা না দিলে আমার রাজনীতি থাকে না।' শেখ হাসিনা বলেন, 'তাহলে তুমি আরও বক্তৃতা দাও, আরও দাও!'


দেশ-মাতা উল্টিয়ে ফেলা বিপ্লবী মান্না পাহাড়ের সামনে এসে সব গুলিয়ে ফেলে। পাহাড় ভালো করেই জানে জানে উট পাহাড়ের নীচে এসে দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত। আর মান্না তো ঠিক উটও হয়ে উঠতে পারেনি। লক্ষিন্দরের বেহুলার ছিদ্র তিনি বন্ধ করেছেন। মৌলবাদীদের তিনি স্তব্ধ করে দিয়েছেন। জলপাই এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণে। বাহিনীর 'বিচ্ছিন্ন' কেউ ঘোঁট না পাকালেই হোলো। ভারত আর চীন নিয়ে এখন তিনি নিয়মিত খেলেন।
পদ্মা সেতু, রূপপুর, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রো রেল, ৪৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স রিজার্ভ, প্রায় ৩০০০ ডলার মাথাপিছু আয়... লিখলে শেষ হবে না। আমি এখন তাঁকে বলি এই অকৃতজ্ঞ দেশে এক আগুনের ফুল। ফিনিক্স পাখির মত যিনি নিজে উঠে এসেছেন আর উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন এই বাংলাদেশকে। এই দুখী জনপদকে। 
বাবা হারা, মা হারা, ভাই হারা, স্বজন হারা এক আগুনের ফুল। আমাদের আশ্চর্য ফিনিক্স পাখি।


লৌহমানবি, আমার শুভেচ্ছা নেবেন। আমার সমস্ত ভালোবাসা, শুভকামনা ও প্রার্থনা আপনার জন্য।

 

 

 


 

Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ