• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ফিরে দেখা বেগমের শাসনকাল

নাজমুল হক রাজিব 
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৩৮ পিএম
bnp, Awami League, tarek ahman, khaleda zia , politics, terrorist , Traitor

 

আওয়ামী লীগ আমলে উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভাই দূর্নীতি? দূর্নীতির কারনেই সব শেষ হবে।
আচ্ছা! আপনি কয়টা সরকারের দূর্নীতি দেখেছেন? আজকালকার বামাতী আন্ডা-বাচ্চারা জন্মেই দেখেছে লীগ সরকার। তাই তাদের সামনে পরিমাপ বা তুলনা করার মত আর কোনো সরকার ছিল না। তাদের কথা বাদ দিলাম। স্বৈরশাসক জিয়া, এরশাদ তাও বাদ দিলাম। খাম্বা তারেকের হাওয়া ভবনের বানিজ্য তাও বাদ দিলাম৷ মাঝখানে নব্বই থেকে ছিয়ানব্বই পাঁচ বছর বেগম জিয়ার একটা ছোট্ট শাসনকাল অনেকেই ভুলে যান। আসেন সেই সময়ের দিকে একটু তাকাই। তখন তো ইন্টারনেট, ফেসবুক কিছু ছিল না, ছিল সংবাদপত্র। তারই রেফারেন্স সহ কিছু সুনীতির উদাহরণ আমরা দেখি। না, আমি মোটেই বলছি না যে আওয়ামী লীগ আমলে দূর্নীতি হয় নাই। বি এন পি দূর্নীতি করেছিল বলে আওয়ামী লীগও দূর্নীতি করার লাইসেন্স পেয়ে যাবে তাও আমি বলছি না। আমি কেবল দুর্নীতির লেভেলটা বোঝাবার চেষ্টা করছি। আশি-নব্বইয়ের প্রজন্ম যারা আছেন তাদেরও অনেককিছু মনে পড়বে। আসেন একটু  নষ্টালজিক হইঃ 

 

 

বেগম খালেদা জিয়ার ১ম ৫ বছরের শাসনামলঃ
[২০ মার্চ ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬]


 অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে দেশের সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্বায়ত্ব শাসনে হস্তক্ষেপ করছে। ব্যাংকগুলোর দুর্দশা বিশৃংখলা ও অব্যবস্থাপনার এটি প্রধান কারণ। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ৭ জানুয়ারী ৯৩]


প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল এর নির্দেশে মাত্র ৩৫ লাখ টাকায় নগরবাড়ি ফেরীঘাট চলতি বছরের জন্য ইজারা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সরকার ৪০ লাখ টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে বিনা টেন্ডারে অনিয়মের মাধ্যমে ফেরীঘাটটি ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দিলে নগরবাড়ী ঘাট শ্রমিক ফেডারেশন ৭৫ লাখ টাকায় ইজারা গ্রহণ করতো। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ৯ জানুয়ারী ৯৩]


একজন রাজনীতিককে খুন করার দায়ে ৮৯ সালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত এক আসামী মাকে দেখার নাম করে ৭ ঘন্টার প্যারোলে নড়াইল পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে ৩টি সভায় বক্তব্য রাখে। সভায় বক্তৃতাকালে সে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও প্রতিপক্ষকে হুমকি দেয়। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৯ জানুয়ারী ৯৩]


সরকারী কাজ কর্মে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করা হলেও বিএনপি সরকারের আমলে সে লক্ষ্য যে বাস্তবায়িত হয়নি ৩০ হেয়ার রোডের বাড়ি তার একটি স্মারক। ঐ বাড়িটি এরশাদ আমলে উপ-রাষ্ট্রপতির সরকারী বাস ভবন হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। তাড়াহুড়া করে তৈরী নকশার ভিত্তিতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ৩ কোটি টাকা ব্যয়ের পর এরশাদের পতন হয়। ৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ৯১ এর আগস্টে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে বাড়িটি নির্মাণের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলা হলেও রহস্যজনক কারণে মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বাড়ির আয়তন আরো বাড়ানো হয়। এ জন্য পাশের আরেকটি মন্ত্রীর বাসভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাড়ির সামনে ৩টি ফোয়ারা নির্মাণ করা হয়। সব কিছু নির্মাণ শেষে ব্যয় দাঁড়ায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেখানে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক অফিস চালিয়েছেন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ সম্পাদকীয় ১১ ফেব্রুয়ারী ৯৩]


৬ এপ্রিল ৯৩ পদোন্নতি বিষয়ক কাউন্সিল কমিটির সভায় অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য যে ৭ জনের তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে জ্যেষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও অনেকের নাম নেই। ফলে সচিবদের মধ্যে আবারো চাপা অসন্তোষ শুরু হয়েছে। ৯২ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। সুপারিশকৃত যে ৭ জনের নাম প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে ৩ জন জ্যেষ্ঠ সচিবের নাম নেই। অথচ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন একজনের নাম রয়েছে। আবার ৯২ সালের ২৭ জুলাই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রণীত ৫৫ জন অতিরিক্ত সচিবের তালিকায় যার নাম নেই এমন একজন ব্যক্তি ঐ ৭ জনের মধ্যে রয়েছে। [তথ্যসুত্রঃ সংবাদ ১৪ এপ্রিল ৯৩]


স্বেচ্ছা অনুদান তহবিল হিসেবে বছরে প্রত্যেক সাংসদ ৭৫ হাজার টাকা, মন্ত্রী ৫ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রী ১৪ লাখ ও রাষ্ট্রপতি ১৫ লাখ টাকা পান। এই টাকা বিতরণ নিয়ে মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি মূলত সারা দেশের। কিন্তু কোন কোন মন্ত্রী তার অনুদানের ৭০ ভাগ নিজ এলাকায় এবং বাকি ৩৫ ভাগ সারা দেশে দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস তার তহবিলের ৪০ ভাগ বরাদ্দ দিয়েছেন বরিশালে। ৪০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর ৩৪ জন তাদের ক্ষমতার বেশী বরাদ্দ নিয়েছেন। ৭ জন মন্ত্রী নিয়েছেন দ্বিগুণ বেশী। ফলে মন্ত্রীদের বরাদ্দকৃত অর্থ ২০ কোটি টাকার স্থলে ৩০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়ে গেছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ সম্পাদকীয় ৫ জুন ৯৩]


খালেদা জিয়ার নির্দেশে ১২ জুন ৯৩ সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী নুরুল হুদা পদত্যাগ করেছেন। পদোন্নতির অনিয়মসহ বহু অনিয়মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ছিল। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৩ জুন ৯৩]


গত ৯ মাসে শতাধিক ডাক্তারসহ বহু কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত নির্বাচনের পুরো তালিকা পাল্টিয়ে ইচ্ছামত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ডাক্তার ও কর্মচারী নির্বাচন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েব হয়ে গেছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৪ জুন ৯৩]


২৪ জুন ৯৩ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সাংসদ মীর্জা আজম অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ব্যারিষ্টার সালাম তালুকদারের ভাতিজার দুর্নীতির কথা সংসদে বলায় তার ওপর গুন্ডা লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। মির্জা আযম বলেন, মন্ত্রী তার ভাতিজাকে ৫০ লাখ টাকার জমি মাগনা দিয়েছেন। অবৈধ ভাবে যমুনা সারকারখানার কয়েকটি ঠিকাদারী দিয়েছেন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৫ জুন ৯৩]


রাজধানীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ড্রাইভিং লাইসেন্স জাল। [তথ্যসুত্রঃ সংবাদ ৩০ জুন ৯৩]


আইনজীবী সমাজ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবল প্রতিবাদের মুখে ৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৪, ২ জন দুর্নীতিবাজসহ নিয়োগকৃত ৯ জন বিচারপতির শপথ গ্রহণ সম্ভব হয়নি। ৯ ফেব্রুয়ারী তাঁদের নিয়োগ বাতিল করে একই দিনে নতুন নিয়োগ আদেশ জারী করা হয়। নতুন তালিকায় প্রথম তালিকা থেকে দুজন বাদ পড়েছে। এরা হলেন, আইন সচিব আসাদুজ্জামান আল ফারুক ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। তাঁদের স্থলে যে দুজন নিয়োগ পেয়েছেন তাঁরা হলেন, বরিশাল জেলা জজ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও যশোর জেলা জজ এমএম রুহুল আমীন। ৯ ফেব্রুয়ারী জাতীয় সংসদের আলোচনা সভায় কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা জাতীয় সংসদ অধিবেশনের বলেন, যাঁদের সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আর তাছাড়া কোন দলীয় ব্যক্তি বিচারক হলেই তার অবস্থান সাংবিধানিক হয়ে যায়। সুতরাং দলীয় বিষয়টি বিচার্য নয়। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১০ ফেব্রুয়ারী ৯৪]


অর্থ প্রতিমন্ত্রী মজিবর রহমানের নির্দেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালককে গত জানুয়ারী ১৯৯৪ তার নিজ জেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু বাধ সাধলেন জেলার সরকার দলীয় ৬ সাংসদ। তাঁরা প্রচলিত নিয়ম লংঘন করে ঐ নিয়োগ প্রদানসহ ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তাঁদের আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৮ মার্চ ৯৪]


পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্যকরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ইচ্ছামত বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকদের জ্যেষ্ঠতা তালিকা পরিবর্তন করে তার ভিত্তিতে কয়েক জনের পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে টেলিভিশনে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২ এপ্রিল ৯৪]


যুগ্ম সচিব পর্যায়ের ৮ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার বিরুদ্ধে প্রশাসনের ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা অচিরেই হাইকোর্টে রীট করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্ষুব্ধ এক কর্মকর্তা জানান, উর্ধ্বতন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। অথচ যে আটজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দুজন বাদে বাকি ৬ জনের চেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়েছেন। সুত্র জানায় ১১ এপ্রিল ১৯৯৪, অনুষ্ঠিত উর্ধ্বতন নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভায় ৮ জনকে পদোন্নতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৭ জন মন্ত্রীকে নিয়ে গঠিত কমিটির আহবায়ক ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার। [তথ্যসূত্রঃ জনকণ্ঠ ২০ এপ্রিল ৯৪]


টেকনাফ থানার ঘূর্ণিদুর্গত শাহপরীর দ্বীপের বিক্ষুব্ধ জনতা ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে ডাক তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে ত্রাণ বিতরণ না করেই কক্সবাজার ফিরে আসতে হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে বিতরণের জন্য গৃহ নির্মাণ সামগ্রী বন্টন করা হয়। কিন্তু জনগণ টিনের পরিবর্তে ছন নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও অপ্রতুলতার প্রতিবাদে আজ সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ফাইংখালী এলাকার জনগন সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৭ মে ৯৪]


গুলশান ও বনানীতে সম্প্রতি প্লট বরাদ্দের জন্য ১৩৭ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা নিয়ে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে। এই প্লটের জন্য প্রাথমিকভাবে যে ১৩৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী আছেন। [তথ্যসুত্রঃ সংবাদ ১৩ অক্টোবর ৯৪]


স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকার নির্ধারিত নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণ না করায় পরিকল্পনা কমিশন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারী নীতি মালা ও পদ্ধতি অনুসরণ না করে প্রকল্প সম্পর্কিত কর্মসূচীর বাস্তবায়ন কোনভাবেই হতে পারে না। কারণ এ ধরনের পদক্ষেপ উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্বাভাবিক গতি ধারাকে যেমন ব্যহত করে তেমনই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। চিঠিতে আরো বলা হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দকৃত অর্থ অবমুক্ত অথবা অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে প্রচলিত বিধান মোতাবেক পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি ছাড়া কোন অনুমোদিত প্রকল্পের অনুকুলে অর্থ ছাড় করা যায় না। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতি না নিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে ৭টি অননুমোদিত (সংশোধিত অননুমোদিত) প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। অন্য ৪টি প্রকল্পের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশন হতে যে পরিমাণ অর্থ ছাড়ের সম্মতি দেয়া হয়েছে তার অতিরিক্ত অর্থ অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে , এ ধরনের পদক্ষেপ উন্নয়ন শৃংখলার পরিপন্থী। প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী একটি প্রকল্পে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা ছাড় করা হয়েছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৬ অক্টোবর ৯৪]


পাবনা জেলার সাঁথিয়া ও সুজানগর থানার একটি খালের নাম বিল গ্যারকা। এটি ১৯৭৮, ৮০, ৮২, ৯১ সালে মোট ৪ বার খননের জন্য ৪ হাজার ২শ টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মূল্য পৌনে ৩ কোটি টাকা। এটি পঞ্চমবারের মত আবার খনন করা হবে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ সম্পাদকীয় ৭ ফেব্রুয়ারী ৯৫]


১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর জামালপুরস্থ যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন শুরু হবার পর ১৯৯৫ এর মধ্য মার্চ পর্যন্ত ৩২ হাজার টন সার লোপাট হয়ে গেছে। যার মূল্য ১২ কোটি টাকা। মিল পরিচালনা কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এই ঘটনার সাথে জড়িত। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২১ মার্চ ৯৫]


কুয়েতী প্রধানমন্ত্রী শেখ সাদ আল আব্দুল্লাহ আল সালেম আল সাবাহকে ১২ এপ্রিল ৯৫ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিমান বন্দরে গিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এর কদিন আগে শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি চন্দ্রিকা কুমারাঙ্গাকে স্বাগত জানাতে বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া কুয়েতী প্রধান মন্ত্রীকে স্বাগত জানান, অথচ শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি ঢাকা পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানাতে গেলেন না এই ব্যতিক্রম প্রটোকল ভঙ্গের ইঙ্গিত বহন করে কিনা প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যখন কুয়েত সফর করেন তখন কুয়েতী প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে স্বাগত ও বিদায় জানান। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী কুয়েতী প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিমান বন্দরে যান। অন্য দিকে বেগম জিয়া যখন শ্রীলংকা সফরে যান তখন সে দেশের রাষ্ট্রপতি বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। সে কারণে রাষ্ট্রপতি চন্দ্রিকা যখন বাংলাদেশ আসেন তখন বেগম জিয়া বিমান বন্দরে যাননি। অবশ্য এতে জনমনে প্রশ্নের সমাধান হয়নি। কারণ কুয়েত থেকে বিদায়কালে কুয়েতী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিমান বন্দরে বিদায় জানিয়ে ছিলেন। সেই হিসেবে খালেদা জিয়া কুয়েতী প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানালেন না কেন? [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৪ এপ্রিল ৯৫]


ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ আত্মস্বাতের অভিযোগে এরশাদের সাবেক সহযোগী বিএনপি সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ১৯৯৫ দুর্নীতি দমন ব্যুরো মতিঝিল থানায় পৃথক পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৬ এপ্রিল ৯৫]


জ্বালানী মন্ত্রী ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পুত্র খন্দকার মাহবুব হোসেন তুষার দাউদকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দেবার সুবাদে কেন্দ্রটিতে অবাধে নকল চলছে। ২৬ এপ্রিল ৯৫ ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে দেখা গেল স্কুলটির আশেপাশের বাসা বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী মসজিদের ছাদ দিয়ে এবং স্কুলের বাউন্ডারী টপকে বহিরাগতরা কেন্দ্রে ঢুকছে এবং কাজ সেরে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী পুত্র তুষার ঢাকা বোর্ডে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয় এবং ফেল করে। এ বছর সে কুমিল্লা বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। কোন দিন স্কুলটিতে লেখাপড়া না করেও সে সুন্দলপুর হাইস্কুল থেকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছে। তুষারের পরীক্ষা যাতে ভাল হয় সে জন্য মন্ত্রীর সৎভাই এবং সুন্দলপুর স্কুলের শিক্ষক খন্দকার রাশেদ হোসেন তুষারের পাশে থাকছেন। তুষারের পরীক্ষার খাতা কেন্দ্রের বাইরে থেকে লিখিয়ে জমা দেবার অভিযোগেরপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা বোর্ড একটি তদন্ত কমিটি করেছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৯ এপ্রিল ৯৫]


বিচারপতি আব্দুর রউফ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ও আপীল বিভাগে দুটি রীট মামলা থাকা অবস্থায় তাঁকে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে সরকার নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগকে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শামসুল হক চৌধুরী বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছেন। উল্লেখ্য, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ৩(ক) বিধানমতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রজাতন্ত্রের অন্য কোন দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পারে না। অথচ তাঁকে প্রথমে হাই কোর্টে পরে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে নিযোগ দেয়া হয়েছে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুটি রীট মামলা করা হয়। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১২ জুন ৯৫]


মাগুরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধুমতি নবগঙ্গা প্রকল্পের পূর্ত কাজ এবং গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ঘটনা ধরা পড়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ কাজের জোর আপত্তি তুলেছে। জানা গেছে সেচ ও কৃষিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবঃ) মজিদুল হক এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১৫ জুন ৯৫]


ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ২০ জন ছাত্রকে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য এমাজ উদ্দিন আহমেদ। কারণ ১৫ এপ্রিল ১৯৯৫, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তারা যোগ দেয় পরীক্ষা না দিয়েই। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৩ জুন ৯৫]


ধর্ম মন্ত্রী এম কেরামত আলী নিজ এলাকাসহ বেছে বেছে কিছু এলাকার মসজিদে অর্থ বরাদ্দ দেয়ায় ২৬ জুন ১৯৯৫ সংসদে সরকারী দলের সদস্যরাই সংসদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৭ জুন ৯৫]


ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে অনেকের ২/৩ মাস যাবত বেতন বকেয়া। ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে হাসপাতালের ঋণ ৪০ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় হাসপাতালে সাজানো হয়েছে ১০১ ও ১০২ নম্বর কেবিন ও গাইনীর অপারেশন থিয়েটার। কেবিন দুটি আবৃত করা হয়েছে মসুন কার্পেটে। আনা হয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২২ লাখ। কারণ কি? কারণ কদিন বাদে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ এখানে প্রসব করতে আসবেন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৩ আগস্ট ৯৫]


৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা প্রভাব খাটিয়ে অথবা রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে কুখ্যাত দাগী আসামীদের ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত এভাবে ৫০জন দাগী আসামীকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যারা সবাই বিএনপির নেতা কর্মী এবং মন্ত্রী এমপিদের ক্যাডার বলে পরিচিত। [তথ্যসুত্রঃ সংবাদ ১৪ অক্টোবর ৯৫]


বন্যা বিধ্বস্থ গাইবান্ধা ত্রাণ বাবদ খাওয়ার অযোগ্য পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এই চাল খেয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে কয়েকজন মারা গেছেন। এই চাল এতই নিম্নমানের যে, খোলাবাজারে (ওএমএস) বিক্রি করতে গেলেও কোন ক্রেতা পাওয়া যাবে না। [তথ্যসুত্রঃ সংবাদ সম্পাদকীয় ১৩ নভেম্বর ৯৫]


অবৈধভাবে থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জসীম উদ্দিন হল কর্তৃপক্ষ ২৮ নভেম্বর ১৯৯৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেনের কক্ষসহ ৬টি কক্ষ সীলগালা করে দেয়। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৯ নভেম্বর ৯৫]


হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গুলশানের ১ বিঘা ১০ কাঠা ২ ছটাকের প্লটটি এখন জাতীয় পার্টির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এবং বেগম জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোরশেদ খানের দখলে। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়ীটিকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র "শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্মৃতি যাদুঘর" করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ডিআইটি'র কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীর সহায়তায় ৮৭ সালে তৎকালীন জাতীয় পার্টির কোষাধ্যক্ষ মোরশেদ খানের নামে প্লটটি অবৈধভাবে নামজারী করা হয়। বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপিত হওয়ার পর তৎকালীন মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে পরিত্যাক্ত সম্পত্তি সম্পর্কিত একটি কমিটি এ সম্পত্তিকে সরকারের মালিকানায় নেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু বেগম জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এলে মোরশেদ খান অন্যান্য ব্যবসার মত এই সম্পত্তিটিও রক্ষার উদ্যোগ নেন এবং সফল হন। জানা গেছে, মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গুলশানের এই প্লটের মূল নথি রাজউক এখন খুঁজে পাচ্ছে না। উল্লেখ্য, মোরশেদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতির বান্ধবী এবং মহিলা জাতীয় পার্টির নেত্রী জিনাত হোসেনের আপন ভাই। [তথ্যসূত্রঃ দৈনিক রূপালী, ১ জানুয়ারী ৯৬]


দেশের জরুরী ত্রাণ কাজে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি ২টি হেলিকপ্টার কেনার জন্য সাহায্য দিয়েছিল। অথচ ঐ টাকা দিয়ে ২টি হেলিকপ্টারের মধ্যে একটি ভিআইপি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, হেলিকপ্টার ২টি ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতিও করা হয়েছে। ফলে রেডক্রস কমিটি অসন্তুষ্ট হয়েছে। Avia export নামের যে রাশিয়ান কোম্পানী থেকে হেলিকপ্টার ২টি কেনা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে Aerosery নামের বৃটিশ কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। এমআই-১৭ রাশিয়ান হেলিকপ্টার দুটির প্রতিটি দাম পড়ে ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯শত ৪৪ টাকা। এরপর খালেদা জিয়ার জন্য একটি হেলিকপ্টার ভিআইপি হিসেবে সাজাতে বাড়তি খরচ পড়ে ৬১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সমুদ্র পথে না এনে এই প্রথম আকাশ পথে কোন হেলিকপ্টার বা বিমান নিয়ে আসার কারণে খরচ হয় ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে হেলিকপ্টার দুটি চট্টগ্রাম পৌঁছাতে খরচ পড়ে ১৮ কোটি ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮শ ৮৮ টাকা। উল্লেখ্য, Avia export নামের রাশিয়ান কোম্পানিটির স্থানীয় এজেন্ট হলো নাতাশা। বিএনপি নেতা সাবেক এমপি সাইফুল আজম সহ সরকারী দলের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার আত্মীয় নাতাশার স্বত্ত্বাধিকারী। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ৬ জানুয়ারী ৯৬]


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ স্বয়ং অবৈধ প্রক্রিয়ায় তার জামাতা সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এএস এম আতিকুর রহমানসহ ৩ জনকে সহকারী অধ্যাপক হতে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যে তদন্ত কমিটি করে তার রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৩ জানুয়ারী ৯৬]


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরের কাজের বিনিময়ে খাদ্য, টেস্ট রিলিফ ও বিশেষ ত্রাণ প্রকল্পের আওতায় মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিকটন গম বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫ মাসে বিএনপির মন্ত্রী নেতাদের রিকুইজিশন অনুযায়ী প্রায় ৮ লাখ টাকার গম বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু যে সব প্রকল্পে এই বিপুল পরিমাণ গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার ৭০ ভাগের বাস্তবায়ন কাজের নাম গন্ধ মিলছে না। বাকী ৩০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগের কাজ আধা আধি শেষ করেই বলা হয়েছে সাহায্যের সব গম শেষ। ৯ ভাগ প্রকল্পের গমের কাজ ঠিকমত হয়েছে বাকী ১ ভাগ প্রকল্পের অধীনে ছাড় করা গম জানুয়ারী ৯৬ নাগাদ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে যন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ডোনারদের কাছে গমের কাজের বাস্তবায়ন রিপোর্ট দিতে পারছে না। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ২৬ জানুয়ারী ৯৬]


লুৎফর রহমান খান শিল্প প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবার পর বাংলাদেশব ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থার চেয়ারম্যান ঢাকা মেট্রো-০২-২১২২ নম্বরের একটি জ্বীপ দিয়ে আসেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে গাড়ীর জন্য ইস্পাত ও প্রকৌশল সংস্থার জ্বালানী ব্যয় হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। ড্রাইভার লাল মিয়া বেতন বাদে ওভারটাইম বাবদ বিল নিয়েছে ১৯ হাজার টাকা এবং মেরামত বাবদ ৭৮ হাজার টাকা। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ৩ ফেব্রুয়ারী ৯৬]


বিরোধী দলের অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিএনপি সরকার ঘোষণা দেয় যে, যেসব যানবাহনের ক্ষতি সাধন হবে, সেসবের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এজন্য অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরে বরাদ্দ করা হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ক্ষতিগ্রস্থের সনদপ্রাপ্তদের ঢাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টাকা বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপি সরকারের পতনের পরপরই খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকার কোন হিসেব মিলছে না। বিএনপি সরকার পতনের পূর্বেই জাতীয়তাবাদী পরিবহন মালিকদের মধ্যে এই টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। বিএনপি সমর্থিত পরিবহন মালিক সমিতির এক প্রভাবশালী নেতা ও ২ মন্ত্রীর সুপারিশে টাকাগুলো ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা বিতরণের তালিকা থাকলেও বাকি ৫০ লাখ টাকা কাকে দেয়া হয়েছে তার কোন হদিস মিলছে না। ক্ষতির নাম করে যাদের টাকা দেয়া হয়েছে তাদের গাড়ির ক্ষতি হওয়ার কোন ঘটনা প্রকৃতপক্ষে ঘটেনি। যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি দেখানোর জন্য বিআরটিএর কাছ থেকে নকল সনদপত্র যোগাড় করা হয়। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিএনপির একমন্ত্রীর ধমকে তারা সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য বিরোধী দলের কর্মসূচী মোকাবিলায় বাস, টেম্পো চালানোর জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে টোকেনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার তেল বিতরণ করা হয়েছিল। [তথ্যসূত্রঃ জনকন্ঠ এপ্রিল ৯৬]


বিএনপি সরকার পতনের আগে ৫টি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইল পাচার হয়ে গেছে। দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এই ফাইলগুলো তাদের বাসায় নিয়ে গেছেন। যে ফাইলগুলো গায়েব হয়ে গেছে সেগুলো হচ্ছে, বাধ্যতামুলক অবসর প্রদান ফাইল, সরকারী কর্মকর্তাদের বদলী ও পদোন্নতি সংক্রান্ত ফাইল, মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীদের বিদেশ ভ্রমন, ভাতা ফাইল, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিএনপি সাংসদদের নামে বিশেষ গম বরাদ্দ ফাইল, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মসজিদ-মন্দির, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট্রের নামের নগদ অর্থ বরাদ্দ ফাইল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন ক্লাব ও সমিতির নামে এককালীন অর্থ বরাদ্দের ফাইল। গায়েবকৃত ফাইলে পুকুর চুরির ঘটনা ছিল বলে এগুলো গায়েব করা হয়েছে। [তথ্যসূত্রঃ জনকন্ঠ ১ এপ্রিল ৯৬]


দেশের বিভিন্ন কলেজে ছাত্র দলের নেতারা চাপ দিয়ে ইচ্ছামত ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করেছে। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ৪ এপ্রিল ৯৬]


সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের মালিকানাধীন মার্শাল সার্ভিসেস নামক একটি কোম্পানীর কাছে পঞ্চগড়ে অবস্থিত মদ তৈরীর কারখানা 'জাজ ডিস্টিলারিজ' বিক্রী করা হয়েছে। শিল্পঋণ সংস্থার অধিগ্রহণকৃত এই কারখানাটির মূল্য ১৯ কোটি টাকা। কিন্তু বিক্রী করা হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ২০ লাখ টাকায়। কারখানাটি শুধু পানির দামে বিক্রি করা হয়নি বিক্রির প্রক্রিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা ও পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবার জাজ ডিস্টিলারিজ ছাড়াও বর্তমানে যে সব প্রতিষ্ঠানের মালিক সেগুলো হচ্ছে, (১) ইউনিটেক্স এপারেলস লিঃ (২) ক্রোনোটেক্স, (৩) ক্লিমেন্টাইল লিঃ, (৪) টারটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, (৫) রহমান নেভিগেশন কোম্পানী লিঃ, (৬) ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লিঃ, (৭) এসোসিয়েটস সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ, (৮) ঢাকা কনসালটিং লিঃ, (৯) ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এজেন্সি লিঃ, (১০) উডল্যান্ড এপারেলস, (১১) রূপসী ডেইরী এন্ড ফিসারী কমপ্লেক্স লিঃ, (১২) ঢাকা হাসপাতাল লিঃ এবং (১৩) ডান্ডি ডায়িং লিঃ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে উক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানে ৩ শতাধিক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। [তথ্যসূত্রঃ জনকন্ঠ ৯ এপ্রিল ৯৬]


কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটের প্লট নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিএনপির মন্ত্রী, নেতা সমর্থকরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। সাধারণত কারো কোন সরকারী হাউজিংয়ে প্লট থাকলে দ্বিতীয় আর কোন সরকারী হাউজিংয়ে প্লট নেয়া যায় না। স্ত্রী ও আত্মীয়ের নামে নেয়া ও আইন বিরোধী। আর ২ বছর প্লট খালি পড়ে থাকলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু বিএনপি গণপূর্ত মন্ত্রী ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামে ঢাকায় প্লট থাকার পরও তার স্ত্রী ডঃ শাহিদা রফিকের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিএনপির প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদও (প্লট নং ১/১, ব্লক-১৯, সেকশন-২) প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, ( প্লট নং-৭, ব্লক এইচ, সেকশন-২) কিন্তু ৬ বছর ধরে তার প্লট খালি থাকার পরও বাতিল করা হয়নি। বিএনপির আর যারা প্লট চেয়েছেন তারা হলেন, কুমিল্লা জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ বেগম রাবেয়া চৌধুরীর আত্মীয় মোকলেসুর রহমান (প্লট নং-১২, ব্লক জি, সেকশন-৪), রাবেয়া চৌধুরীর দেবর ওমর আহমেদকে প্লট দেয়া হয়েছে জনৈক ফেরদৌস কবিরের বরাদ্দ বাতিল করে (প্লট নং-১১, ব্লক জি, সেকশন-৪)। মন্ত্রী নেতাদের অনিয়মের সুযোগে প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন আমলারাও। যেমন ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলামের পিএসএর স্ত্রী সৈয়দা মাসুদা বেগম (প্লট নং-৩, ব্লক এন, সেকশন-২), শিক্ষা সচিব এরশাদুল হকের স্ত্রী (প্লট নং-১০, ব্লক এম. সেকশন-২), তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বান্ধবী দিল নাসরিন আইয়ুর (প্লট নং-২, ব্লক এম. সেকশন-২) বরাদ্দ পেয়েছেন। [তথ্যসূত্রঃ সংবাদ ১০ এপ্রিল ৯৬]


১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে ক্ষমতাচ্যুত বিএনপি সরকারের ৫৬জন মন্ত্রী এমপি নেতা প্রকল্প সাহায্যের ৭শ কোটি টাকা লুটপাট করে খেয়েছেন বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক খসড়া রিপোর্টে ধরা পড়েছে। উক্ত অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ত্রাণ সাহায্য হিসেবে মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার টন গম বরাদ্দ ছিল। ৫৬ জন মন্ত্রী এমপি ও নেতা ১৯৯৫-৯৬ মাসে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, টেস্ট রিলিফ ও বিশেষ ত্রাণ প্রকল্পের অধীনে ৮ লাখ টন গম বরাদ্দ নেয় যার সরকারী মূল্য ৫৯৫ কোটি টাকা । অন্যদিকে একইভাবে তারা ৪শ' কোটি টাকা মূল্যের ঢেউ টিন বরাদ্দ নেয়। মোট এই ৯৯৫ কোটি টাকার সম্পদের ৭শ কোটি টাকার গম ও ঢেউ টিন সাহায্য হিসেবে ব্যবহারের কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন থেকে প

Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ