
বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা অতীতের যে কোন রেকর্ড ভেঙে ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তাতে খুব একটা ভালো ফলাফল আসেনি। বরং দলটির বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে সেটা দৃশ্যমান।
পর্দার ভিতরে ক্ষোভ থাকলেও তারা প্রকাশ্যে এ বিষয়টিকে সংগঠনের শৃঙ্খলা বাস্তবায়নে সাংগঠনিক ব্যবস্থা বলে অভিহিত করছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিএনপিতে বিদ্রোহ আসন্ন।
বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া, পাশাপাশি অনেক নেতাকে দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে বহিষ্কারের ঘটনা বিএনপির অতি সাম্প্রতিক বিষয় ।
অথচ দলে তুলনামূলক অনেক জুনিয়র নেতা বর্তমানে বারবার মূল্যায়িত, অতিমূল্যায়িত কিংবা সম্মানিত হচ্ছেন। ত্যাগী নেতারা দলীয় পদ-পদবিতে অবমূল্যায়নের শিকার হচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীদের কাছেও এসব নেতা অসম্মানিত বোধ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেছে, দলে যেভাবে রদবদল শুরু হয়েছে তাতে যদি সম্মানজনকভাবে রাজনীতি করতে না পারি তাহলে অনেকের মুখোশ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খুলে দেবো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, দলে পরিবর্তন একটা চলমান প্রক্রিয়া। পরিবর্তন হবে, হওয়াটা স্বাভাবিক, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যাদের পরিবর্তন করা দরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যারা আছেন তাদের পরিবর্তন করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, বিএনপি ধ্বংসের শেষ ধাপ শুরু হয়েছে এই রদবদল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিএনপিতে এখন প্রেজেন্টেবল (নেতৃত্ব দেওয়ার মতো) নেতা নেই, যারা ছিলেন তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনে প্রার্থী খুঁজে পাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি তারেক রহমানের বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে এই বিক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা বিদ্রোহ তৈরি হতে পারে। অনেকেই হয়তো শেষ বয়সে এসে আরেকবার সংসদ সদস্য হওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। পাশাপাশি যারা আগে এমপি-মন্ত্রী হয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আর্থিকভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তারাও তাদের সম্পদ রক্ষার্থে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করতে পারেন।
মহিউদ্দিন খান বলেন, বিএনপির ধারণক্ষমতা বাড়ানো উচিত ছিল। অভিজ্ঞ নেতাদের সরিয়ে না দিয়ে আরও বেটার (দক্ষ) নেতাদের জায়গা দেওয়া উচিত ছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এটা বুঝে করেছেন নাকি না বুঝে করেছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। কারণ একজন সচেতন মানুষ কখনো এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
সূত্র বলেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন দলের ভেতরে থাকা কিছু নেতাকর্মী। এদের মধ্যে কয়েকজন চিহ্নিত। এছাড়া সন্দেহের তালিকায় থাকা অনেকেই নজরদারিতে আছেন এখন।
এর আগে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়াকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছিল বিএনপির ভেতর থেকেই। আলাদা কমিটিও করেছিলেন সংস্কারবাদী নেতারা। তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছিলেন তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেননি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দখলদার সরকার নিজেদের ঠেকিয়ে রাখতে এ সব খেলাধুলা করছে। কে গেলো, কে আসলো এতে বিএনপির কিছু আসে যায় না। বিএনপির শক্তি হলো জনগণের কাছে। অনেক বড় বড় নেতাও দল ত্যাগ করে সুবিধাভোগী হওয়ার জন্য এদিক সেদিক করেছে। কিন্তু বিএনপির কোনো সমস্যা হয়নি।
ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত তো থাকবেই। আমরা সচেতন আছি, দলের ভেতরে থাকা কোনো চক্রান্ত এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। কেউ অনিয়ম করে বা দলবিরোধী কার্যক্রম করে পার পাবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য, দলে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা তো বিভিন্নভাবে দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেই হয়, সে ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।
সোর্স- জাগো নিউজ
Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: