
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতায় যাবার জন্য।
বিশ্লেষকগণ বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া এবং জনগণের জন্য রাজনীতি করার মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন অনেক বড় ব্যাবধান।
ক্ষমতায় যাবার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছিলো, সেই আন্দোলন অনেকটাই গতি পেয়েছিল গত বছর শেষের দিকে। সারাদেশে সভা সমাবেশ, পল্টনে সভা নিয়ে তাদের সমর্থকদের অনেকটাই চাঙ্গা করতে পেরেছিলো এ কথা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জ্ঞানের নিকট অতি দ্রুত সেই উজ্জীবিত মনোভাব ভাটা পড়তে বাধ্য হয়েছে।
বিএনপি তাদের আন্দোলনের জোয়ারের মধ্যে অনেক ভাবেই বিভিন্ন দফার কথা তারা উল্লেখ করে, যার মধ্যে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন হতে হবে এটাই ছিলো মূখ্য। উক্ত দাবির আলোকে ভিতরে ভিতরে তারা দীর্ঘদিন পশ্চিমা শক্তির সাথে লিয়াজো করার কাজটি সম্পন্ন করে বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু বিএনপি এটা বুঝতে পারেনি যে, পশ্চিমাদের এই বিষয়ে ডেকে আনাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কারন জনগণের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রেখে তারা নির্ভর করেছে পশ্চিমাদের উপর। যারফলে তাদের মূল্যবান সময় সেদিকেই ব্যয় হয়েছে বেশি।
বিএনপির এই আহবানে পশ্চিমারা সাড়া দিয়েছিলো, তবে সেটা বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে নয়, তাদের কথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অস্ত্র ব্যাবহার করে এই অঞ্চলে অতি মূল্যবান বাংলাদেশকে তাদের বলয়ে নেবার জন্য সকল কাজ সম্পন্ন করেছে। এবং এই কাজ করতে গেলে আন্তর্জাতিক মহলকে প্রমাণ দেয়াও তাদের জন্য অপরিহার্য ছিলো। সেই প্রমাণ দাখিল করেছে বিএনপি নিজের হাতে। বিভ্রান্ত মলক তথ্য তাদের পশ্চিমাদের হাতে তুলে দিয়ে পক্ষান্তরে তারা পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সেই উজ্জীবিত আন্দোলন থমকে গেছে। ইতিমধ্যে বেশ খোশ মেজাজে রাজনীতিতে সরব হতে দেখা গেছে খালেদা জিয়াকে। ঈদের দিনে বিএনপির মূল কমিটির সাথে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তার শরীরের অসুস্থতার কোন অবনতি না হলেও গতকাল তিনি বসুন্ধরা এভার কেয়ার হাসপাতালে রুটিন চেকাপ করাতে যান এবং সেখানে তিনি ভর্তি হন।
অনেকেই এই বিষয়টিকে একটু আলাদা ভাবে দেখতে চাইছেন। তাদের প্রশ্ন বিএনপির আন্দোলনে কেন ভাটা পড়লো, অন্যদিকে খালেদা জিয়া কেন হাসপাতালে ভর্তি!
বিএনপির আন্দোলন থমকে যাওয়ার কয়েকটি কারন -
১। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এর দ্বৈত নেতৃত্ব।
বিএনপির নেতাকর্মী এখন দ্বিধা বিভক্ত, কোন নেতৃত্ব তারা এখন অনুসরণ করবে। তারেক রহমান শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন করতে, অন্যথায় নয় এবং খালেদা জিয়া অনেকটাই নির্বাচনমুখি।
যারফলে তৃনমূল এবং কেন্দ্র সকল স্থানেই দ্বিধাবিভক্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে আন্দোলনের গতি থমকে গেছে।
২। পশ্চিমাদের নিকট হতে আঘাত পাওয়া।
বিএনপি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পশ্চিমাদের সাথে এতদিন কাজ করেছে, তাদের ডেকে নিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনার কুটনৈতিক চালের নিকট বিষয়টি যে সঠিক নয় সেটা বিএনপি বুঝতে পেরেছে। কারন বিএনপি কোন ভাবেই পশ্চিমাদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সরকারের উপর চাপিয়ে দিতে দেখতে পায়নি। বরং তারা সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের কথা বলেছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন থমকে গেছে।
৩। বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচন করার অভিপ্রায়
বিএনপির তৃণমূল এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ, এমন ধারণা জন্ম নিয়েছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে তাকালে তার প্রমাণ মেলে। আর তাই তারা চাইছে না আন্দোলন নামক বিষয়ে জড়িয়ে সময়কে অনিশ্চিত করে তুলতে।
খালেদা জিয়া কেন হাসপাতে ভর্তি
খালেদা জিয়া অসুস্থ, এতে কোন দ্বিমত নেই। সে সুস্থ থাকুন সেটাই কামনা। কিন্তু কোন শারীরিক অবস্থার অবনতি না হওয়া সত্ব্বেও তিনি হাসপাতালে গেলেন। এবং ভর্তি হলেন। অনেকেই এই বিষয়ের মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন। তারা বলার চেষ্টা করছেন, এই হাসপাতাল থেকেই কি খালেদা জিয়ার মাধ্যমে বিএনপির রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে? এখান থেকে খালেদা জিয়াকি চলে যাবে বিদেশে চিকিৎসার জন্য? ইতিপূর্বে খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা করাতে যেতে চেয়েছেন। এবার কি তাহলে তিনি বিএনপিকে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েই বিদেশে যাবেন?
হতে পারে অনেক কিছুই। তবে একথা ঠিক - অতিদ্রুত আমরা একটি ফলাফল পেতে চলেছি।
মো: তৈমুর মল্লিক
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: