• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, শেখ রবিউল আলমের তথ্য সন্ত্রাস

Nazmul Haque Bhuiyan
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৫৬ পিএম
বিএনপি,  কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, শেখ রবিউল আলম,  তথ্য সন্ত্রাস

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার #রিজার্ভ আছে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করতে থাকা বি এন পি'র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, শেখ রবিউল আলমকে ৭১ চ্যানেলের একটি টকশোতে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় উনাদের শাসনামল অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ কত ছিল?


তিনি উত্তর দিলেন সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের মত।


না, আমি বলছি না বিন্পি আমলে রিজার্ভ কম ছিল বলে আওয়ামী লীগও রিজার্ভ চিবিয়ে বা গিলে খেয়ে ফেলার লাইসেন্স পেয়ে যাবে। আমি কেবল চিন্তা করছি আজকে ৩৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ নিয়ে যারা আতঙ্কিত বোধ করছেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারা কার রানের চিপায় লুকিয়েছিলেন?


তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে বি এন পি'র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, শেখ রবিউল আলম গনমাধ্যমে বসে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এটা ইচ্ছাকৃত কিনা আমি অবশ্য জানি না। ২০০১ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৩০৭ মিলিয়ন অর্থাৎ  ১.৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০০৬ সালে সেটা ৩৮৪৮ মিলিয়ন অর্থাৎ  ৩.৮৪ বিলিয়ন ডলার হয়। [তথ্যসূত্রঃ https://www.datawrapper.de/_/kIaSD/]
তিনি হয়ত এটাকেই দ্বিগুন অর্থাৎ সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার বলে ফেলেছেন। ব্যাপার না, হাল্কা পিনিকে ছিলেন হয়ত।

 


অবশ্য বিশ বছর আগের মূদ্রারমান বা মুদ্রাস্ফীতির একটা ব্যাপারও থাকে। কিন্তু তারপরও হাওয়া ভবনের দূর্নীতি, তারেক-কোকো-মামুন গংয়ের অর্থপাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানের চেয়ে দশগুন কম (৩.৮৪ বিলিয়ন ডলার) রিজার্ভ নিয়ে তখন তো কেউ কোনো আওয়াজ করলো না! ব্যাপারটা কেমন যেন অস্বস্তিকর।


সাধারণত কোনো দেশের ৩ মাসের আমদানি বিল পরিশোধের জন্য রিজার্ভ থাকলে তা আদর্শ ধরা হয়। আমাদের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ৫ মাসের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করা সম্ভব। তাহলে সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার ধরেও সেটা দিয়ে কয় মাস আমদানী বিল দেয়া সম্ভব ছিল?


শেখ রবিউল আলম সেই প্রশ্নের উত্তর দেন নি। তবে প্রশ্নের উত্তর না দিলেও তিনি পিলে চমকানো একটা তথ্য আমাদের দিয়েছেন। সেই সময় সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নিয়েও নাকি আমাদের অর্থনীতি ভয়ংকর পরিমান শক্তিশালী ছিল। অথচ আজকে পয়ত্রিশ বিলিয়ন নিয়ে আমরা প্রায় শ্রীলঙ্কা হওয়ার পথে!


আসল ব্যাপারটা হচ্ছে সেই সময়ে আজকের মত শুক্কুরে শুক্কুরে আট দিনে জন্ম নেয়া এত পরিমান অর্থনীতিবীদ বাংলাদেশে ছিল না। গলীর মোড়ের চা দোকানের মামাও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বর্তমানে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অবশ্য এটা একটা ভালো দিকও বটে। জনগন সচেতন হচ্ছে। সচেতন হয়ে ওরা অতীত ভুলে বর্তমান ঘাটছে। না হলে তারা দেখতে পেত অতীতের ঠিক কোন সময়ে রিজার্ভ নেমে যাওয়ার কারনে বাংলাদেশ আমদানী বিল প্রথমবারের মত বাকী রেখেছিল।

রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ‘ভাবমূর্তি নষ্ট হবে’ বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মত এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। তখন অবশ্য দোষটা সদ্য ক্ষমতা থেকে সরে আসা আগের সরকার অর্থাৎ আওয়ামীলীগের ঘাড়েই চাপিয়েছিল বি এন পি সরকার। দোষ চাপানোটা সমস্যা না, যেহেতু লীগের শাসনামলে কমেছিল তাই দায় নিতেই হবে। কিন্তু শুধু নামার দায় দিবেন ওঠানোর কৃতিত্ব দিবেন না তা কিভাবে হয়? 


রিজার্ভের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। রিজার্ভ তখনই অতিক্রম করেছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভের স্বর্ণযুগের শুরুটা বলা যায় ২০১৫ সাল থেকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই। বেড়েই চলেছে অর্থনীতির এই সূচক।
https://bangla.bdnews24.com/economy/article1793210.bdnews
২০২০ সালে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ পাঁচ বার রেকর্ড গড়েছে। ২০২০ এর ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে। তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ অগাস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এই দেড় মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

 


আর করোনার মধ্যেই ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ উঠে যায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। এখন পর্যন্ত সেটাই বাংলাদেশের রিজার্ভের সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানির দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় ধাক্কা খায় বাংলাদেশও। কমে আসে রিজার্ভ। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সেই রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক অবস্থার কারনে এটা যে নেমে আসবে সে ব্যাপারেও আগে থেকেই বলা হচ্ছিল। এখন অনেকের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রিজার্ভ হঠাৎ কমে যাওয়ায় উনারা আকাশ থেকে পড়েছেন।

 


রিজার্ভ চিবিয়ে খাওয়ার দায় আওয়ামী লীগকে দিতে চাইলে সর্বোচ্চ লেভেলে ওঠানোর জন্য এই সরকারের অবদানটাও তো স্বীকার করতে হবে। সেটা পারবেন?
আপনার মাসিক আয় অপেক্ষা ব্যয় কম হলে মাস শেষে অ্যাপনি কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে পারেন। সেই সঞ্চয় থেকে আপনি যদি একটা বাড়ি বানাতে চান তাহলে কি সেটা খুব বেশি অনৈতিক কাজ হবে? তেমনি দেশের রিজার্ভের একটা অংশ যদি উন্নয়ন কর্মকান্ডে যায় তাহলে সমস্যাটা কোথায়? রিজার্ভ ধরা যাবে না এরকম কোনো সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন কি আছে কোথাও? 

 


আপনার সঞ্চয় থেকে বাড়ি বানানো শেষ হলে সেটার ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমিয়ে আপনি আবার সঞ্চয় শুরু করতে পারবেন। ঠিক তেমনি দেশের রিজার্ভ থেকে নিয়ে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে পায়রা বন্দর বা অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডে। পায়রা বন্দর চালু হলে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সেই রিজার্ভ বাড়াতেই তো সাহায্য করবে। রিজার্ভ কমে যাওয়াটা যেমন ঝুকির তেমনি রিজার্ভ একটা ফিক্সড এমাউন্টে স্থির থাকাটাও উন্নয়ন না হওয়াটাকেই ইঙ্গিত করে। রিজার্ভ জমে আছে মানে দেশের আমদানী-রপ্তানী কিছুই হচ্ছে না।

 


এটা বলার উপায় নাই যে বর্তমানে রিজার্ভের নিম্নমুখী প্রবনতাটা অশুভ লক্ষন নয়। কিন্তু এরমানে তো এটাও না যে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে বা সরকারের সেটা সামলাবার সামর্থ নাই। ভুলে গেলে চলবে না শেখ হাসিনার সরকারই রিজার্ভে সর্বোচ্চ রেকর্ড করতে পেরেছে। সুতরাং ভরসা রাখেন, পারলে এই লৌহ মানবীই পারবেন না হয় কেউ পারবে না। ধরাধামে বার পাচেক জন্ম নেয়া ৮ম শ্রেনী ফেল দ্বেষ-নেত্রীর তা সাধ্যেরও বাইরে।
তাছাড়া সারা জীবন বেআইনী হুন্ডিতে টাকা পাঠানো প্রবাসী ব্যাক্তিটাও যখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে হাহুতাশ করে তখন আর কি ই বা বলার থাকে!

 

বাঙ্গালাদেশের সাধারণ মানুষ রিজার্ভের জটিল অংক বোঝার চেষ্টা করেনা, জানার চেষ্টা করেনা। কোন রিজার্ভে, কত রিজার্ভে কোন সমস্যা সামনে আসে, কি তার চ্যালেঞ্জ এসব বিষয়ে ভাবেও না। সেই সুযো নিয়ে রবিউল আলমদের মতো মানুষেরা তথ্য সন্ত্রাসী করে বোকা বানায় সাধারণ মানুষকে । যা অতি সহজ । 

 

Nazmul Haque Bhuiyan 

 

 

 

 

 

 

 

Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ