
রিজার্ভ বাড়ছে শুনলে এদেশের একশ্রেণির লোকজন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতেন। তারা দেখি হঠাৎ হায়-হুতাশ শুরু করলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে শুনে। ব্যাপার কী? আগে তো ক্লিয়ার করেননি যে, রিজার্ভ বড় হওয়া মানে অর্থনীতির ইতিবাচক নির্দেশক এবং কমে যাওয়াটা নেতিবাচক প্রভাব।
এখন আপনারা যারা কথায় কথায় মাথাপিছু ইনকাম আড়াই হাজার ডলার বলে হাসেন, কৌতুক করেন, আগামীতে ইনকাম কমে আসলে কি খুশি হবেন? অবশ্য আপনাদের কাছে চারশো ডলার আর আড়াই হাজার ডলার এক কথা। বিদ্যুতের দুঘণ্টা লোডশেডিং নিতে পারেন না, অথচ একসময় বিদ্যুৎই থাকতো দৈনিক সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা। তাও তার ছোঁয়া দেশের ৩০ ভাগ নাগরিক পেত। পদ্মাসেতু নিয়ে হাসি মশকারা করা পরিচিত লোকজনও এখন বলছেন সেতু কি হাসিনার বাপের টাকায় করা হয়েছে? আমার মনে হয় রাজনৈতিক মূর্খ চেনার জন্য এই একটা লাইনই যথেষ্ট।
দুঃখজনক হচ্ছে এই মূর্খতার বিষবাষ্প তরুণদের উপর প্রভাব ফেলছে। তরুণরা রাজনীতি করবে, পক্ষ-বিপক্ষ থাকবে, সামগ্রিক সমাজের কথা ভাববে। কিন্তু দেশের অর্থনীতি, দেশের অর্জন, দেশের সামর্থ নিয়ে হাসি মশকারা করার মত প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণকে রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চর্চা করাকে কালচারে পরিণত করা এবং সেটা তরুণদের মধ্যে প্রতিহিংসা হিসেবে ছড়িয়ে দেয়ার যে রীতি তা সভ্য মানুষ তৈরি করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাঁধার সৃষ্টি করবে বলে মনে করি। যা এখন সরাসরি চর্চা হচ্ছে।
একটা দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় থাকে। যে সরকার যে কাজই করুক তার সুবিধা সকল নাগরিক ভোগ করে, জীবনমান সমৃদ্ধ করে, সেটা স্বীকার করার মধ্যে হেরে যাওয়ার কিছু নেই। আর স্বীকার করার জন্য কেউ বলেও না। কিন্তু বিপরীতক্রমে সেটাকে গুজব ও মিথ্যাকারে ছড়িয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাটা কি ঠিক রাজনীতি নাকি আদর্শিক অসুস্থতা?
পক্ষ-বিপক্ষের রাজনীতিটা আমাদের জাতীয় সমস্যা নয়। আদর্শিক অসুস্থতাটাই এদেশের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা। দুঃখজনক হচ্ছে এদেশে শিক্ষিত মূর্খই সংখ্যাধিক।
রিজার্ভ কমে আসা অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো খবর নয়। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির প্রভাব আর অর্থনীতির গতিবিধি তো বুঝতে হবে! চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ চাইবেন, আবার রিজার্ভও চাইবেন। আবার পারমানবিক বিদ্যুতেরও বিরোধিতা করবেন। এসব চতুর্মুখী আচরণ তো অসুস্থতাই। পারমানবিক বিদ্যুৎ জ্বালানি খরচ নামমাত্র। সেটা প্রতিস্থাপনটাই মূল খরচ। সেটার শক্তি জ্বালানি পুড়িয়ে আসে না, আসে পরমানুর পারস্পরিক আকর্ষণজনিত বল থেকে। সেটারও বিরোধিতা করলেন। জ্বালানি বিক্রেতা দেশগুলো কম দামে তেল বিক্রি করছে না। সরকার সিদ্ধান্ত নিলো চাহিদা কমিয়ে খরচ আগের সমান রাখবেন। সেটাও মানবেন না। সরকার এ জাতীয় সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে রিজার্ভ কমিয়েছে। এবার সেটা নিয়েও অযৌক্তিক কথা বলবেন।
মূলকথা হলো এই মানের নাগরিক নিয়ে একটা দেশ কখনও অগ্রসর হতে পারে না। অশিক্ষিত-অসভ্য জাতির রঁন্ধ্রে রঁন্ধ্রে সমস্যা। এদেরও আবার গণতন্ত্র দরকার! গণতন্ত্রকে আমি স্রেফ মূর্খের শাসন বলি। এটা কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বৈশ্বিক যত সমস্যা দেখবেন, সব গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত। চাইলে এখনও তালিকা করে দেখতে পারেন বিশ্বের গণতান্ত্রিক -অগণতান্ত্রিক দেশগুলোর গত পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক চিত্র। সবচেয়ে বড় উদাহরণ মধ্যপ্রাচ্য। আর এদেশের মানুষ তো সভ্যতা-ভব্যতায় আরও পিছিয়ে। এই উপমহাদেশে গণতন্ত্র ব্যাপারটাই বিপজ্জনক।
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: