• ঢাকা
  • বুধবার, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ২২ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  বুধবার, ৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ;   ২২ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ভারতকে দেখে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী চাইছেন ! এটা কত নম্বর চাল ?

তৈমুর মল্লিক
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৯ পিএম
ভারত , বাংলাদেশ ,  নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ,  রাষ্ট্রপতি , প্রধানমন্ত্রী ,

 

Khaleque Gharami  কৃতজ্ঞ খালেক ঘরামি ভাইয়ের নিকট - তিনি বলছেন, 
ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সে দেশের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর (আদিবাসী) দ্রোপদী মুর্মু।তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি।যিনি ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর জন্মগ্রহণ করেছেন। 

ভারতের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একজন সদস্য রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আমাদের দেশের অনেকেই ভারত থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন।শিক্ষণীয় বিষয়ে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হয়।তবে এখানে কে কার থেকে শিক্ষা নিল প্রশ্ন থেকেই যায়।


আমাদের দেশে প্রধান বিচারপতি পদে এসকে সিনহাকে আওয়ামীলীগ সরকার নিয়োগ দেয়।এসকে সিনহা ছিলেন নৃতাত্ত্বিক জাতি মনিপুরী সম্প্রদায়ের লোক।

সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে নারী প্রতিনিধি হিসেবে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আওয়ামীলীগের সরকার নিয়োগ দিয়েছিল।তারা দুজন মিলে জুডিসিয়াল ক্যু করার যারপরনাই চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। 


দেশের বাস্তবতার আলোকে দেশকে চিন্তা করতে হবে। 


আমি একটু যোগ করে কথা বলতে চাই  -

২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের পরে জন্মগ্রহন করেছেন বা তার ৭/৮/১০ বছর আগে জন্মগ্রহন করেছেন তাদেরই সম্ভবত ঘোড়াচাল হলো- "ভারত থেকে শিক্ষা নিন" ।  

কেন এই কথা বললাম ? কারণ এই তারিখেই পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো । কে সেই শান্তিচুক্তি করেছিলো জানেন ? না, কোন ভাবেই বক্রিদের দালাল দল বিএনপি, জামাত নয় । সেই চূক্তি করেছিলো সেই কান্ডারী যার নাম শেখ হাসিনা । 

অনেকে বলবেন, কি এমন বিষয় ছিলো, যার জন্য এই চুক্তিকে এতো গুরুত্ব দেয়া হয় ? 
ঠিক এই কারনেই আমি লিখেছি - তারাই ভারত থেকে  জ্ঞান নিতে বলবেন বাংলাদেশকে (নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রেসিডেন্ট হয়েছে বলে ) যারা তখনও জন্মই নেননি বা তার ৭/৮/১০ বছর আগে জন্ম নিয়েছেন । অর্থাত যাদের বয়স এখন ৩৫/৪০ এর মধ্যে । 

 

  • আপনারা দেখেননি - কিভাবে চট্টগ্রাম হাসপাতালে/সিএমএইচ এ গুপ্ত হামলার কারণে প্রত্যেকদিন সেনাবাহিনী, সেই সময়ের বিডিআর, সাধারণ বাঙালি ভর্তি হতো । 
  • আপনারা দেখেন নি, সাধারণ বাঙালিদের ঘরবাড়ি কি ভাবে প্রত্যেকদিন জ্বালিএ দেয়া হয়েছে । 
  • আপনারা দেখেন নি সেই সময়ের শান্তিবাহিনী নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কতটা হিংস্র হয়ে উঠেছিলো । 
  • আপনারা দেখেননি কি ভাবে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ম করে গাড়ির কনভয় দুরনিয়ন্ত্রীত/প্রেসার মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয়া হত। 
  • আপনারা দেখেন নি , সেনা ক্যাম্পে মাত্র ১০/২০ জন সেনা সদস্য কিভাবে শত শত শান্তিবাহীনির মোকাবেলা করতো । 
  • আপনারা দেখেন নি - কিভাবে সাধারণ বাঙালির মেয়েরা নির্যাতিত হতো । 


চলন্ত রাস্তায় চলমান শরীরের কানের পাশ দিয়ে, বুকের পাশদিয়ে, মাথার পাশ দিয়ে যখন একে৪৭ এর গুলি, স্মল আর্মসের গুলি সাই সাই করে যেতে থাকে, তখন বোঝা যায় , কেন এই চুক্তি এতো গুরুত্ব বহন করে । 


ভাবছেন এসব গল্প বলছি ? না , মোটেও নয়। আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষি হিসাবেই জবানবন্দী দিলাম । সেই বিষাক্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সামনে এসে বুক চিতিয়ে দাড়িয়েছিলো এই শেখ হাসিনা । অথচ খুনি জিয়া, অশিক্ষিত খালেদা জিয়া তারা তাদের শাসনামলে এসবই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে । আজ তারা ভারতের দোষ দেয়, শেখ হাসিনার দোষ দেয় । অথচ সেইদিন তাদের ক্ষমতা হয়নি ভারতের নিকট এর সমাধান চেয়ে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করার । 

অথচ তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই দীর্ঘদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান এবং এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান করে শেখ হাসিনা । 

যাইহোক , আসেন একটু ইতিহাস দেখি-
"দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান" এর তথ্য অনুসারে দেখা যায় - 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর, বিশেষ করে চাকমাদের ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। চাকমাদের তৎকালীন রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

রাজা ত্রিদিব রায় সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অংশ নেন । সেই বিপক্ষ অবস্থান ছিলো সশস্ত্র শত্রুতামূলক । পশ্চিম পাকিস্তানিদের সহায়তায় তিনি গঠন করেন রাজাকার বাহিনী, যার নাম দেওযা হয়েছিলো ত্রিদিব রাজাকার বাহিনী এবং স্বভাবিকভাবেই তিনি ছিলেন সেটির প্রধান কর্তাব্যাক্তি। এ রাজাকার বাহিনী নিয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থে সিদ্ধার্থ চাকমা লিখেছেন, … ‘উপজাতীয় রাজাকাররা এ সময় গভীর অরণ্যে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা সশস্ত্র ও সংগঠিত হয়ে শান্তিবাহিনী নামে সংগঠন গড়ে তোলে’ (পৃষ্ঠা- ৪৬) । 


২০০৩ সালে ত্রিদিব রায়ের আত্মজীবনীমূলক বই The Departed Melody -তে তিনি নিজেই রাজাকার হিসাবে তার কর্মকাণ্ড বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এসব অপকর্মের কারণে তিনি অনুতপ্ত তো নয়ই বরং গর্ব প্রকাশ করেছেন।

১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের উপকূল বরাবর তজমুদ্দিন এলাকায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ( চট্রগ্রাম থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে ) আঘাত হানে । ঘূর্ণিঝড়ে আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এত মানুষ প্রাণ হারালেও রাজা ত্রিদিব রায়, যিনি পার্বত্য চট্রগ্রামের ত্রাণ পরিচালন কাজের প্রধান ছিলেন , তিনি একবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি । উল্টো পশ্চিম পাকিস্তান যথেষ্ট ত্রান সহায়তা করেছে বলে চাপাবাজি করেন । (তথ্য: দ্য লাষ্ট রাজা অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান ৫৭-৫৮)


নিজেকে সাচ্চা পাকিস্তানি হিসেবে প্রমাণের কোনো উপায় বাদ রাখেননি ত্রিদিব রায়। তার নির্দেশ মেনে অনুগত চাকমা ও মিজোদের নিয়ে গড়া ব্রিগেড সরাসরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হয়ে লড়তে থাকে। মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটির নিয়ন্ত্রন নিতে সাহায্য করে তাদের। মুক্তিবাহিনী একে একে দখল হারায় বিভিন্ন স্থানের। ১৯ এপ্রিল বুড়িরহাটের প্রতিরক্ষা যুদ্ধে শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মুনসী আবদুর রউফ (বীরশ্রেষ্ঠ), অসম সাহসিকতায় মৃত্যুবরণ করে প্রাণরক্ষা করেন খালেকুজ্জামানসহ বাকিদের। ২৭ এপ্রিল নানিয়াচর এলাকায় তাদের আক্রমণে শহীদ হন ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের। ২৮ এপ্রিল মগরাজা মংপ্রু সেনের সহায়তায় খাগড়াছড়িতে বিপুল বিক্রমে লড়েও গুলির অভাবে পিছু হটতে বাধ্য হয় মুক্তিবাহিনী। ২ মে রামগড়েরও পতন ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী নিজে উপস্থিত থেকেও ঠেকাতে পারেননি এর পতন। [ তথ্যসূত্র: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ : প্রতিরোধের প্রথম প্রহর/ মেজর রফিকুল ইসলাম (পিএসসি)/পৃ: ৪২-৪৭ ]


ঘাতক-দালাল শিরোমনি গোলাম আযমের মতো ত্রিদিবেরও নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়েছিলো সরকার (১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় একটি তালিকা ছাপা হয় যেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তার অভিযোগে দালাল আইনে অভিযুক্তদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয় নুরুল আমিন, সবুর খান, গোলাম আযমসহ দালালদের সে তালিকায় ৮ নম্বরে ছিলো ত্রিদিব রায়ের নাম)। 

তাতে কি এসে গেছে তার। গোলাম আযমের মতো ত্রিদিব রায়ও বসে থাকেননি। পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য আর বাংলাদেশের প্রতি বিদ্বেষ সমানে চালিয়ে গেছেন।পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে তার ও তার অনুগতদের ইন্ধন নিয়ে '৭৩ সালে পত্রিকায় সিরিজ রিপোর্ট হয়েছে। সেই লোকটা মরে গেছে। পাকিস্তানের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবেই মৃত্যু হয়েছে তার। কিন্তু বাঙালীদের চোখে একজন পাকিস্তানী দালাল হিসেবে, যার ক্ষমা মৃত্যুতেও নেই। দেশে যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে, যেই অপরাধে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদরা বিচারের সম্মুখীন, সেই একই অপরাধে অপরাধী রাজা ত্রিদিব রায়ও। 

তার হাতে লেগে আছে বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফের রক্ত। ইফতেখার, শুক্কুর, কামাল, শফিক, ইলিয়াস, মামুনদের নৃশংস হত্যায় সহযোগিতার দায় তার কাঁধেও। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশে গণহত্যা-ধর্ষণ-বাঙালীদের বাস্তুহারা করার পক্ষে সাফাই গাওয়ার অপরাধ তার প্রমাণিত।

শেষ অবধি পাকিস্তান এই ত্রিদিব রায়কে "জাতীয় বীর" খেতাব দিতেও পিছপা হয়নি । 


আরো অনেক কিছুই আছে, এতটুকুই বুঝে নিতে বলবো বর্তমানে বাংলাদেশে যারা বাংলাদেশকে ভারত থেকে শিক্ষা নিতে বলছেন তাদের জন্য যথেষ্টই মনে হয় । 

এখন প্রশ্ন উঠতেপারে ত্রিদিব রায় সেই যুগ চলে গিয়েছে । এখন সন্তু লারমা বা অন্যকারো যুগ । 
অবশ্যই , এই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যেও অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে । কিন্তু তারা বিলীন হয়েছে ত্রিদিব রায় তথা শান্তিবাহীনি -তথা সন্তু লারমাদের অস্ত্রের নীচে । 

আর তাই নর্দমায় ফুল ভাষতে দেখলেই এটা মনে করার কারণ নেই - ফুল টা তুলে নিতে হবে । 

তেমনি ভারতে নৃতাত্ত্বিক গোষ্টির কেউ প্রেসিডেন্ট হয়েছে বলে - বাংলাদেশে তাদের থেকে প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী হতে হবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই । 

ঘুরে ফিরে সেই পাকিস্তান নিয়েই আবর্তিত এই সকল চরিত্র । 


এখন আসুন একটু বিস্তারিতে যাই - 

রাজাকার ত্রিদিব রায়ের যোগ্য পুত্র রাজা দেবাশীষ রায় এখন কোথায় কি করছে?

আপনি নিশ্চই জেনে থাকবেন ত্রিদিব রায় পাকিস্থানে স্থায়ী ভাবে বসবাস সহ পাকিস্থান কতৃক পুরস্কৃত রাজাকার ছিলেন।  
২০০৩ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বই The Departed Melody -তে ত্রিদিব রায় নিজেই রাজাকার হিসাবে তার কর্মকাণ্ড বিস্তৃতভাবে উল্লেখ করেছেন এবং এসব অপকর্মের কারণে তিনি অনুতপ্ত তো নয়ই বরং গর্ব প্রকাশ করেছেন তার বইয়ে। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ব্যঙ্গ করার পাশাপাশি পাকিস্তানী হানাদারদের গুণকীর্তন করেছেন। তার বইয়ে পাক হানাদারদের প্রশংসা করতে গিয়ে ত্রিদিব রায় লিখেছেন, On the way back, at Ranirhat, 18 miles from Rangamati, a number of very frightened people asked us when the army was going to take over these areas. They said they were suffering at the hands of the Mukti Bahini. We told them that the army would be coming at any moment. That evening at dusk the army, in launches and speedboats made a sort of miniature Normandy landing (the Allied landing in France of 6 June 1944) at Rangamati and swiftly took command of the situation (page-221). 

এছাড়া বিভিন্ন গ্রন্থে তার সম্পর্কে অকাট্য দলিল রয়েছে।  ১৯৭২ সালের জাতিসংঘের মিশনে বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা পালন করেই ত্রিদিব রায় ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে, প্রবন্ধ লিখে, বই লিখে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। গত ২০০০ সালের ৪ অক্টোবর পাকিস্তানি ইংরেজী দৈনিক ডন পত্রিকায় ‘চিটাগং হিল ট্র্র্যাক্ট : লেট জাস্টিস বি ডান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধ এবং ২০০৩ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ The Departed Melody তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। 

সোসাইটি ফর ন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড প্রোগ্রেস (এসএনআরপি) কর্তৃক গত ১ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মেঘনা প্রিন্টার্স, ঢাকা থেকে ‘প্রেক্ষাপট : পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়’ শীর্ষক প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র থেকে জানা যায়, শুরু থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা চাকমা রাজপরিবারের সদস্যসহ বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব সম্পন্ন অন্যদের মধ্যে কখনো প্রত্যক্ষ কখনো পরোক্ষভাবে যোগাযোগ ও সমন্বয়কের ভূমিকাও রক্ষা করেছেন ত্রিদিব রায়। যার পুরস্কার স্বরূপ ত্রিদিব রায় পাকিস্তানে আজীবন মন্ত্রিত্বের পদমর্যদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল মন্ত্রী, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত পর্যটন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ১৯৮১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত করে আর্জেন্টিনায় প্রেরণ, ১৯৯৫ সালের মে মাস থেকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ‘এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ’ হিসেবে নিয়োগ, ২ এপ্রিল ২০০৩ থেকে পাকিস্তানের দপ্তর বিহীন ফেডারেল মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ।


ফিরে আসি তার সুযোগ্য পুত্র দেবাশীষ রায় প্রসংগে।  পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শুরু থেকেই দেশে-বিদেশে পার্বত্যাঞ্চলের প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে বিশ্বজনমত গঠনে কাজ করছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংগঠন। 

এমনি একটি অপপ্রচার প্রসঙ্গে গত ১২ জুলাই ২০১১ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক কলামে ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী লিখেছেন, ‘‘৮০’র দশকের শেষ দিকে একদিন বিবিসি বাংলা বিভাগে কাজ করছি। ইংরেজিতে পাঠানো সংবাদ কিছু কাটছাঁট করে বাংলায় অনুবাদের কাজ। একটু পরেই ট্রান্সমিশন। সামনে একটা আইটেম দেখে চমকে উঠলাম- ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ আড়াই লাখ চাকমাকে বাঙালিরা হত্যা করেছে!’ তখন সম্ভবত পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের মোট সংখ্যাই ছিল আড়াই লাখ। আমাকেই ওটা সম্প্রচার করতে হবে! আর মাত্র ১০ মিনিট পর। ছুটে গেলাম পাশের রুমে, বিভাগীয় প্রধানের কাছে। পিটার ম্যানগোল্ড তখন বাংলা বিভাগের প্রধান। বললাম, ‘পিটার, এটা কোথা থেকে এসেছে? আড়াই লাখ চাকমা মেরে ফেললে তো সেখানে আর কোন চাকমা থাকে না। সমস্যাই খতম। তোমরা অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকায় যেমন করেছ।’ পিটার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সব্বোনাশ! হাতে একদম সময় নেই। হারি আপ! ওটা বাদ দিয়ে তুমি অন্য কোন আইটেম দিয়ে ট্রান্সমিশন শেষ করো।’


ট্রান্সমিশন শেষ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সবাই বসলাম। পিটার আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘কিন্তু ওটা তো এসেছে খুব বড় জায়গা থেকে!’
জানলাম ওই দিনই সকালে বিবিসি বুশ হাউসের পাশের দালানে অবস্থিত একটি দূতাবাসে নেদারল্যান্ডস থেকে কয়েকজন এসেছিলেন একজন চাকমা ‘নেতা’কে সঙ্গে নিয়ে। তাদের প্রেস ব্রিফিং থেকেই এই ‘রিপোর্টে’র উৎপত্তি। এভাবেই চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যার নিরন্তর প্রচারণা।”


ড. ফেরদৌস আহমদের এ অভিজ্ঞতার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের গণহত্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে অপপ্রচারের অসংখ্য  দৃষ্টান্ত রয়েছে। যার সাথে জড়িত রয়েছে দেশের এবং বিদেশের কিছু কুচক্রী মহল। 

ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের নামেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধী প্রচারণার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে বসবাসকারী তার পিতা রাজাকার ত্রিদিব রায় এবং তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজন যারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন তারাও তাকে উৎসাহ ও নানাবিধ সহায়তা করে যাচ্ছেন। আমাদের পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে নানা কারণে আগ্রহী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে অপপ্রচারে দেবাশীষ রায়ের সম্পৃক্ততা নিয়ে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। তবে ১৯৯২ সালে বিদেশ (তাইওয়ান) যাওয়ার প্রাক্কালে হজরত শাহ জালাল (রহ:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে) পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ির লোগাং-এ গত ১০ এপ্রিল ১৯৯২ তারিখে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ক্যাসেট, ছবি ও অনেক বিতর্কিত কাগজপত্র দেবাশীষ রায়ের নিকট হতে উদ্ধার করা হয়।


দেবাশীষ রায় ১৯৯৮ সালে ‘টংগ্যা’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ করে বাঙালি বিদ্বেষী ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য এনজিওগুলোর সমন্বয়ে হিল ট্র্যাক্ট এনজিও ফোরাম (এইচটিএনএফ) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। এর চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি নিজেই। সংগঠনটির বাঙালি বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড এবং পাহাড়ে জাতিগত বৈষম্য তৈরিতে ভূমিকা রাখার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে দেবাশীষ রায় একই উদ্দেশ্যে এএলআরডি নামে এইচটিএনএফ’র সদস্যদের নিয়ে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। একইভাবে এইচটিএনএফ এর আদলে প্রতিষ্ঠা করা হয় এইচটিএনএন নামের আরো একটি সংগঠন। অভিযোগ রয়েছে, যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর ২০০৫ সালে নির্মিত  ‘কর্ণফুলীর কান্না’ শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারীর পৃষ্ঠপোষক এবং ডকুমেন্টারীতে অন্যতম বক্তা ছিলেন দেবাশীষ রায়। যা পরবর্তীতে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।


এরকম অনেক গুনে গুণান্বিত দেবাশীষ রায়।  নিশ্চই তিনি বলতে পারবেন সন্তু লারমার সাথে তার সহ অবস্থান কতটা। ব্যবসায়ী অবস্থান কতটা। এমন দেবাশীষ রায় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটাকায় বিক্রি হতে পারে বিষয়টি দেখা অতি জরুরী।

দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত চাকমাদের মধ্যে নিজের কর্তৃত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে বরং তা ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, অরুনাচল, মেঘালয় ও মিজোরামে বসবাসরত চাকমাদের সাথে সম্মিলিতভাবে বৃহত্তর শক্তির জন্ম দিতে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে। 
একাধিকবার সফর করে ভারতের উক্ত পাঁচটি রাজ্যে বসবাসরত চাকমাদের যৌথ সংগঠন ‘চাকমা অটোনামাস ডিস্ট্রিক কাউন্সিল (সিএডিসি)’ এর সাথে সংস্কৃতিক ও ভাবের আদান-প্রদানের নামে দেবাশীষ রায় ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা করছেন বলেও তথ্য রয়েছে ‘প্রেক্ষাপট: পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে।


সারাংশে এটাই বলতে পারি - একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজিনয় দেশ বিরোধী চক্র। ভারতে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছে, আর তাই সাথে সাথে লুফে নিয়ে ঘোড়ার চাল চেলে দিয়েছে তারা । অথচ অতি মানবিকতা যে চক্রান্তের সামীল সেটা যে দূর থেকেও বোঝা যায় - সেটা হয়ত তারা বুঝতে চায় না । 

 


মোঃ তৈমুর মল্লিক 
কলামিস্ট 

দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন 
প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক 

 

 

Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ