
শাহীনুর ইসলাম নয়নঃ
মাইগ্রেশনের দাবিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। রোববার ২১ আগস্ট সকাল দশটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ, শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের আবেদনের কাঙ্খিত জবাব এবং সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সি.এম.ই ভবন প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এসময়, কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অতিদ্রুত শেষ করার দাবি জানান। জানা যায়, কেয়ার মেডিকেল কলেজের ২০১৭-১৮ সেশন হতে ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে এগুচ্ছে। মিথ্যা কাগজপত্র দেখিয়ে তাদের ভর্তি করা হয় বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময়, কলেজ কর্তৃপক্ষের এই মিথ্যাচারের শাস্তি চেয়েও শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জীবন আজ ধ্বংসের মুখে। তারা এই মিথ্যাচার থেকে মুক্তি চান বলেও জানান। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ-কে বাঁচাতে মাইগ্রেশনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি না মানা হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে, চলতি মাসের গত ৫ আগষ্ট থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকশূন্য বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন বিহীন কলেজ, ইউটিউব দেখে চিকিৎসক হওয়ার পরামর্শ এবং শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষার নামে প্রতারনাসহ নানা অভিযোগ এনে মাইগ্রেশনের দাবিতে কেয়ার মেডিকেল কলেজের সামনে ৫ আগষ্ট মানববন্ধন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা কলেজের নানা অনিয়ম ও প্রতারনা তুলে ধরে বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত অন্য কোন মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের দাবি জানান।
এর আগে, গত (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে কেয়ার মেডিকেল কলেজের সামনে মাইগ্রেশনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কলেজের নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, আমরা মেডিকেলের শিক্ষার্থী। ভবিষ্যতে আমরা এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা দিবো। আমরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। ভর্তি হওয়ার পর থেকে দেখি কলেজে কোন শিক্ষকই নেই। তারা পরিক্ষার ৪/৫ দিন আগে গেষ্ট টিচার এনে শুধুমাত্র পরিক্ষা নিয়ে আমাদের কোর্স শেষ করে ফেলা হয়। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যখন আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে যাই। তখন আমাদেরকে ইউটিউবে ভিডিও দেখে চিকিৎসক হওয়ার পরামর্শ দেয়। বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন আনার কথা বললে বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় নিতে থাকে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ কতোবড় প্রতারক হলে গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাকে ব্যবসার হাতিয়ার বানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের এমন পরামর্শ দিতে পারে তা নতুন করে ভাবার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারে ২০১৮ সালের পর থেকে এই মেডিকেল কলেজটির বিএমডিসির কোন রেজিষ্ট্রেশন নেই। কলেজের এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে লিখিত আকারে কলেজের অনিয়ম তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিএডিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগুলো হলো-
• আমাদের কলেজের ২০১৭-২০১৮ সেশন হতে ২০২০-২০২১ সেশন পর্যন্ত কোনাে ছাত্রছাত্রীর বিএম এবং ডিসি এর অনুমােদন নেই। ২০১৬-২০১৭ সেশনের ভর্তির পরে ২০১৭-২০১৮ সেশন হতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রিটের ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ২০১৭-১৮, ২০১৮১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ সেশন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। বিগত বছরগুলােতে রিটের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নেওয়া হলেও এবছর ২০২১-২০২২ সেশন ভর্তি কার্যক্রম পুরােপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরদের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে বিএম এবং ডিসি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কথা বললে তারা আমাদের বরাবরের মতই রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দেয়।
• ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা আগষ্ট ২০২১ইং এ চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। পরবর্তীতে নভেম্বর ২০২১ইং থেকে তাদের ইনৰ্টানশিপ শুরু করার কথা থাকলেও বিএম এবং ডিসি এর রেজিস্ট্রেশন না থাকায় বিগত নয় (০৯) মাসেও তারা ইন্টানশিপ শুরু করতে পারেনি।
• ভর্তির পর থেকে বিভিন্ন ধরনের নাজুক ও চিকিত্সা শিক্ষার অনুপযােগী পরিবেশের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিএম এবং ডিসি অনুসারে আমাদের কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, একাডেমিক ও ক্লিনিক্যালের প্রতি বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, একাডেমিক ও ক্লিনিক্যালের প্রতি বিষয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিভাগীয় প্রধান, লেকচারার, সিএ ও রেজিষ্টার নেই।
• নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে বেড নেই। অধিকাংশ সময় সকল ওয়ার্ড রােগীশূন্য থাকে। তাদের পূর্নাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার ও ICU নেই এবং CCU ও NICU থাকেলও সেখানে অপারেশন ও ভর্তি হওয়া রােগীর সংখ্যা নগন্য। তাদের মেডিকেলে কোনাে রােগী নেই। আমাদের কোনাে ক্লিনিক্যাল ক্লাস হয় না। প্রফেশনাল পরীক্ষার জন্য রােগী ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়। কলেজ ভিজিটের সময় কর্তৃপক্ষ রােগী ভাড়া করে আনে এবং কেয়ার নার্সিং কলেজের ছাত্রছাত্রীদের রােগী সাজিয়ে দেখানাে হয়।
• নীতিমালা অনুসারে আমাদের পর্যাপ্ত ফ্লোরপ্লেস, গ্যালারী রুম এবং অবকাঠামাে নেই। যেগুলাে রয়েছে। সেগুলাে একই সাথে মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কক্ষ স্বল্পতার জন্য মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস, আইটেম (পরীক্ষা) লাইব্রেরী ও কনফারেন্স রুম এ নেয়া হয়ে থাকে।
• হাসপাতালের ইনডোর এ পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও রোগী নেই এবং আউটডোর এ কোনো চিকিৎসক থাকেন না যা আমাদের হাতে কলমে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ব্যাহত করে।
• হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী যেমনঃ অ্যাম্বুলেন্স, উন্নত অপারেশন থিয়েটার, ল্যাপারোক্ষপি, এনডোস্কোপি, সিটি স্ক্যান, এম আর আই ইত্যাদি নেই। অত্র বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বার বার অবগত করলেও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
• শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠ একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী; যেমন- আলাদা রিডিং রুম, ল্যাব ফ্যাসিলিটি, ল্যাব পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান মাইক্রোস্কোপ, এনাটমিক্যাল, প্যাথলজিক্যাল, ল্যাবরেটরি সামগ্রী ও পূর্নাঙ্গ ডিসেকশন রুম নেই।
• স্থায়ী ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। প্রফেশানাল পরীক্ষার সময় ভাড়া করে লোক আনা হয়।
• আমাদের ওয়ার্ডে কোনো রোগী নেই, আমাদের হাতে কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করার পর তারা আমাদের YouTube থেকে শিখে নিতে বলে।
• ভর্তির সময় আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে বললেও পরবর্তীতে এতগুলো বছরেও তা দৃশ্যমান হয় নি এবং বিভিন্ন সময় আবাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের অনেক হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এখানে সকল ছাত্র-ছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এবং হুমকির মূখে। আমরা প্রায় সকলেই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই আমাদের বিষয় সদয় বিবেচনা করে আমাদের সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর জন্য আমাদের মাইগ্রেশন করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জ্ঞাপন করছি।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। একই সাথে যতদিন পর্যন্ত মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা না হবে ততদিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারী জানান।
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: