• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ;   ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি (যানবাহন ক্রয়ে পুলিশ/গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স)

তৈমূর মল্লিক
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: সোমবার, ০৯ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:২৮ পিএম
খোলা চিঠি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা , নিরাপদ জীবন, নিরাপদ দেশ, যানবাহন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 

সময়, পরিস্থিতি, স্থান বিবেচনায় নিয়ে দেশের অভ্যান্তরে অনেক পুরাতন প্রচলন ভেঙে দিয়ে নতুন আইন বা প্রচলন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলেই মনে হয় । আজকের লেখায় আমি বলতে চাই যন্ত্রচালিত যানবাহন প্রসঙ্গে । 


গত দুইদিন আগে মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে - শুধুমাত্র ঈদকে উপলক্ষ্য করে বেপরোয়া মটরবাইক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে ৬০ টি তাজা প্রাণ । বাস্তব বিবেচনায় নিলে হয়তো এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। যদি মৃত্যু পর্ব বাদ দেই তাহলে সারাদেশে হাসপাতালের বিছানায় নিশ্চিত পঙ্গুত্ব বরন করার অপেক্ষায় কতজন তার পরিসংখ্যান আমরা জানিনা । বাংলাদেশের পারিবারিক অসুস্থ প্রতিযোগীতা এখন বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । এর মূল কারন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা । যে ব্যাক্তির মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা সে কিস্তিতে মটরবাইক ক্রয় করতে সবার আগে লাইন দেয় শোরুমে । সেই সাথে রয়েছে ব্যাংক লোন, ব্যাংকের ক্রিডিট কার্ড ব্যাবসা । অসুস্থ এই প্রতিযোগীতার দায় সম্পূর্ণ পরিবারের। সরকারের দায়িও ছিলো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এনে দেয়া , কিন্তু সেই সুযোগ কোন পরিবার কি ভাবে খরচ করবে সেটার দায় পরিবারের । মেকি চাকচিক্য, সন্তানকে শিক্ষা অর্জনে প্রতিযোগীতায় না নামিয়ে ছোট বেলা থেকে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয় ভালোবাসার নামে অসুস্থ চিন্তাশক্তি । যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, সন্তান যখন কৈশরে পদার্পন করে । পরিবারের জন্য সন্তানের প্রেসার তখন হয় বুমেরাং । সন্তান ছোট বেলা থেকে যা শিক্ষা পেয়েছে, কৈশরে এসেই সে তার শিক্ষাকে অধিকার হিসাবে ধরে নিয়ে বাবা মা এর প্রতি যে প্রেসার সৃষ্ট করে- তার ফলাফলে কি অবস্থা হয়, কত বাবা সন্তানের হাতে খুন হয়, কত মা সন্তানের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তার হিসাব আসলেই আমরা কেউ কখনও করিনা । নিজেদের জীবন বাঁচাতে সন্তানের নিকট জিম্মি হয়ে পড়া পরিবার তখন নগদ টাকায় না হলেও কিস্তির ডামাডলে মটর বাইক সহ অনেক বিষয় সন্তানের হাতে তুলে দেয়, আদেও যার কোন প্রয়োজন নেই। আদেও যার কোন ভিত্তি নেই । 
 

অন্যদিকে বলার অপেক্ষা রাখেনা - দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতি পৌছে গেছে প্রতিটি ঘরের রান্নাঘর অবধি । নেতা, এলাকার দাদাদের চাহিদা মেটাতে, তাদের ছুঁড়ে দেয়া অবৈধ টাকা দিয়ে ফুর্তি করতে মটরবাইক একটি প্রয়োজনীয় নয়, সৌখিন ও স্ট্যাটাসের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও চুপ থাকে কারন বিষয়টি রাজনৈতিক । হেলমেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মটরবাইক রেজিষ্ট্রেশন এসব নিয়ম , আইন পদদলিত হয়ে মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে সামনে আসে। কোন প্রকার জবাদিহিতা না থাকার কারণে একটি কিশোর তার যৌবনে পদার্পন করে অপ্রতিরোধ ও বেপরোয়া চরিত্র নিয়ে । কৈশরে পাওয়া সেই অনৈতিক স্বাহীনতা তখন তার কাছে হয়ে যায় ন্যায্য অধিকার । শুরু হয় তার পক্ষ থেকে আইন ভাঙার খেলা । যার মূলে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে একটি পরিবার, এরপরেই দুর্গন্ধযুক্ত রাজনীতি । অথচ ছোট বেলায় তাকে ভালোবাসা নামক অনৈতিক বিষয়ে নিরুৎসাহিত করলে হয়তো অকালে চলে যাওয়া সন্তানের জন্য কান্না শেষ সম্বল হত না । 


যে চলে যায়, সেতো চলেই যায়। কিন্তু যে পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকে? তার বোঝা পরিবার , সমাজ, এই দেশ আমরন বয়ে যেতে হয় । আর এই সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন সেই পরিবার, সেই সমাজ, সেই দেশ কোথায় পাবে সে শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত তরতাজা প্রাণ? কোথায় পাবে শক্ত দুটি হাত ? কোথায় পাবে উর্বর মস্তিস্ক ? 
এখন মটর বাইকের কথা বাদ দিয়ে যদি ব্যাক্তিগত গাড়ির দিকে তাকাই , তাহলে মধ্যবিত্ত থেকে উপরের দিকে যাবার জন্য যে অসুস্থ পরিবেশ দেখতে পাই সেখানেই খুঁজে পাই দুর্নীতি নামক বিষয়কে । একটা পরিবারে যতজন সদস্য ততোটা গাড়ি না হওয়া পর্যন্ত স্বামী থাকে কর্মস্থলে দূর্নীতিগ্রস্থ, স্ত্রী থাকে মানুষ খেকো রাক্ষসী । 

 

  • অসুস্থ প্রতিযোগিতা
  • সামাজিক মর্যাদা দৃশ্যমান করা
  • একজনের উন্নতি অন্য জনের সহ্য না হওয়া 


এই ৩ টি বিষয় একত্রিত করলে দেখতে পাই যোগ্যতা অনুসারে আয়ের বহির্ভূত আয়ের চাকচিক্য, দুর্নীতির বটবৃক্ষ, হিংস্র একটি পরিবার, সৌখিনতা, অর্থনীতিকে একমুখী করার সকল অপকৌশলে লিপ্ত থাকা ইত্যাদি । প্রয়োজন আর সৌখিনতা, লোকদেখানো ও সামাজিক মর্যাদা দেখিয়ে বেড়ানোর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে বিষয় কাজ করে তার নাম অহংকার । এই মুহুর্তে পরিসংখ্যান নিলে সরকার খুঁজে পাবে হাজার হাজার , লক্ষ লক্ষ পরিবার যাদের জনপ্রতি ব্যাক্তিগত বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ি রয়েছে । যার কোন প্রয়োজন নেই । থাকার কথা নয় । এসবই এসেছে উল্লেখিত কারণে । 
 

গণপরিবহনের ব্যাপারে কিছুই বলবোনা, কারন এটা প্রয়োজন তবে অবশ্যই সরকারী নীতিমালার আলোকে । কারন একটি গণপরিবহনের সাথে সম্পর্ক রয়েছে ব্যাবসা বানিজ্য, যোগাযোগ সবকিছু । 
উল্লেখিত সকল বিষয়কে একত্রিত করলে দরকার সমপরিমান যোগ্যতা সম্পন্ন রোড সিগন্যাল জ্ঞানে দীক্ষিত একজন ভালো ড্রাইভার । যার মধ্যে নূন্যতম শিক্ষা হলেও থাকতে হবে । কিন্তু বাংলাদেশের আলোকে ড্রাইভারদের দিকে দেখুন- এক একজন তাজা বোমা স্বরূপ । জ্ঞান বিজ্ঞান দক্ষতা যোগ্যতা এসব কোন বিষয় নয় । কোন ভাবে লাইসেন্স বা লাইসেন্স বিহীন ভাবে ড্রাইভিং সিটে বসতে পারলেই হলো । 

 

উল্লেখিত বিষয় ভেঙে পর্যালোচনা করলে এবং এই গ্রোথ অব্যাহৎ থাকলে উড়াল সেতু বলি, ফ্লাই ওভার বলি, বাইপাস রোড বলি, মেট্ররেল বলি সব কিছু যদি ১০ গুণ আকারে তৈরি হয় তখনো এই জানজট নিরসন সম্ভব নয় । কারন জবাব্দিহিতার বাইরে গিয়ে, নীতিমালার বাইরে গিয়ে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা সাথে নিয়ে, সোসাইটিতে সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শন করতে গিয়ে যন্ত্র চালিত যানবাহন প্রতিদিন যে সংখ্যায় রাস্তায় যোগ হচ্ছে তার একটা পরিসংখ্যান করতে সরকারকে বিশেষ অনুরোধ করছি । পরিসংখ্যান খুঁজতে গেলে যে সংখ্যায় রেজিষ্ট্রেশন করা যানবাহন পাবেন সারা দেশে, তার কয়েকগুন বেশি পাবেন রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি । আর এই সবই রাষ্ট্রীয় অর্গান ভিত্তিক বিশেষ আয়ের রাস্তা । 


তারমানে শুধুমাত্র একটি বিষয় - কতদিকে ডালপালা মেলে অনৈতিক বিষয়কে, ধ্বংসাত্বক বিষয়কে প্রমোট করছে সেটা কল্পনারও বাইরে । তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি লিখতে বাধ্য হলাম । এবং অতি সাধারণ হিসাবে এটুকু বলতে চাই - মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যানবাহন ক্রয়ক্ষেত্রে অবশ্যই পুলিশ/গোয়েন্দা ক্লিয়ারেন্স এর ব্যাবস্থা নিন । এবং সেটি অবশ্যই প্রশ্নাতীত পন্থায় । 

 

  • যানবাহন ক্রয় কালে ক্রেতাকে অবশ্যই যানবাহন ক্রয়ের প্রয়োজনীয় কারন এবং তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব বিবরণী উপস্থাপন বাধ্যতা মূলককরণ , পরিবারে মোট গাড়ির সংখা নিরুপন ইত্যাদি যে সকল বিষয় যৌক্তিক  সেগুলো যাচাই বাছাই করে গাড়ি ক্রয়ের অনুমতি সরকারী ভাবে দাপ্তরিক করুণ । 
  • ইতিপূর্বে যাদের পরিবারে মটরবাইক সহ অন্যান্য যানবাহন মোট সংখ্যায় চলছে , তাদের হিসাব প্রস্তুত করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যানবাহন বাজেয়াপ্ত করুণ/প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিন । 

পরিবার যখন অপারগ হয়, শিক্ষা যখন ফেরাতে না পারে, নৈতিকতা যখন নিজেদের গন্ডি সীমাবদ্ধ করতে না শেখায়, তখ সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য । আর সরকার যখন দায়িত্ব নেবে সেই দায়িত্বে মানবিকতা বলতে কিছুই থাকবে না , থাকবে বাস্তবতা । সবাই যখন অপরাগ হয়, তখন সরকারকেই লাঠি হাতে এগিয়ে আসতে হবে ।  জনগণ সেখানে কি বললো তাতে কিছুই যায় আসে না । কাউকে না কাউকেতো নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে । আর অবশ্যই সেটা সবার আগে স্বার্থ রক্ষা করবে উক্ত পরিবারের, উক্ত সন্তানের । যদিও তারা শুরুতে হোঁচট খাবে । বেঁচে যাবে প্রাণগুলো । 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার । আধুনিক বাংলাদেশে আধুনিক মানুষ চাই, আধুনিক সেজে থাকাকে দমন করুণ । আমি বোঝাতে পেরেছি কিনা জানিনা । ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘায়ু করুণ ও সুস্থতা দান করুণ । 

 

 


মোঃ তৈমুর মল্লিক 
প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক 
দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন

 

 

Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ