• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।

খালেক ঘরামি
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:২১ পিএম
মুক্তিযুদ্ধ,  আমরা স্বাধীন,  সার্বভৌম , বাংলাদেশ

 

প্রতিনিয়ত নানান নতুন অভিজ্ঞতা জমা হচ্ছে। এর দু'একটি না বলে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। প্রতিদিনের মতো আজো আমার চেম্বারের দরজাটা খোলাই ছিলো। কি একটা কাজ করছিলাম,চোখ ছিলো টেবিলে ফাইলের দিকে। দু'জন মানুষ সরাসরি ঢুকে পড়লেন। বললাম-
- জি বসেন
একজন বসতে বসতে বললেন- বাবা আমরা মুক্তিযোদ্ধা।উঠে দাঁড়িয়ে সরাসরি তাকালাম চোখের দিকে। ষাটউদ্ধ পাকা দাড়িওয়ালা দু'জন মানুষ।হাত মিলিয়ে বললাম-বসেন।
-কি করতে পারি আপনাদের জন্য একটু বলবেন প্লিজ?
-আমার একটা মিসকেসের তদন্ত অনেক দিন ধরে নায়েবের কাছে আছে।
-জি। কত নম্বর মিসকেস?কোন মৌজা?
-....নম্বর মিসকেস...মৌজা
ফোন করলাম...( সময় নষ্ট করার সময় কোথায়! )
-নায়েব সাহেব...নম্বর মিস কেসের তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন?
-স্যার একটু দেখে বলি স্যার?
- জি দেখেই বলেন।
-(একটু পর) পাঠাইনি স্যার।
- ok. কাল অবশ্যই সরেজমিন তদন্ত করতে যাবেন।পরশু আমার কাছে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবেন। আর হ্যা- জনাব... একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।এটা উনার নিজের মিস কেস।
- জি স্যার জি স্যার
সামনে বসা একজন ভদ্রলোক বলে উঠলেন অনেক ভালো লাগলো স্যার।
- জি থ্যাংক ইউ।
আমার অফিস সহযোগী কে ডাকলাম
- এই সায়েম
- জি স্যার
-আমাদের চা দাও। সাথে বিস্কিটও দিও।


সায়েম অবাক হয়ে চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ঘটনাটা কিছুই নয়। পূরবাচল সিটি, জলসিঁড়ি প্রকল্প ও শিল্প এলাকা হওয়ার সুবাদে প্রতিদিন এখানে প্রশাসন,পুলিশ, জুডিশিয়ারি ও সেনাবাহিনীর অনেক উরধতন কর্মকর্তাগন এসে থাকেন।অধিকাংশ সময় তাদের কাউকেই এক কাপ লাল চা'য়ের বেশি কিছুই আপ্যায়ন করানো হয় না। এই প্রথম কাউকে চায়ের সাথে বিস্কিটও দিতে বলা হলো সেটাই সায়েমের চোখ সরু হবার কারন,বুঝলাম। সে দাড়িয়েই ছিলো।জিজ্ঞেস করলাম-
- তুমি কি জানো, আমি এই চেয়ারে কেনো বসে আছি?
সে নিরুত্তর।
আবার বললাম-তুমি কি জানো,কেনো তুমি চাকরি পেয়েছো?


সায়েমের চোখ আরো সরু হলো। কিন্তু নিরুত্তর। উত্তর টা আমি নিজেই দিলাম।বললাম-
এই মানুষ গুলির জন্য। উনারা যদি সেদিন জীবনবাজি না রাখত তাহলে হয়ত কোনদিনো এই চেয়ারে আমার বসা হত না। তোমারও চাকরি হত না।যাও খুব ভালো করে চা বানাও সাথে বিস্কিটও দাও।


এবার তাকালাম সামনে বসা মানুষ দুটোর দিকে খুব খুওব অবাক হলাম।একজন শুধু হাত দিয়ে অন্যজন পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে চোখ মুছছেন। পরিস্থিতিটা সাভাবিক করতে মুক্তিযুদ্ধে আমার মা'য়ের একান্ত ব্যক্তিগত লড়াইয়ের গল্পটা বলতে শুরু করলাম। মার্চ এর শেষ দিকে আমার মা তখন গর্ভবতী। মেঝো ভাইকে পেটে নিয়ে কত জায়গায় যে পালিয়ে বেড়িয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।শেষ দিকে মা গরুর গাড়ী ছাড়া কিছুতেই চলতে পারত না।একদিন তীব্র শীতের এক মধ্যরাতে গাড় অন্ধকার একটি বাঁশঝাড়ের ভেতর জন্ম নিল মেঝো ভাই। চারিদিকে নিঃশব্দ নিস্তব্ধ নীরবতা। থেকে থেকে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর গুলির আওয়াজ। সেই ভয়াল রাত্রে সব কিছু নিরাপদ রাখতে- আমার মা তার অজস্র কষ্টের ফসল সদ্যজাত সন্তানের প্রথম কান্না মুখে হাত দিয়ে চেপে রেখেছিলেন কিনা আজও আমি তা জানতে চাইনি!


আমার গল্প শেষ হবার আগেই সামনে বসা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভেজা চোখে তাঁর পাঞ্জাবির বোতাম খুলে বাঁ কাঁধে বুলেটের দাগ দেখালেন। কি একটা বলতে বলতে উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন তিনি। আমার চোখও ভিজেছিল কিনা জানিনা। শুধু জানি,হে বাংলাদেশ!এই মানুষ গুলির ঋণ তুমি কোনদিন শোধ করতে পারবেনা।সম্ভব নয়।
লিখেছেনঃ মো: সাইদুল ইসলাম সাঈদ,সহকারী কমিশনার(ভূমি)। 


ফুটনোটঃ 

মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।যাদেরকে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই শক্তিকে চিরকালই ঘৃণা। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার আলবদর, আল শামসের উত্তরসূরী জামায়াতে ইসলামী নতুন করে,নতুন নামে সংগঠিত হতে চেষ্টা করছে।আর তাতে ক্ষমতাসীন মহলের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে।বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রশ্নে যারাই আপোষ করবে তাদেরকেও ঘৃণা। 

 


Khaleque Gharami

 

 

 

Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক

খোলা-কলাম বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ