
ভারতের রাজেস্থানে অবস্থিত পুরান উদয়পুর শহর। সেখানে কানাইয়া লাল নামের এক হিন্দু দর্জির দোকানে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে দুইজন মুসলিম যুবক (টুপি এবং পাঞ্জাবী পরা) কাস্টমার হিসেবে ঢোকে। যুবকদ্বয়ের একজন পোশাক বানানোর জন্য দর্জি কানাইয়াকে মাপ নিতে বলে। কানাইয়া ফিতা নিয়ে যুবকের শরীরের মাপ নেয়া শুরু করলে সাথে থাকা আরেক যুবক পাশে রাখা চেয়ারে বসে মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ভিডিও করতে থাকে।
দর্জি প্রথম যুবকের পুরো মাপ কাগযে লিখা শেষ করে পেছনে ফিরতেই যুবকের হাতে উঠে আসে লুকিয়ে রাখা চা-পা-তি। প্রচন্ড আক্রোশে পেছন থেকে কো-প বসায় কানাইয়ার ঘাড়ে। হঠাৎ আক্রমনে থতমত খেয়ে বিস্মিত কানাইয়ার মুখ দিয়ে কেবল প্রশ্ন বেরিয়ে আসে, "আরে ভাই কি হয়েছে? কি হয়েছে? মারছো কেন? আমি কি করেছি?"
আততায়ী যুবকের মুখে কোন কথা নাই৷ কানাইয়ার শার্টের কলারটা সে এবার চেপে ধরে একহাতে। প্রচন্ড টানে একরত্তি শরিরের কানাইয়াকে সোজা দাড় করায়। এবার সামনা সামনি আরেক হাতে ধরা চা-পা-তি দিয়ে কানাইয়ার মাথায় গলায় এলোপাথাড়ি কো-প বসাতে থাকে। অসহায় কানাইয়া ব্যার্থ চেষ্টা চালায় মাথাটা চা-পা-তির আঘাত থেকে বাচাতে। পারে না। দুইজনের ধস্তাধস্তিতে চেয়ারে বসা অন্য যুবকের হাত থেকে ভিডিও করতে থাকা মোবাইলটা মাটিতে পড়ে যায়। বাদবাকি ভিডিওতে আর কিছুই দেখা যায় না। পুরো স্ক্রিন কালো৷ কেবল ভেসে আসতে থাকে শব্দ।
কানাইয়ার ভয়ার্ত গলার আওয়াজ, "আমি কি করেছি? কেন মারছো ভাই? আমি তো কিছু করিনি।"
কিছুক্ষণ পর সেই কন্ঠও আর শোনা যায় না। স্রেফ চাপা গোঙানি, সাথে চা-পা-তি চালানোর বিভৎস থ্যাপ থ্যাপ আওয়াজ। কসাইর দোকানের পাশ দিয়ে হেটে গেলে যেমন গোস্ত কাটার আওয়াজ পাওয়া যায় ঠিক তেমন। ততক্ষন কো-পা-তে থাকে যতক্ষন কানাইয়ার দেহটা নিথর না হয়ে যায়।
কাজ শেষ করে দুই যুবক নিজেদের বক্তব্য রেকর্ড করে হত্যাকান্ডের পুরো ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেয়৷ সেখানে টুপি পরা মোচ ছাড়া বিশাল দাড়ি ওয়ালা দুই যুবককে দেখা যায়। যে যুবককে ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল কো-পা-তে সে সালাম দিয়ে বক্তব্য শুরু করে। পাশে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বসা তার সঙ্গী। ভিডিওতে সেই খুনী বলে,
"আস-সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। আমি মোহাম্মদ রিয়াজ আনসারী আর এই আমার বন্ধু গৌস মোহাম্মদ। উদয়পুরে যে দর্জি ছিল তার ক-ল্লা ফেলে দিয়েছি। লাব্বায়েক ইয়া রাসুল আল্লাহ, বাচবো আপনার জন্য মরবোও আপনার জন্য। নরেন্দ্র মোদি শুনে রাখ, আগুন তুই লাইগিয়েছিস সে আগুন নেভাবো আমরা। ইনশাল্লাহ আমি রবের কাছে দোয়া করছি (হাতের চা-পা-তি দেখিয়ে) এই ছুরি তোর গলা পর্যন্ত পৌছাবে। লাব্বায়েক ইয়া রাসুল আল্লাহ। জয়পুরবাসী স্লোগান তোলো, গুসতাখে রাসুলকি একহি সাজা, সার সারসে জুদা। দোয়াও মে ইয়াদ রাখনা।"
ভিডিও ভাইরাল হতে সময় লাগে না। সাথে সাথে সারা ভারতে সাড়া পড়ে যায়। গ্রেফতারও করা হয় দুই যুবককে। বর্তমানে চেষ্টা চলছে হত্যায় ব্যাবহৃত চা-পা-তি উদ্ধারের।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে দর্জি কানাইয়ার দোষ কি ছিল?
তার দোষ ছিল সে নুপুর শার্মার পক্ষে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল।
সেই নুপুর শার্মা, যাকে তার বক্তব্যের জন্য বিজেপি পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, যার নামে আদালতে কেইসও করা হয়েছিল, যার বিচার চলমান, সেই নুপুর শার্মাকে স্রেফ সমর্থন করার জন্য এই দুই "মুসলমান" নামের জানোয়ার "ইসলামের" উসিলায় একজন নীরিহ দর্জিকে নৃশংসভাবে কু-পিয়ে শুধু হত্যাই করে নাই, ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে।
দুই যুবকের চেহারায় বিন্দুমাত্র আড়ষ্টতা নেই। বক্তব্য দেয়ার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে এরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না৷ এরা পিশাচ। ধর্ম মানুষকে এইরকম পিশাচ বানাতে পারে? এটা মুসলমানদের জন্য, ইসলামের জন্য চরম লজ্জা এবং বিপদের কথা। এভাবে চললে আর কিছুই অবশিষ্ঠ থাকবে না। এই পৈশাচিকতা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই টান দিবে।এখন কিছু শিক্ষিত ছাগল বলা শুরু করবে এখানে ইসলামের দোষ কোথায়? ইসলাম তো বলে নাই নীরিহ মানুষকে হত্যা করতে।
ইসলামের দোষ আছে কি নাই সেটা জানি না কিন্তু শাতিমে রাসুল বা রাসুলের অপমান যদি কেউ করে তাহলে শারিয়া আইনে অর্থাৎ ইসলামী আইনে বলা আছে তার ক-ল্লাটা ফেলে দিতে৷ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের হাজার হাজার মোল্লাহ রাত দিন তাদের বয়ানে এই কথাই বলে যায়। ইউটিউব ঘাটলেও পাওয়া যাবে। ভুয়া কবিতা বানিয়ে নজরুলের নামে চালিয়ে পর্যন্ত দেয়া হয়েছে, "রাসুলের অপমানে যদি কাঁদেনা তোর মন, মুসলিম নয় মুনাফিক তুই রাসুলের দুশমন।" কাজী নজরুল কোন কবিতায় এটা বলেছেন একবার যাচাইও করলো না কেউ।
তাহলে ইসলামী আইনে বা শারিয়া আইনে এখন এই দুই যুবক পুরষ্কার পাবার যোগ্য। বলেন ঠিক কিনা? চিল্লায়া কন!
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেউ প্রমান খুজতেও যায় না যে আসলেই শাতিমে রাসুল হয়েছে কিনা। পাকিস্তানে শাতিমে রাসুলের অপবাদ দিয়ে অসংখ্য হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ আসামী এরেস্ট করার পরও মোল্লাদের চাপে পাকিস্তান সরকার ছেড়েও দিয়েছে বহুবার। পাকিস্তানে কোনো ব্যাক্তির সাথে শত্রুতা থাকলে স্রেফ যে কোনভাবে রটিয়ে দিতে হবে সেই ব্যাক্তি শাতিমে রাসুল বা কোরআন অবমাননা করেছে। ব্যাস বাকি কাজ তৌহিদী জনতা করে দিবে। কিছুদিন আগে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে তারা একই অপবাদে মেরে ফেলেছে। তাই পাকিস্তানে ব্লাসফেমী আইনের মিস ইউজ সবচেয়ে বেশি হয়। তারপরও আমাদের দেশের কিছু ছা????ল বুঝে না বুঝেই চিল্লাবে শাতিমে রাসুলের শাস্তি মৃত্যদন্ড, এটা সরকারীভাবে কার্যকর করা হোক।
যাক ভারতের কথায় ফিরি। দুই যুবক মুসলিম। আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভারতে বর্তমান ক্ষমতায় আছে বিজেপি। অবস্থাটা কি হবে আন্দাজ করতে পারছেন?
ঘটনার পর উদয়পুর শহরের সাতটি মহল্লায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে রেড-অ্যালার্ট জারি করেছে রাজ্য সরকার। উদয়পুর শহরের বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে এবং কয়েকটি জায়গায় অগ্নি-সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। জেলা পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্টের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কে দায়ী এর জন্য?
উত্তরে এবার বলতেই হবে মুসলমানদের বেহুদা অতি আবেগই এর জন্য দায়ী।
[সঙ্গত কারনেই ভিডিও ব্যাবহার করা যাচ্ছে না। সেটা দেখার মত না।]
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: