
নকুল চন্দ্র শর্ম্মা একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, শিক্ষক। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শাহজানপুর গ্রামে তাঁর জন্ম।
পিতা অমর চাঁদ শর্ম্মা ছিলেন একজন গ্রাম্য চিকিৎসক । শৈশবে শাহজানপুর স্কুলে নকুল শর্ম্মার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। আন্দিউড়া উম্মেতুন্নেছা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক , শাহজালাল সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন।
ছাত্র অবস্থায়ই তার লেখালেখি শুরু হয়। বর্তমানে মাধবপুর উপজেলার প্রেমদাময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। নকুল শর্ম্মার কবিত্ব প্রকাশ ঘটে ছাত্র জীবনেই। গ্রামে বড় হওয়া এই কবির কবিতায় গ্রাম্য প্রকৃতি ও গ্রামীণ জীবনের সহজ সরল রূপটি সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে। তার কবিতা ও গল্পগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় তাঁর অস্তিত্ব মাটি ও মানুষের সাথে মিলেমিশে একাকার।
গ্রামে বসবসাসের সুবাদে গ্রামের মানুষের জীবনকে নানাভাবে দেখার সুযোগ ঘটে যা তাঁর ছোট গল্পগুলোতেও উঠে এসেছে। তিনি অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। একইসাথে সময়কালীন বাস্তবতা ও বাস্তব জীবনের জটিলতা কবিতায় চরমভাবে ধরা পড়েছে। বাচ্চাদের নিয়েও একাধিক মজার ছড়া লিখছেন তিনি। যুক্ত আছেন একাধিক সাহিত্যের সংগঠনেও।
বিষয়- শোকাবহ আগস্ট
শিরোনাম-কলঙ্কময় অধ্যায়
কলমে-নকুল শর্ম্মা
লেখা-২৯/০৭/২০২২
পোস্টের তারিখ-১৩/০৮/২০২২
দুর্জয় বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ফাউন্ডেশন
দুগ্ধপোষ্য শিশু সেদিন ছেড়ে দিয়েছিল মায়ের স্তন,
কেঁদে উঠেছিল অজানা শোকের বিস্ময়ে,
থমকে দাঁড়িয়েছিল সময়ের কাঁটা।
ইতিহাসের বুকে অবলীলায় রচিত হয়েছিল সুপরিকল্পিত ভাবে লোমহর্ষক আস্ফালনে
এক জঘন্য ও কলঙ্কময় অধ্যায়।
নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আজও বিস্মিত শিহরণে,পূর্ণিমার চাঁদে রাহুগ্রাসের বীভৎস ছায়া,
ডানা ঝাপটিয়ে বিরূপ বিলাপে ডেকে উঠেছিল
রাতের ঘুমন্ত যত পাখপাখালি,
থেমে গিয়েছিল নিশাচরের খাদ্য ক্ষুধা।
জীবন নামক পাশাখেলায় কুচক্রী শকুনির চক্রান্তও
হেরে গেল অমনুষ্যত্বের যাঁতাকলে।
ভরদুপুরেই নেমে এসেছিল কালরাত্রি, মৃত্যুরূপী যমদূত যমদণ্ড হাতে মেতে উঠল অট্টহাসিতে,
নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে যায় বাংলার আকাশ বাতাস।
অকালে ঝরে পড়ল তেজোদীপ্ত অগ্নি স্ফুলিঙ্গ
খাণ্ডব দাহনের তাণ্ডব নৃত্যে,
হার মানালো হিরোশিমা নাগাসাকির আনবিক পৈশাচিকতাকে।
নব্য ইতিহাসে বর্বরতার ধিক্কার,
নবারুন গেলো অসময়ে অস্তাচল ক্ষমতা পিপাসু লোভী ঘাতকের চক্রব্যূহের ছলনায়।
হায় বাঙালি, জাগলে না কোটি প্রাণ একসাথে,
হিংস্র হায়েনার হাতে ঘটে নক্ষত্র পতন
উদয়ের পথে এ কেমন বেলা শেষের গান?
পনেরো আগস্ট হল রঞ্জিত অবাঞ্ছিত রক্তস্নানে,
রেহাই পায়নি নিষ্পাপ কোমলপ্রাণ শিশু রাসেল,
বাদ পড়েনি মেহেদি রাঙা হাতে সদ্য পরিণীতা নারী।
কাঁদো বাঙালি কাঁদো, কাঁদো বার বার
কান্নার হবে না কোনো দাফন এই বাংলার বুকে।
ঊর্মিমালার ন্যায় ফিরে ফিরে আসে
একটি অমর নাম,
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিব,
তোমারই জন্য কাঁদে আমার উত্তরসূরি।
ধানমণ্ডির ৩২নং বাড়ি সেদিন উৎসব মুখর,
মিলনমেলায় ভরে উঠেছিল আনন্দ নিকেতন।
রাতের গভীরতায় নেমে আসে ঘুমের নীরবতা,
প্রভাতের সূচনা ঘটেনি,জাগেনি ভোরের পাখি
হঠাৎ একঝাঁক বিষাক্ত ভীমরুলের আক্রমণ,
মৃত্যুপুরীতে রূপ নিল চির অমরাবতী।
ভোরের শিশির পারল না সেদিন ঘুম ভাঙাতে
চিরদীপ্ত সূর্যের কপোল চুমি,
রক্ত তিলক হল আঁকা নিষ্পাপ বক্ষে।
বদ্ধ কোটরে পড়ে রইল নিথর ক'খানি দেহ,
নিষ্ঠুর দানবের বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিল
সদ্য ফুটন্ত শুভ্র নির্মল শতদল।
তোমার পদচিহ্ন মুছে যায়নি হে মহামহিম,
তুমি বাঙালির হৃৎস্পন্দন,মৃত্যুঞ্জয়ী রূপ।
দিয়েছ প্রেরণায় অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষা উদাত্ত কণ্ঠে,
কোটি বাঙালি ঊর্ধ্বশিরে তোমারেই করি স্মরণ,
রচিত হয় তোমার শ্বাশত অবয়ব,
স্মৃতির মিনারে তুমি চির অম্লান, চির ভাস্বর।
Daily J.B 24 / শোকাবহ আগস্টের প্রতিযোগিতা
আপনার মতামত লিখুন: