
এমন প্রশ্ন কেবল একজন নির্বোধ, অশিক্ষিত ও আহাম্মকই করতে পারে । এই জাতীয় ম্যারিট নিয়ে সে কোন ভাবেই অন্তত রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকতে পারে না, নেতা হবার স্বপ্ন দেখতে পারে না ।
কোটা আন্দোলনের নামে উঠে আসা নুরুল হক নুর তার অনুসারীদের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল ঘোষনা করেছে , যার নাম 'গণঅধিকার পরিষদ' । যদিও এটি এখনো একটি ক্লাব বা সংগঠন (নন রেজিঃ) হিসাবেই আছে । বাংলাদেশের আইনে যা নিবন্ধিত নয় ।
সাম্প্রতিক সময়ে নুরুল হক নুর বিদেশে যায় এবং ইসরাইলের লিকুদ পার্টির নেতা ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এর এজেন্ট খ্যাত মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠক করে। যে কারনেই হোক আর যে ভাবেই হোক সেই বিষয়ে মেন্দি এন সাফাদির সাথে নুরুল হক নুরের একটি ছবিসোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয় । তৈরি হয় নানামুখি আলোচনা সমালোচনা। সেই সমালোচনায় আক্রান্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে বসে, সৌদি আরবের মক্কা নগরিতে বসে নুরুল হক নুর বিষয়টিকে অস্বিকার করে । দেশের মধ্যে নুরুর অনুসারী তারেক , রাশেদ নামে কিছু অতি উৎসাহী বিষয়টিকে অস্বীকার করে এবং বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। বিদেশের মাটিতে বসে জামায়াত, বিএনপির ভাড়াটিয়া নানা জনে নুরুর পক্ষ অবলম্বন করে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারনা চালায়, একিসাথে বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদ বলে উল্লেখ করে প্রচারনা জোরদার করে।
আচমকা নুরুল হক নুর তার এক ভিডিও বার্তায় বলে - "মেন্দি সাফাদির সাথে মতবিনিময় হলে হয়েছে , সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে হয়েছে, তাতে আপনার/আপনাদের কি ? বাংলাদেশের সংবিধানে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? এমন আবান্তর প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে ।
নুরু নিজেকে রাজনৈতিক নেতা বলে পরিচয় দিলেও তার বক্তব্য সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধী বার্তা হিসাবে দৃশ্যমান । বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে ছেলে খেলা বা তাদের মূল্যহীন হিসাবে পরিগনিত করার সামিল বলেই মনে করি ।
আইন কি বলে -
ফৌজদারি দন্ডবিধিঃ
ফৌজদারি দন্ডবিধি ১৮৬০ এর আওতায় অপরাধ সমূহের মধ্যে রয়েছে -
১। রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ
২। সর্বসাধারণের শান্তি বিনষ্টকারী অপরাধ
৩। নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ
৪। মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং সর্বজনীন সুবিচার বিরোধী অপরাধ
৫। জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, এবং সর্বসাধারণের সুযোগ-সুবিধা, শালীনতা ও নৈতিকতা বিনষ্টকারী অপরাধ
রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রধানত:
১। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা
২। অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া
৩।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা
রাষ্ট্রদ্রোহ
১। বাংলাদেশের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা; এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকারকে কোনো আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত রাখার অথবা এরূপ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করা।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সংক্রান্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে,
১। সেনা বিদ্রোহে মদদ দান; একজন সৈনিক, নাবিক অথবা বিমানসেনাকে তার দায়িত্ব পালনে বিরত থাকতে প্ররোচিত করা
২। সৈনিক, নাবিক কিংবা একজন বিমানসেনাকে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনকালে আঘাত করতে প্ররোচিত করা
৩। একজন সৈনিক, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে তার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করা
৪। দলত্যাগকারী সৈন্য, নাবিক কিংবা বিমান সেনাকে আশ্রয়দান এবং তাদের ব্যবহূত পোশাক পরিধান করা অথবা তাদের ব্যবহূত চিহ্ন ধারণ করা।
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী একজন অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, জরিমানা এবং বেত্রাঘাতের মত শাস্তি প্রদান করা হয়। দন্ডবিধির আওতায় মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সেনাবিদ্রোহে মদদ দান, সজ্ঞানে মিথ্যা সাক্ষ্য দান, যার ফলে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত, হয় এসব অপরাধসহ অন্য কিছু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। বাদ বাকি অপরাধের জন্য সশ্রম অথবা বিনা শ্রমে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড আরোপ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালত কারাদন্ডের পরিবর্তে কেবলমাত্র অর্থদন্ড প্রদান করতে পারেন। কোনো কোনো জঘন্য অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আদালত কারাদন্ড সহ বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন। আবার এমন কিছু অপরাধ আছে, যার দন্ড হিসেবে আদালত দোষী ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। সরকার ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত কোনো আসামীর দন্ড লঘু করে কুড়ি বছরের কম যেকোন মেয়াদের কারাদন্ড প্রদান করতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে পুরোপুরি ক্ষমা, তার দন্ডাদেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত অথবা তাকে লঘুতর কোনো দন্ড প্রদান করতে পারেন।
আমি আইন বিষয়ে কিছুই জানিনা, তবে দালিলিক ভাবে এসব অপরাধের কোন কোন ধারায় নুরুল হক নুর পড়বে সেটা আইন আদালত ভালো বলতে পারবে । তবে নুরুল হক নুরের বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে বিভিন্ন ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সেনা , নৌ , এয়ার সব বাহিনীর উদ্দেশ্যে কি কি বলেছে সেটা গোয়েন্দা সংস্থা খুঁজে দেখলেই পেয়ে যাবে ।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোন ধারায় পড়বে সেটাও আইনে বলা আছে। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা উল্লেখ না থাকলেও , নুরুল হক নুরের উচ্চারিত "ষড়যন্ত্র" শব্দটি মোসাদের এজেন্ট এর সাথে দেশের বিপক্ষে অবস্থানের নামান্তর। নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ ও সরকারের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান মানেই বর্তমান সরকারের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান ।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা ঘোষণা দানের প্রচেষ্টা অথবা যুদ্ধ ঘোষণা করতে অন্যকে প্ররোচিত করা , অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া বিষয় নুরুর উচ্চারিত ষড়যন্ত্র শব্দটির মধ্যেই এসে যায় বলে মনে করি । যদিও নুরু এখানে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের কথা বলেছে, কিন্তু বর্তমান সরকারের পক্কে এই দেশের মানুষ অবস্থান করছে । সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র মানেই দেশের ১৬ কোটি মানুষকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র ।
আশাকরি নুরু সাংবিধানিক ভাবে কি লিখিত আছে আর কি নেই সেটা বুঝতে পারবে । নুরুর অনুসারী গণ নিশ্চিত ভাবেই বুঝতে পারবে কি এবং কেন ।
#নুরুল #নুরুল_হক_নুর #আওয়ামীলীগ #শেখ_হাসিনা #বিএনপি #জামায়াত
মোঃ তৈমুর মল্লিক
Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক
আপনার মতামত লিখুন: