• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

সৌদি আরবের পরের দিন কেন বাংলাদেশে ঈদ হয়?

সায়েদুল আরেফিন   
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৫ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৩০ পিএম
ঈদ, ঈদের দিনের পার্থক্য, বাংলাদেশ, সৌদী আরব
সংগৃহীত

শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। শাওয়াল আসলে চান্দ্র মাস, রবিবার সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গিয়েছিলো বলে সোমবার সৌদি আরবে ঈদ উতযাপিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে সোমবার তাই এখানে ঈদ উতযাপিত হয়েছে মংগলবার। কিন্তু কেন এই পার্থক্য?  


বিজ্ঞানীরা বলছেন মঙ্গলবার ২ মে বিকাল ৩ টা বেজে ২০ মিনিট ২৬ সেকেণ্ড পর শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি শেষ হয়ে তৃতীয়া তিথি শুরু হয়েছিলো। আর দ্বিতীয়া তিথি শুরু হয়েছিলো ১ মে রাত ২ টা ৪৪ মিনিট ৪৫ সেকেণ্ড পর। সাধারণত প্রতিপদের পর ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত দিনের আলো থাকলে দ্বিতীয়া তিথির চাঁদ দেখা যায়। এক্ষেত্রে সেই সময়ের চাইতে অনেক বেশি সময় পাওয়া যাবে, ফলে সোমবার আকাশে দ্বিতীয়ার চাঁদ নয়, বরং তৃতীয়া তিথির চাঁদ দেখা গেছে, এবং তা দেখতে অপেক্ষাকৃত বড়। 
এটা জানার আগে আমরা শুক্ল পক্ষ, কৃষ্ণ পক্ষ আর এসব পক্ষের বিভিন্ন তিথি, প্রতিপদ, দ্বিতীয়া তৃতীয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিলে ভালো হয়, বুঝতে সুবিধা হয়।  
আমরা জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘরে ার চাঁদ প্রিথিবীর চারি দিকে ঘোরে। প্রতিটি চান্দ্রমাসকে ৩০টি ভাগে ভাগ করা হয়। কারণ জ্যোতিষ বিজ্ঞান মতে চন্দ্র পৃথিবীর চতুর্দিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ত্রিশ দিন লাগে। এই ৩০টি ভাগের প্রত্যেকটিকে বলা হয় তিথি। এর ভিতরে অমাবস্যার পরবর্তী তিথি থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫টি তিথি নিয়ে গঠিত ভাগটি শুক্লপক্ষ বলা হয়। পক্ষান্তরে পূর্ণিমার পরবর্তী তিথি থেকে অমাবস্যা পর্যন্ত ১৫টি তিথি নিয়ে গঠিত ভাগটির নাম কৃষ্ণপক্ষ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। তিথিগুলো সৌরদিনের চেয়ে কিছুটা ছোটো। তাই চান্দ্রমাস সৌরমাসের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়ে থাকে। প্রায় সাড়ে ২৯ সৌরদিনে দিনে এক চান্দ্রমাস হয়। এই রূপ ১২টি চান্দ্রমাস নিয়ে তৈরি হয় ১টি চান্দ্র-বৎসর। 
অমাবস্যার পরের দিনকে বলা হয়  প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পনের দিন শুক্ল পক্ষ এবং পূর্ণিমার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে অমাবশ্যা পর্যমত্ম পনের দিন কৃষ্ণ পক্ষ নামে পরিচিত। শুক্ল পক্ষের তিথির নাম- ১) প্রতিপদ, ২) দ্বিতীয়া, ৩) তৃতীয়া, ৪) চতুর্থী, ৫) পঞ্চমী, ৬) ষষ্ঠী, ৭) সপ্তমী, ৮) অষ্টমী, ৯) নবমী, ১০) দশমী, ১১) একাদশী, ১২) দ্বাদশী, ১৩) ত্রয়োদশী, ১৪) চতুর্দশী ও ১৫) পূর্ণিমা। কৃষ্ণ পক্ষের প্রথম দিনের বা তিথির নামও বলা হয়  প্রতিপদ, ১৭) দ্বিতীয়া, ১৮) তৃতীয়া, ১৯) চতুর্থী, ২০) পঞ্চমী, ২১) ষষ্ঠী, ২২) সপ্তমী, ২৩) অষ্টমী, ২৪) নবমী, ২৫) দশমী, ২৬) একাদশী, ২৭) দ্বাদশী, ২৮)  ত্রয়োদশী, ২৯) চতুর্দশী ও ৩০) অমাবস্যা। 
সৌর বৎসরকে, মানে আমরা যাকে ইংরেজি সন বলি, সাধারণভাবে তা গণনা করা হয় ৩৬৫ দিনে। কিন্তু চান্দ্র বৎসর হয় ৩৫৫ দিনে। ফলে প্রতি চান্দ্র বৎসরের সাথে সৌরবৎসরের ১০ দিনের পার্থক্য হয়। 
কিন্তু সৌদি আরবে ১ দিন আগে আর বাংলাদেশে ১ দিন পরে ঈদ হয়, কারণ কী? কেন এই পার্থক্য হয় সেটা জানা জরুরী?    


সৌরবর্ষ অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা এগিয়ে। এতে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা আগে চাঁদ দেখার কথা। কিন্তু তা তো হয়ই না, উল্টো সৌদি আরবে একদিন আগে রমজান, ঈদ শুরু হয়ে যায় । এর কারণ হল সৌর হিসেবে সৌদি আরবের সাথে আমাদের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা হলেও চন্দ্রের হিসেবে সৌদি আরব ও আমাদের পার্থক্য ২১ ঘণ্টার! 
প্রশ্ন আসতে পারে যে এটা কিভাবে সম্ভব! আসলে পৃথিবীর গতির কথা তো জানিই। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রতিনিয়ত ঘুরে চলেছে, যাকে আমরা আহ্নিক গতি বলি। গতিটা সহজে বোঝা যাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক বা অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ (Anti Clockwise) বললে। ঘড়ির কাঁটা পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে ঘুরে, আর পৃথিবী নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরে। মূলত সে কারণে আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখি।


এখন চাঁদ বেশ ধীরে নিজ অক্ষে আবর্তনরত। চাঁদের আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সমান ২৭-২৯ দিন। ফলে প্রতিদিন পশ্চিমের দেশসমূহ সবার আগে চাঁদের উন্মোচন দেখতে পায়। আমরা তো জানিই, সূর্যোদয় হয় পূর্ব থেকে,তবে চাঁদের ক্ষেত্রে উল্টো। যদিও চাঁদও পূর্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়, তবুও পশ্চিমারা চাঁদের আলো সবার আগে পায়। 
কেন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলেও অন্য দেশে দেখা যেতে দেরি হতে পারে। কেননা খালি চোখে চাঁদকে দেখতে হলে চন্দ্র আর সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ থাকতেই হবে, এবং যে পরিমাণ দূরত্ব অর্জন করলে এই কোণ তৈরি হবে, সে পরিমাণ যেতে যেতে চাঁদের ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ কারণেই আজ আমেরিকাতে চাঁদ দেখে গেলেই যে বাংলাদেশেও দেখা যাবে, সেটা ভুল ধারণা। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই কোণ অর্থাৎ ১০.৫ ডিগ্রি অর্জন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাবে না। একই বিষয় সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই সংকট কোণকে ইলঙ্গেশন (Elongation) বলে। তাই চাঁদের বয়স কত সেটা আদৌ আসল কথা নয়, সেই কোণ হয়েছে কিনা সেটার উপর নির্ভর করে চাঁদ দেখা যাবে কিনা।

 

© সায়েদুল আরেফিন   
উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট

 

 

Daily J.B 24 / জয় বাংলা২৪ নিউজ ডেস্ক

উৎসব / দিবস বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ