
মাহমুদুর রহমান মান্না। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, ডাকসুর ভিপি, তরুণদের মধ্যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। সেই সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ এখন ভাড়াটে খেলোয়াড়। বারবার দলবদল এবং আদর্শ-নীতি জলাঞ্জলি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এক নতুন রেকর্ড করেছেন। যখনই নির্বাচন আসে তখনই প্রশ্ন আসে মাহমুদুর রহমান মান্না কার? তিনি কার হয়ে খেলবেন? যেখানে হয়তো তিনি সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন তার হয়েই খেলবেন।মান্নার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল জাসদের রাজনীতির মধ্যদিয়ে। দ্রুতই তিনি জাসদ ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা হয়েছিলেন। এরপর ভাঙ্গনের মুখে পড়ে জাসদ। গঠিত হয় বাসদ। বাসদেরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় নেতা হয়ে যান মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু মান্না মানেই ভাঙ্গন, মান্না মানেই রাজনীতিতে সুবিধাবাদ। একসময় বাসদও বিভক্ত হয়ে যায়। মান্না খণ্ডিত একটি জাসদের নেতা হন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আওয়ামী লীগে ডিগবাজি দেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির স্নেহভাজন হওয়ার কারণে দ্রুতই আওয়ামী লীগের মত বড় রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।ক
ওয়ান-ইলেভেনের সময় মাহমুদুর রহমান মান্নার রাজনৈতিক লোভ আরেকদফা উন্মোচিত হয়। ক্ষমতার হালুয়া-রুটির জন্য তিনি হয়ে যান সংস্কারপন্থী, সেনাসমর্থিত সরকারের অন্যতম তাবেদার-দালালে পরিণত হন। কিন্তু এই সময়ে আওয়ামী লীগে নিষ্ক্রিয় হয় এবং কিংস পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে তিনি ভাড়াটে খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করেন। শেষ পর্যন্ত কিংস পার্টি ব্যর্থ হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়নি।
এই দুঃখে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান এবং নাগরিক ঐক্য মনে নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই নাগরিক ঐক্য মূলত একটি ভাড়াটে সংগঠন। যখন যার পক্ষে খেলতে হয় তার পক্ষেই খেলে। যেমন গত নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা হয়েছিলেন, ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিছুদিন ধরেই বিএনপিতে গুঞ্জন মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন। মাহমুদুর রহমান বিএনপিতে যোগ দিবেন কি দিবেন না সেটা তাঁর সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাহমুদ রহমান মান্নাকে অত্যন্ত সরব দেখা যাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে, বিএনপি’র পক্ষে।
তারেক জিয়ার বিশেষ আস্থাভাজন এবং বিশেষ প্রিয়ভাজন ব্যক্তি হিসেবে মাহমুদ রহমান মান্না পরিচিত। তারেক জিয়া নিজে মান্নাকে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, এমন কথা মাহমুদুর রহমান মান্নাই গণমাধ্যমকে বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপিতে যাবেন কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন। সম্প্রতি রাজনীতিতে একটি তৃতীয় ধারা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বাইরে সুশীলদের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি নতুন উদ্যোগের চেষ্টা চলছে।সেই রকম একটি উদ্যোগ ছিল জনগণের অধিকার পরিষদ। কিন্তু সেই গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবে রেজা কিবরিয়া জনমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেকে বলছেন যে, তিনি ডিপ্লোম্যাটিক নেতা, তিনি কূটনীতিকপাড়ায় নেতা হতে পারেন কিন্তু জনগণের নেতা হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর খুবই কম। আর এই কারণেই সুশীল সমাজে এবং রাজনীতিতে যারা তৃতীয়পক্ষ তৈরি করতে চায় তারা এখন মাহমুদুর রহমান মান্নার দিকে তাকিয়ে আছেন।
তবে মান্না নেতা হিসেবে যতই জনপ্রিয় হোক না কেন তার আদর্শ সবসময় নড়বড়ে এবং সুযোগ সন্ধানী খেলোয়াড়ের মতো তিনি সবসময়ই তাৎক্ষণিক লাভটাই চিন্তা করেন। এ কারণে মাহমুদুর রহমান মান্না এবার কার হয়ে খেলবেন সেটা নির্ভর করবে তিনি কোথা থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
Daily J.B 24 / Newsdesk
আপনার মতামত লিখুন: