• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  রবিবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ০১ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার হত্যা নিয়ে পিনাকির মিথ্যাচার

লেখক, গবেষক ও আইনজীবী, নিঝুম মজুমদার 
Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৯ আগষ্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪৬ এএম
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার হত্যা,  পিনাকির মিথ্যাচার , গুজব, ইতিহাস বিকৃতি
সংগৃহীত

কাকে নিয়ে লিখছি?-

পিনাকি ভট্টাচার্য গত ১৫-ই অগাস্ট ২০২২ ইং তারিখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে, সুনির্দিষ্টভাবে বঙ্গবন্ধু ১৫-ই অগাস্ট ১৯৭৫ সালে কেন হত্যাকেন্ডের শিকার হলেন, এই বিষয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখেছিলেন। 
আমার কাছে যা তথ্য উপাত্ত ও নথি পত্র রয়েছে সেই হিসেবে আমি বলতে পারি পিনাকী’র সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভাষ্য সত্য নয় বা সরাসরি মিথ্যাচার। আমার আজকের এই লেখাটি পিনাকী’র সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতি-উত্তর। 


কেন লিখছি?-
ফেসবুকে পিনাকী ভট্টাচার্যকে অনেক মানুষ অনুসরণ করে। বাংলাদেশের তরুনদের একটা বড় অংশ বিভ্রান্ত। তাঁদের অনেক ক্ষেত্রেই দোষও দিতে পারিনা আবার অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের দোষ রয়েছে। 
যেটাই হোক না কেন, তরুনদের বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠের অনীহার কারনে পিনাকী’র মত ব্লগার/একটিভিস্ট এই সুযোগে তরুনদের মিথ্যে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। 
আমি মনে করি আমার এই লেখার রিচ পা পাঠ যা-ই হোক না কেন অন্তত পক্ষে ঐতিহাসিক সত্য আমি তুলে ধরলে একজন মানুষও যদি পিনাকী’র বিশ্বাস করা মিথ্যে থেকে সত্যটা জানতে পারে সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।


পিনাকী কি লিখেছে?-
পিনাকী তার লেখায় যা দাবী করেছেন তা নীচে উঠিয়ে দিচ্ছি- 
‘পুরো ঘটনা বিভৎস রক্তারক্তিতে পর্যবসিত হয় শেখ কামালের গুলিতে। প্রথম মৃত্যু একজন সৈনিকের ৩২ নাম্বারের গেটে। স্টেনগান দিয়ে গুলি বর্ষণ করে প্রথম শেখ কামাল। সৈনিকেরা গুলি শুরু করেনি আগে। সৈনিকের এই মৃত্যুটাই ট্রিগার করে দুই পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি। শেখ কামালের গুলিতে মারা যায় মোট চারজন সৈনিক, আহত হয় সাতজন সৈনিক। সেনা ক্যাজুয়ালিটির হিসাব সেনা সদরের। শেখ কামালের গোলাগুলি আর চার সৈনিকের মৃত্যু পরবর্তী বিভৎস হত্যাকান্ডের প্রভাবক হতে পারে বলেই আদালতেও যুক্তি দেয়া হয়েছিলো। সৈনিকের মৃত্যুর সংখ্যা মেজর ডালিমের বইয়েও লিপিবদ্ধ আছে’


প্রমাণ সহ আমার পর্যবেক্ষণ-
শেখ কামালের গুলিতে মারা যায় ৪ জন সৈনিক এবং আহত হয় ৭ জন সৈনিক এই তথ্যের কোনো সূত্র পিনাকী দিতে পারেন নি। 
তিনি তার উপরের প্যারাতে কেবল লিখেছেন সৈনিকের মৃত্যুর সংখ্যা মেজর ডালিমের বইয়েও লিপিবদ্ধ আছে।
মেজর ডালিমের লিখিত বই ‘যা দেখেছি,যা বুঝেছি, যা করেছি’ গ্রন্থের ৪৯০ পৃষ্ঠার একেবারে শুরুর দিকে লেখা রয়েছে তা হচ্ছে, ‘শেখ মুজিব, শেখ মনি ও সেরনিয়াবাতের বাড়ি থেকে বাঁধা এলো। প্রথম গোলাগুলি শুরু হলো বাড়িগুলো থেকেই। গুলিতে তিনজন বিপ্লবী শহীদ হলেন’ ডালিমের এই বক্তব্যে প্রথমত, চারজন সৈনিক মারা গেছে এমন তথ্য নেই। দ্বিতীয়ত, ৭ জন আহত হয়েছে এমন তথ্য নেই, তৃতীয়ত তিনটি বাড়ি থেকে আক্রমণ হয়েছে আগে বলা হচ্ছে কিন্তু কোন বাড়িতে এই তিনজন সৈনিক মারা গেছে তার সামান্যতম সূত্র পর্যন্ত এই বইতে নেই।


৩ জনই কি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে মারা গেছে নাকি একজন নাকি দুই জন?


একইভাবে এই ৩ জন মারা গেছে কি সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় নাকি মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনি সাহেবের বাসায়?
ডালিমের বইতে যেখানে ৪ জন সৈনিকের কথা লেখা নেই আর ৭ জন সৈনিকের আহত হবার তথ্যও নেই, সেখানে পিনাকি কোন সূত্র থেকে এই তথ্য আমাদের দিচ্ছে?
পিনাকী’র লেখায় একটি ব্যাপার খুব স্পস্ট। সেটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকান্ডের জন্য বঙ্গবন্ধুর পূত্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল-ই দায়ী। পুরো ব্যাপারটা সেই আগের-ই মতন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পক্ষের উকিলের জেরার মতন। 


যেমন মামলার বিচার চলাকালীন মামলার বাদী ও অন্যতম প্রধান সাক্ষী মহিতুল ইসলামকে ডিফেন্সের আইনজীবি শরফুদ্দিন আহমেদ মুকুল বললেন, “আত্মঘাতি বোমায় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দোতলায় অবস্থানের শিশু শেখ রাসেলসহ সকল মহিলা মারা যায়?”


একইভাবে মুকুল ওই একই জেরাতে সাক্ষী মুহিতকে জেরাতে বলেন, শেখ জামাল ওপর থেকে ভারী অস্ত্র নিয়ে ডিউটিরত গার্ডদের উপর আক্রমন করেছিলেন। [সূত্র- গ্রন্থ- ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা,’ লেখিকা- সাহিদা বেগম, প্রকাশক-খোশরোজ কিতাব মহল, প্রকাশকাল-২০১০, পৃষ্ঠা-২৯]


উল্লেখ্য যে উক্ত উল্লেখিত আইনজীবির দুইটি প্রশ্নের জবাবেই সাক্ষী মুহিত না বোধক জবাব দিয়েছিলেন। 
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই আইনজীবি শেখ জামালকে নিয়ে প্রশ্ন করলেও শেখ কামালের ব্যাপারে একটি প্রশ্নও করেনি এই বলে যে, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল কোনো গুলি বর্ষন করেছিলেন কি না।
একইভাবে ঐ একই গ্রন্থের ৩৬ নং পাতায় এই একই মামলার সাক্ষী আব্দুর রহমান শেখ যিনি বঙ্গবন্ধুর বাসায় কাজ করতেন তিনিও নিশ্চিত করেন যে বঙ্গবন্ধুর বাসায় ঢুকবার সময় আর্মিরা গুলি করতে করতে ঢুকছিলেন। 
জনাব শেখ এই একই কথা পরবর্তী আরো কয়েকটি জেরাতে বার বার নিশ্চিত করেন। [ সূত্র পৃষ্ঠা ৩৯, উপরে উল্লেখিত সাহিদা বেগমের গ্রন্থ দ্রষ্টব্য]
আর্মিরা গুলি করতে করতে বলে ওঠে, ‘যে যেখানে আছে সারেন্ডার করো’, এই বক্তব্য দেন এই একই মামলার তৃতীয় সাক্ষী জনাব সেলিম যিনি বঙ্গবন্ধুর বাসায় কাজ করতেন এবং পুরো ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী। [ সূত্র পৃষ্ঠা ৪৭, উপরে উল্লেখিত সাহিদা বেগমের গ্রন্থ দ্রষ্টব্য]


এই একই গ্রন্থের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী, সেদিনের বাড়ীর গার্ড আব্দুল কুদ্দুস শিকদার (৪র্থ সাক্ষী) তাঁর সাক্ষ্যে পরিষ্কার করে আদালতকে বলেন যে, নূর, হুদা আর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সৈনিক হ্যান্ডস-আপ বলতে বলতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। [সূত্র পৃষ্ঠা ৭২, উপরে উল্লেখিত সাহিদা বেগমের গ্রন্থ দ্রষ্টব্য]


এইভাবে এই পুরো মামলার কার্যক্রমে যত চাক্ষুস সাক্ষী রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য ধরে ধরে রেফারেন্স দেয়া সম্ভব যে সেদিন শেখ কামাল গুলি চালান নি এবং একই সাথে পিনাকীর দাবীকৃত ৪ জন নিহত সৈনিক ও ৭ জন আহত সৈনিকের গল্পটা পুরোপুরি ভুয়া।


যদি মামলার কার্যক্রমে কারো বিশ্বাস না জন্মে কিংবা এটিকে রেফারেন্স হিসেবে মানবেন না বলেও ধরে নেন সেক্ষেত্রেও খোদ খুনীদের মামলা কার্যক্রম শুরু হবার পূর্বের অনেক বক্তব্যও হাজির করা যেতে পারে।
যেমন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনী ফারুক ‘আজকের সূর্যোদয়’ ম্যাগাজিনের ৪ থেকে ১০ মার্চ, ১৯৯৩ সালের সংখ্যার ৯ পৃষ্ঠায় পরিষ্কার করে বলেছে, ‘রশিদ ও মোশতাক ক্ষমতার লোভে সি আই এ’র সাহায্যে খুন করেছে’
ওই একই ম্যাগাজিনের ১৫ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আরেক অন্যতম খুনী রশীদ বলেছে, ‘এই খুনের পরিকল্পনা আর্মস কোরের কাজ। তারা খুন করেছে’ একই সাথে ‘সাপ্তাহিক পূর্ণিমার, ১৩ জানুয়ারী ইস্যু ১৯৯৩-এ বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুক আরেকটা নতুন থিয়োরি নিয়ে আসে। সে বলে, ‘…কিন্তু সে সময় পরিস্থিতি হয়তো এমন ছিলো যে, তাকে গ্রেফতার করে আনতে গেলে সে অবস্থায় তিনি ভারতীয় চক্রের হাতে পড়ে যেতে পারতেন। পরিস্থিত্র সম্ভাব্য ভয়াবহতার মুখে হয়তো এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে’


উপরের একটি সাক্ষাৎকারেও খুনীদের বয়ানেই কোথাও বলা নেই শেখ কামাল ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ ইং তারিখে গুলি চালিয়েছিলেন এবং ৪ জন সৈনিক নিহত হয়েছিলেন ও ৭ জন সৈনিক আহত হয়েছিলেন এমন তথ্য।
একটি জরুরি তথ্য হচ্ছে, ওইদিন বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে একজন সেনাবাহিনীর সৈনিক ঠিকই নিহত হয়েছিলেন যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গার্ড। যার নাম শামসু (শামসুল আলম)। 
আরো জেনে রাখা দরকার যে, সেনাবাহিনীর ৪ জন নিহতের যে তথ্য পিনাকী দিয়েছে সেই একই তথ্য উচ্চ আদালতে আসামীদের আইনজীবি ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনও দিয়েছিলো। 


তো মামুনের হিসেবে কে সেই ৪ জন? 


সেই ৪ জন হচ্ছে, খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারন সংবিধানের ১৬৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (এটা মামুনের যুক্তি), বঙ্গবন্ধু পূত্র লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কর্ণেল জামিল আহমেদ (বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব) এবং সৈনিক শামসু। [সূত্র গ্রন্থ- বঙ্গবন্ধু হত্যার রায়ঃ জাতির কলংক মোচন, লেখক-আনু মাহমুদ, প্রকাশক-ন্যশনাল পাবলিকেশন্স, প্রকাশকাল-২০১২ পৃষ্ঠা-৫৫ ও ৫৮]
এইবার তাহলে আপনারা বুঝে নিন যে পিনাকী’র আসলেই এই বিষয়ে জানা শোনা ঠিক কতদূর কিংবা তার জানার গভীরতাও কেমন এবং কিভাবে একের পর এক মিথ্যে গুজব দিয়ে তার লেখাগুলো ভরপুর।
পিনাকী কি তাহলে বঙ্গবন্ধু, শেখ জামাল, কর্ণেল জামিল ও গার্ড শামসুল আলমকে হিসেব করে ৪ জনের হিসেব বের করেছে? এবং ৪ জনকে শেখ কামাল খুন করেছে?
কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে, যারা পিনাকীর লেখা পড়ছে তারা সূত্র জানতে চাইছে না। তাকে চেপে ধরছে না এই বলে যে, কোথায় পেলো এমন তথ্য, কিভাবে পেলো এসব তথ্য? আর এভাবেই এই না জিজ্ঞেস করা কিংবা না চ্যালেঞ্জ করাতেই গুজব ডালপালা গজিয়ে বটবৃক্ষ হয়ে ওঠে।


পিনাকী তার লেখায় লে কর্ণেল আব্দুল হামিদ সাহেবের একটি বই  'তিনটি টি সেনা অভুথ্যান ও কিছু না বলা কথা' গন্থের সূত্র উল্লেখ করে বলেছে-


'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও না বলা কথা বইয়ে ঘটনাটা এইভাবে লিপিবদ্ধ আছে- গেটের কাছে গার্ডদের হট্টগোলে শেখ কামাল জেগে যান। তিনি কিছু একটা গণ্ডগোলের আভাস পেয়ে উপর থেকে স্টেনগান হাতে নিচে রিসেপশন রুমের দিকে ছুটে যান। সেখানে পুলিশের একজন ডিউটি অফিসারও ছিলেন। প্রথমা কামাল ভেবেছিলেন হয়তো জাসদ বা সর্বহারা গ্রুপের হামলা। কামাল সেনারক্ষীদের ব্যবস্থা নিতে বলেন, কিন্তু তারা নীরব থাকে। কামাল এবার আসল ব্যাপার বুঝতে পারেন। তিনি আক্রমণকারী সৈন্যদের উপরে গুলি ছোড়েন। একজন সৈনিক সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়। এরপরেই শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি।"
এই যে পিনাকী আপনাদের এই বইয়ের সূত্র দিয়েছে সেটিও ঠিক ভাবে দেয়নি। পৃষ্ঠা নাম্বার বলেনি, কোন এডিশন সেটা বলেনি কিংবা এও বলেনি এই লেখক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একজন সাক্ষী এবং তার জবানবন্দী ও জেরা লিপিবদ্ধ হয়েছে কিংবা এই একই বইতে তিনি এই বিষয়ে আরো প্রাসঙ্গিক অবজার্ভেশন টেনেছেন।


এই না বলার দুটো কারন থাকতে পারে। (১) পিনাকী আসলে জানেই না এত কিছু (২) অর্থসত্য বলে বিভ্রান্ত করে গুজব রচনা করাই তার উদ্দেশ্য।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে, পিনাকী যে বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছে, অর্থ্যাৎ হামিদ সাহেবের বইয়ের সেই বইয়ের (হাওলাদার প্রকাশনী, নবম এডিশন ২০২০) পরতে পরতে কন্ট্রাডিক্টরী কথা বার্তা। 
যেমন হামিদ তার বইয়ে তথ্য দিচ্ছে যে বেগম মুজিবের রুমে গ্রেনেড চার্জ করা হয়েছে (পৃষ্ঠা-৫০) আবার এই একই লেখক আদালতে গিয়ে বলছেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, বেগম জামাল, সুলতানা কামাল এবং রাসেল এই কয়জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি পড়ে থাকতে দেখেছিলেন [সূত্র- গ্রন্থ- ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা,’ লেখিকা- সাহিদা বেগম, প্রকাশক-খোশরোজ কিতাব মহল, প্রকাশকাল-২০১০, পৃষ্ঠা-২০৮]
একইভাবে এটিও জানিয়ে রাখা দরকার যে এই হামিদ সাহেবকে জেরা করার সময় ফারুকের আইনজীবি খান সাইফুর রহমান শেখ জামাল ও কর্ণেল জামিল ছাড়া ‘একজন বঙ্গবন্ধুর বাসায় সেদিন ডিউটিরত সৈনিক নিহত হয়েছিলেন কিনা’ এই প্রশ্ন হামিদ সাহেবকে করেন। 


মানে দাঁড়ায় সেদিন যদি পিনাকীর তথ্য অনুযায়ী ৪ জন সৈনিক নিহত এবং ৭ জন সৈনিক আহতের কথা সত্যি হতোই তাহলে আইনজীবি অতি অবশ্যই জেরাতে এই প্রশ্ন করতেনই। কারন খান সাইফুর রহমান রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবি ছিলেন না। [সূত্র- গ্রন্থ- ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা,’ লেখিকা- সাহিদা বেগম, প্রকাশক-খোশরোজ কিতাব মহল, প্রকাশকাল-২০১০, পৃষ্ঠা-২১৯]
পিনাকী বঙ্গবন্ধুর বাসায় স্টেনগান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেটার উত্তরও আব্দুল হামিদ সাহেব তার জেরার প্রেক্ষিতে আদালতে জানিয়েছে। কি জানিয়েছে? জানিয়েছে যে এই অস্ত্র পুলিশ থেকে আটক করা অস্ত্র।
[সূত্র- গ্রন্থ- ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা,’ লেখিকা- সাহিদা বেগম, প্রকাশক-খোশরোজ কিতাব মহল, প্রকাশকাল-২০১০, পৃষ্ঠা-২২১]


এইবার আসি এই লেখার শেষ পর্বে-
আপনারা উপরের আলাপে এই পর্যায়ে এসে আমার ধারনা বুঝে গেছেন পুরো ঘটনা। কিন্তু আমি আপনাকে আরো কিছু তথ্য দিতে চাই। 
সব কিছুর পরেও ধরা যাক তর্কের খাতিরে ধরেও নেই শেখ কামালের গুলিতে সিচুয়েশন বিগড়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে উপরে উল্লেখিত হামিদ সাহেবের বইয়ের থেকে যদি আমরা সূত্র নিয়ে (পিনাকীর নেয়া সূত্র গ্রন্থ) আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই আর্টিলারীর মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে তাদের সাথে আসার জন্য অনুরোধ বা নির্দেশ (যাই বলিনা কেন) দিচ্ছে।


ওই একই গ্রন্থের সূত্রে কিন্তু আমরা দেখতে পাই হঠাৎ করেই মেজর নূর মহিউদ্দিনকে পাশে সরে যেতে বলে বঙ্গবন্ধুর বুকে প্রথজম ফায়ার ওপেন করে পরে মেজর বলুল হুদা। এই স্থানে হাবলদার মোসলেম উদ্দিনেরও নাম কিছু কিছু তথ্যে আসে। [ সূত্র গ্রন্থঃ তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা, লেখক- লে কর্ণেল (অবঃ) এম এ হামিদ, পি এস সি, প্রকাশক- হাওলাদার প্রকাশনী, প্রাকাশকাল- ২০২০, এডিশন- নবম এডিশন, পৃষ্ঠা-৫১-৫৪]
আরো জেনে রাখা ভালো যে উপরে উল্লেখিত গ্রন্থে লেখক ৯১-৯৩ পৃষ্ঠাগুলোতে ’১৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানের সময় মুজিবুর রহমানকে কী বাঁচানো যেত?’ শিরোনামে  অংশ লিখেছেন সেখানে একটি বারের জন্য তিনি শেখ কামালের প্রসঙ্গ আনেন নাই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কারন হিসেবে।


এখন সহজ প্রশ্ন দাঁড়ায়, যদি শেখ কামালের গুলিতেই সমস্ত খুনীদের মেজাজ বিগড়েই যাবে তাহলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে খুন করে আসার পর বঙ্গবন্ধুকে খুনীদের সাথে আসবার বাৎচিত, পাইপ আর চশমা নিয়ে আসবার এত সময় দেয়া, ফোন করবার সময় দেয়া কেন?


এবার বাকিটা পাঠকের বিবেচনার উপর আমি ছেড়ে দিচ্ছি। আমার ধারনা বুদ্ধিমান পাঠকেরা সত্যটা বুঝে নিতে পারবেন।

 

 

 

 

Daily J.B 24 / নিউজ ডেস্ক

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ