• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ; ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  রবিবার, ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ;   ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরুর আগেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন যেসকল বিশিষ্টজন ও সংস্থা


Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৫৫ পিএম
পদ্মা সেতু, প্রকল্প, শুরু, আগেই, নেতিবাচক, মন্তব্য, বিশিষ্টজন, সংস্থা

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায় এবং সামর্থের দৃপ্ত উদাহরণ- পদ্মা সেতু। এই সেতু বাস্তবায়ন নিয়ে শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ বিদেশি প্রভুদের পদলেহী একটি দেশিয় গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা ভাড়াটে লোকজন দিয়ে প্রথমেই দেশি এবং বিদেশি কিছু পত্রিকায় মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে- পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ 'হাপিস' করা হচ্ছে! যদিও তখনও এই প্রকল্পে অর্থায়নের অংশীদারি সংস্থা- বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এক পয়সাও অর্থায়ন করেনি।

অর্থায়ন ছাড়াই কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে- এমন প্রশ্ন দেশের গুজবগেলা গোষ্ঠী কখনই করেনি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার কাছে নামে-বেনামে ই-মেইল পাঠাতে থাকে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর অভিযোগগুলোর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় নিজেদের পত্রিকায় ছাপানো নিজস্ব সংবাদগুলো। ড. ইউনূসের বান্ধবী- মার্কিন সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটনকে (যার রাজনৈতিক তহবিলে ড. ইউনূস দান করেছিলেন অকল্পনীয় পরিমাণ অর্থ) দিয়ে লবিং করানো হয়। বেনামি ই-মেইলের এসব অভিযোগ আবার আমলেও নেয় বিশ্বব্যাংক!

এক পর্যায়ে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে মানসিক পীড়ন সইতে না পেরে পদত্যাগ করেন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন। এসব মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে মামলা হয় কানাডার আদালতে। পরবর্তীতে কানাডার আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। এই ঘোষণার পর বিভিন্ন দাতা সংস্থা এই খাতে বিনিয়োগ এবং অর্থায়নের প্রস্তাব দিলেও প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে নিজস্ব অর্থায়নে।

স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিস্ময় হিসেবে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে এই মহাপ্রকল্পটি। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরস্রোতা এবং তলদেশের গঠন 'আনপ্রেডিক্টেবল' হওয়ায় পদ্মা সেতু বিশ্বের বড় বড় প্রকৌশলীদের কাছে এক দুঃস্বপ্নে নাম। এমন প্রতিকূল পর্যায়ে এমন বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণে অভিজ্ঞতা আছে বিশ্বের মাত্র দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। তাও আবার তাদের কাছে পদ্মা সেতু নির্মাণ উপযোগী সব ধরণের প্রযুক্তি এবং পর্যাপ্ত জনবল নাই। এই সব প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশি এবং বিদেশি প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত টিম বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে সম্পন্ন করেন সেতু নির্মাণ।

এমন অসম্ভবকে সম্ভব হয়ে ওঠে যাঁর দৃঢ়তায়, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার সফল বাস্তবায়ন এই প্রকল্প। যদিও দেশি-বিদেশি তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না- এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তারা। বিদেশিদের কথা বাদ, আমাদের দেশিয় সেই গোষ্ঠীর লোকজনের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, দেখা যাক-

১. ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, বিএনপির উপদেষ্টা এবং জামায়াতের বিভিন্ন সভায় নিয়মিত মুখ এই শিক্ষক বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প দাতা সংস্থা ছাড়া কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর বিকল্প অর্থায়নেও এমন প্রকল্প করা সম্ভব নয়।

২. লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান: বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছিলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বা নিজস্ব অর্থায়নের এ সেতু করা সম্ভব নয়। বরং এটা করলে দেশের অর্থনৈতিক চাপ আরও বেড়ে যাবে।

৩. সিপিডি: বিদেশি লেজুড় এই সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল- বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশের বিপুল উন্নয়ন চাহিদা শুধু দেশীয় বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। পদ্মা সেতু হলে আগামী বছরগুলোয় সামাজিক খাতে বরাদ্দ যথোপযুক্ত বৃদ্ধি না পাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে। এর পরও প্রশ্ন উঠতে পারে, বছর বছর উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দিয়ে নামী-দামি বিদেশি ঠিকাদার নির্মাতাদের আকর্ষণ করা যাবে কি না। পদ্মা সেতু প্রকল্পটি অবাস্তব পরিকল্পনা।

৪. ড. আকবর আলী খান: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেছিলেন, সরকার পদ্মা সেতু করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকগুলো যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি।

৫. ড. স্বপন আদনান: সিঙ্গাপুরস্থ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক বলেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়ন হলেও পদ্মা সেতু গড়া কঠিন। প্রযুক্তি এবং সংগঠনের অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে আদনান বলেছেন, আবারও ক্ষমতায় আসার চিন্তা ভাবনা থেকে সরকার হয়তো যে কোনো পথে এগিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রতীকি সূচনা শুরু করে লোকজনকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তবে বাংলাদেশের মানুষ হয়তো এত বোকা না যে, তারা এই অবস্থায় প্রকল্পের বাস্তবায়নের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করবে।

৬. বিবিসি সংলাপ: বিদেশি এই গণমাধ্যম আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে কয়েকজন 'বিশিষ্ট' অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ করায় সামাজিক ও অবকাঠামো খাতে অন্যান্য অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

৭. উন্নয়ন অন্বেষণ: অর্থনীতি বিষয়ক এই গবেষণা সংস্থার প্রধান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছিলেন, যদি এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় তাহলে সামাজিক অবকাঠামো খাত তথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য সামাজিক প্রতিরক্ষণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৮. সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন): উন্নয়নবিরোধী এই সন্দেহজনক সংস্থাটির পটুয়াখালী জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে আলী খান বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবিও ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্প আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

৯. হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরাম: তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থাটির ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বির উল্ল্যাহ চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এটা অবাস্তব এবং আকাশ কুসুম পরিকল্পনা।

১০. বিএনপি: খালেদা জিয়া এক সভায় বলেছিলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব না। তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটো পদ্মা সেতু বানিয়ে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিবে।' পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ মাঝপথে থাকা অবস্থয় আরেক সভায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, 'জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশবাসী এই সেতুতে উঠবে না। কেউ উঠলে ভেঙে পড়ে যাবে।'

Daily J.B 24 / Dewsdesk

রাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ