• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

অনুসন্ধান : একটি বিশেষ দূতাবাসের  পরামর্শেই ই্ইউকে ধোঁকা দিতে বিএনপি-জামায়াতের বিচ্ছেদ নাটক!


Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৫৪ পিএম
অনুসন্ধান, বিশেষ, দূতাবাস,  পরামর্শ, ইইউ, ধোঁকা, বিএনপি, জামায়াত, বিচ্ছেদ, নাটক

কী বলছেন একে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, দীর্ঘদিনের সংসারে ভাঙন, নাকি তীব্র অভিমানের ফলাফল? মোটেই তা নয়। দিনভর রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলাপ-আলোচনা চলছিল যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্য নিয়ে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের এই নেতা জানান দেন, বিএনপির সাথে জামায়াত আর নেই। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি। এমনকি বিএনপি কার্যালয়ে গেলে এই প্রতিবেদক দায়িত্বশীল কোনো নেতা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

যদিও অনুসন্ধানে মিলেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। আগস্ট মাসের শুরুর দিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা পাকিস্থান দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সাথে পাকিস্থানি দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের মতবিনিময় হয়। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত বা পাকিস্থান দূতাবাস কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়নি। তবে দূতাবাসে অভ্যাগতদের এন্ট্রি বুকের সূত্রে সেদিনের অতিথিদের তালিকার একটি কপি বাংলাদেশের একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার হস্তগত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেই বৈঠকের কয়েকদিন পর জামায়াতের নেতাদের সাথে হঠাৎ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন- বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়। গত ১৪ই আগস্ট পাকিস্থানের স্বাধীনতা দিবসে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কওমি মাদ্রাসায় জামায়াতের নেতাদের সফরের খবর বেশ কিছু পত্রিকায় দেখা যায়। শুধু সিলেটেই ৪৩টি মাদ্রাসায় গেছেন জামায়াতের আমির। বিভিন্ন মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ করে দেওয়াসহ অনেক আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

জামায়াতের আমির এসব মাদ্রাসায় হেফাজতের মুরুব্বিদের সাথে বৈঠক করেন। হঠাৎ কওমি আলেমদের সাথে জামায়াতের এমন মাখামাখি খোদ কওমি গোষ্ঠীর একটা বড় অংশের মাঝে অস্বস্তি তৈরি করে। হেফাজতের নেতা মাইনুদ্দিন রুহী বলেন, 'দুধ কলা দিয়ে পুষলেও জামায়াতের সাথে মিলবে না। কারণ তাদের সাথে আকিদাগত পার্থক্য রয়েছে। যার কথা আহমদ শফি সাহেবও বলতেন। জামায়াতের নীতি আদর্শের স্বীকৃতি নিয়ে অনুদান দিতে চাইলে কওমী আলেমরা তা প্রত্যাখ্যান করবে।' যদিও জানা গেছে, কওমি মুরুব্বিরা জামায়াত আমিরের অনুদান হাত পেতেই নিয়েছে। হেফাজত নিয়ন্ত্রণাধীন কওমি মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়নের জন্য জামায়াতের ২০ কোটি টাকার একটা ফান্ড গঠনের তথ্যও মিলেছে অনুসন্ধানে।

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আহমদ শফী চিরকাল জামায়াতের বিরোধিতা করেছেন। কওমিপন্থীদের আকিদার সাথে জামায়াতের আদর্শের আকাশ-পাতাল ফারাক থাকায় এই বৈরিতা। তবে পাকিস্থানে দীর্ঘকাল পড়াশোনা করে আসা এবং উগ্রবাদীদের সাথে মেলামেশা থাকায় হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হকদের সাথে পাকিস্থান কায়েমি আদর্শবাদী সংগঠন জামায়াতের একটি সুসম্পর্ক সবসময় ছিল। তারা এই উদ্দেশ্যে হেফাজতের ভেতরে বিরোধ ঘটিয়ে আহমদ শফীকে পরপারে পাঠায়। হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভাঙচুরকারীরা ছিল জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার, এটা শফীপুত্র আনাস মাদানীর নিজের বক্তব্য।

মূলতঃ দলের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের ফাঁসির পর সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া জামায়াতের পুনরুদ্ধারে হেফাজতের মত আর্থিক, সাংগঠনিক এবং কর্মীসংখ্যায় শক্তিশালী একটি দলকে নিজেদের সাথে একীভূত করার চেষ্টা করছিল জামায়াত দীর্ঘদিন ধরেই। আর এজন্য পাকিস্থানের পরামর্শে নিজস্ব লোক ঢুকিয়ে হেফাজতে ইসলামকে গত কয়েক বছর ধরে নেপথ্য থেকেই পরিচালনা করছিল জামায়াত। জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের আমির হওয়ার সময় তার সাথে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাখামাখি দেখা গেছে। বাবুনরগরীর মৃত্যু জামায়াতকে সাময়িকভাবে থমকে দেয়। তবে সেই স্থবিরতা কাটাতে কাজ করছে তারা।

গত বছর হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কওমি আলেমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেওবন্দের অলি হোসাইন আহমদ মাদানি জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর অনুসারী হিসেবে আমরাও জামায়াতের বিরুদ্ধে। তাই আদর্শিক কারণেই জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের কোনো ঐক্য হতে পারে না। হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের কোনো জোট হয়নি।

মহিবুল্লাহ এমন দাবি করলেও বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিজেদের ঘাঁটি বানানো এবং হেফাজতের তৃণমূলের নেতাদের মাঝে ক্ষমতার অভীপ্সা তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সাথে একীভূত করার চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত- দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এমন কিছু তথ্য এসেছে সম্প্রতি। জামায়াতের হেডকোয়ার্টার পাকিস্থান এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর এই কাজে আইএসআই'র বিশেষ পরামর্শ অনুসরণ করছে জামায়াত।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই জেনেও নিবন্ধন হারানো ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে একচুলও সরেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাঁধে ভর করে, বিএনপির প্রতীক নিয়ে জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাই দল হিসেবে জামায়াত নির্বাচনে যেতে না পারলেও সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা বিএনপির ওপরেই নির্ভরশীল। বিএনপি ছাড়া জামায়াতের কোনো গতি নাই। আবার অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়ায় হেফাজত নির্বাচনে অংশ নিবে না। তাই কওমিগোষ্ঠীকে নির্বাচনে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপির প্রতীককে সম্বল করে জামায়াত তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের কথা ভাবছে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।

বিএনপির নেতৃবৃন্দের বিদেশি দূতাবাস ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের সাথে গত কয়েক বছর ধরে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের সাথে বিএনপির জোট বাঁধার বিষয়টি অনেকদিন ধরেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে। জামায়াতকে ত্যাগ করার জন্য বিদেশিদের চাপ ছিল বিএনপির ওপর। কিন্তু দলের পলাতক নেতা তারেক রহমানের আপত্তির কারণে বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতকে ছাড়তে পারছিল না। তবে এবার আইএসআই'র বুদ্ধিতে স্ট্র্যাটেজি বদলের দিকে হাঁটছে বিএনপি। তাই জামায়াতকে দিয়ে বলানো হলো, তারা আর জোটে নাই।

জামায়াত একদিকে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে হেফাজতকে সাথে নিয়ে, অন্যদিকে বিএনপি তাদের নাটকের অন্য অংশটি চালিয়ে যাচ্ছে মিডিয়ার সামনে। মূলত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং বিদেশি দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদেরকে নিষ্কলুষ সাজাতে বিএনপি-জামায়াতের এই তালাক নাটকের সৃষ্টি। জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন, তাই আমরা তাদের সাথে নাই- এটাই বিএনপির বক্তব্য। ঘোষণাটা জামায়াতকে দিয়ে দিইয়েছে বিএনপিই। জামায়াতের আমির তার বক্তব্যে বলেছেন- 'আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না।'

শফিকুর রহমানের এই বক্তব্যে এটাই বেরিয়ে এসেছে, বিএনপি চায় না জোট করতে। এভাবে স্বেচ্ছায় জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার বার্তাটি বিএনপি দিতে চায় বিদেশি প্রভুদের। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারলেই বিএনপিকে গুরুত্ব দিবে ইউরোপিয় ইউনিয়ন- এমন ইঙ্গিত দিয়েছে খোদ আইএসআই। জামায়াতের নেতারা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে রেজা কিবরিয়া ও নুরুর নেতৃত্বাধীন অধিকার পরিষদ, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যানারে জামায়াতের ফান্ডেই নির্বাচন করবেন তারা।

কিছুদিন আগে রেজা কিবরিয়া আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা জামায়াত নেতাদেরকে আমলে নিয়েই। 'জামায়াত-বিএনপি একই মায়ের পেটের দুই ভাই'- বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার এই বক্তব্য সবসময়ের জন্যই প্রযোজ্য। বিচ্ছিন্ন হলেও সেটা সাময়িক অভিমান। আর তাদের অভিভাবক হলো পাকিস্থান। আইএসআই'র বুদ্ধি-পরামর্শে এই কৌশল করেছে দল দুটি। বিদেশিদের ধোঁকা দিয়ে আখের গোছাচ্ছে তারা, লক্ষ্য একটাই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। অতএব, এই দেশবিরোধী চক্র হতে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।

Daily J.B 24 / Neesdesk

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ