
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে জেলের মধ্যে খুনের পর, গণহারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রেফতার করা হয়। সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো থেকে প্রগতিশীল ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপসারণ করা হয়। এমনকি জিয়ার সঙ্গে যোগ না দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আব্দুল মতিন চৌধুরীকে ১৯৭৬ সালের ৫ জুন গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রচলিত আইনকে পাশ কাটিয়ে মার্শালে কোর্টে গোপন বিচার সাজানো হয় তার নামে। এরকম আরো অনেক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির কণ্ঠস্বর রোধ করে দিয়ে ভয় সৃষ্টি করা হয় জনমানুষের মনে।
একই সঙ্গে চলতে থাকে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখার নীলনকশা তৈরি। তারই অংশ হিসেবে, নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী তৈরির জন্য ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান গঠন করে ছাত্রদল নামক এক দানবীয় বাহিনী। যাদের হাত ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাসের রাজত্ব চেপে বসে। অবশ্য এর আগে গ্রামভিত্তিক টাউটদের নিয়েও বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল সে।
রাজনীতিবিমুখ জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে প্রথমে গ্রামভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় সরলপ্রাণ জনতার মনে ভয়ের বীজ বপন করে। গ্রাম-প্রতিরক্ষা বাহিনীর নামে প্রতিটি গ্রামে নিজের এজেন্টদের নিয়োগ দেয় সে। সেই বাহিনীর সদস্যদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হয় লাঠি ও রেডিও। যাতে তৎকালীন একমাত্র জরুরি যোগাযোগ মাধ্যম রেডিও মারফত যে কোনো নির্দেশ দিতে পারে সে, এবং সেই আদেশ পেয়ে তার মনোনীত পেটোয়া বাহিনী যেনো সাধারণ জনতাকে অস্ত্রের মুখে দ্রুত জিম্মি করতে পারতে পারে।
এভাবে ক্ষমতা দখলের পটভূমি তৈরির পর, ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি সায়েমকে পদচ্যুত করে অসাংবিধানিকভাবে নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান। এরপর ১৯৭৮ সালে নাটকীয়ভাবে 'জাগদল' নামক একটি দল গঠন এবং নিজস্ব পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে 'হ্যাঁ/না' নামক এক তামাশাময় ভোটের আয়োজন করে। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কফিনে ঢুকিয়ে রেখে, বিভিন্ন দল থেকে সুবিধাবাদী লোকদের একত্রে করে সেই বছরই 'বিএনপি' গঠন করে স্বৈরাচার জিয়া।
কিন্তু জিয়াউর রহমান বুঝতে পারে যে, এই দেশের শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণপ্রজন্মকে বিপথে নিতে না পারলে তার পক্ষে বেশিদিন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখা সম্ভব হবে না। তাই ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ন্যাপ (ভাসানী), ইউনাইটেড পিপিলস পার্টি ও জাগদলের সঙ্গে থাকা ছাত্রদের নিয়ে 'ছাত্রদল' গঠন করে সে। এরপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতে অস্ত্র ও অগাধ অর্থ তুলে দেয়। নতুন নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শুরু হয় কালো-চশমা পরিহিত ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের মহড়া। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের মহড়া শুরু হয় ছাত্রদলের ক্যাডারদের মাধ্যমে; শুরু হয় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি। যে ধারাবাহিকতায়, আজও কথায় কথায় জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসযজ্ঞ ও মানুষকে হত্যার হুমকি দেয় ছাত্রদলের দুর্বৃত্তরা। কারণ এটি কোনো গতানুগতিক দল নয়, এদের কোনো আদর্ম নেই, এটি শর্টকার্টে বড়লোক হওয়ার অতিলোভীদের একটি নষ্ট চক্র। অস্ত্রবাজি, খুন, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্বৃত্তায়ন করাই এদের একমাত্র লক্ষ্য।
১৯৮১ সালে সরকারি জাহাজ 'হিজবুল বাহার'-এ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণ শুরু করে জিয়াউর রহমান। এই ভ্রমণের ছদ্মবেশে ভালো রেজাল্টধারী ছাত্রছাত্রীদের সামনে দ্রুত অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার মালিক হওয়ার প্রলোভন দেখায় সে। ভ্রমণ শেষে পরবর্তীতে তাদের অধিকাংশই ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হয়। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান যেমন বাঙালির জাগরণ ও মুক্তির আন্দোলন দমানোর জন্য এনএসএফ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং সেই দলের ছদ্মবেশে খোকা ও পাচপাত্তুরের মতো খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতো; তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও একইরকম ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল জিয়াউর রহমান। জিয়ার ব্রেনচাইল্ড হিসেবেই পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছিল বাবলু-অভি-নীরুদের মতো সন্ত্রাসী।
ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের প্র Daily J.B 24 / News Deskরাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ
আপনার মতামত লিখুন: