• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

এবার বিএনপির বিকল্প শক্তি সাত মিত্রের ‘গণতন্ত্র মঞ্চ' 


Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪১ পিএম
বিএনপি, বিকল্প শক্তি, সাত, মিত্র, গণতন্ত্র, মঞ্চ 

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও দলটির পুরোনো ও নতুন মিত্রদের কেউ কেউ পৃথক রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরিতে তৎপর। বিএনপির তিনটি পুরোনো এবং চারটি নতুন মিত্র মিলে মোট সাতটি সংগঠন ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে বিএনপি বলছে, সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। এছাড়া মিত্রদের কেউ কেউ পৃথক মোর্চা গড়লেও কেউ-ই বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও বিশ্বাস বিএনপির।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইত্তেফাককে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং এ সরকারের পদত্যাগের দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে আছে। চূড়ান্ত হওয়ার পর আমরা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।’ উল্লেখ্য, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ২০ দলীয় জোট ও বিলুপ্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি।

বিএনপির যেই সাতটি মিত্র সংগঠন ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো হলো- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি রাজনৈতিক দল এবং শেষের দুটি রাজনীতি-মিশ্রিত সংগঠন। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য হচ্ছে বিএনপিকে মূল শক্তি ধরে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বর্তমানে বিলুপ্ত। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. কামাল হোসেন সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর, এটি আর নেই’।

‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠনের উদ্যোক্তারা জানান, তাদেরও লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের  দাবি আদায়। নতুন মঞ্চ গড়ার লক্ষ্যে গত ১০ মে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির সাতটি মিত্র সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য-সচিব নুরুল হক নুর (ডাকসুর সাবেক ভিপি) এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নতুন মঞ্চের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা সমমনারা মিলে মঞ্চটি গড়তে চাচ্ছি। সবার জন্য দরজা খোলা। অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা হচ্ছে। তবে সবাইকে এই মঞ্চে নেওয়া হবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। আমাদের প্রধান দাবিই হচ্ছে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় এ সরকারের অধীনে আমরা কেউ নির্বাচনে যাব না।’

বিলুপ্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের গণফোরামও বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। একাংশের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, অপরাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু। ড. কামাল ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপিকে পাশ কাটিয়েই মিত্র সাতটি সংগঠন ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গড়ছে। বিএনপি ও গণফোরাম ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকদের বেশির ভাগই সম্পৃক্ত হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে। যদিও নতুন মঞ্চের উদ্যোক্তাদের দাবি, তাদের অবস্থান বিএনপির জোটের প্রতিস্থাপন নয়।

নতুন মঞ্চের উদোক্তা দুটি দল গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আবার বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও শরিক। দল দুটি বিএনপির অবস্থানে গিয়ে পৃথক রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার উদ্যোগ নেওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে। নতুন মঞ্চের সঙ্গে যুগপত্ আন্দোলনে যেতে সায় নেই বাম জোটের অন্য শরিকদের। ফলে বামপম্হিদের বৃহত্তর এই জোটে ভাঙনের সুর বাজছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট সূত্রে জানা গেছে, গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্য শরিকদেরও তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দল দুটির নেতারা বাম জোটের অন্য শরিকদের নেতাদের বলেছেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতেই নতুন এই মোর্চা, যা বাম জোটের বিকল্প নয়। তবে বামপম্হি নয়টি দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাম জোটের অন্য সাত সংগঠনই তাদের বক্তব্যে সায় দেয়নি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জানান, দুটি দলের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগে বাম জোটে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে পৃথক মঞ্চে থেকেও এ ধরনের ঐক্য আগেও হয়েছিল। বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থাকতে এই ফ্রন্ট টিকিয়ে রেখেই ১১ দল হয়েছিল। বাম জোটে ভাঙনের আশঙ্কা প্রসঙ্গে সাকি বলেন, বাম জোটের আগামী বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ গঠিত হয়। শুরুতে এই জোটে আটটি দল ছিল। দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে একটি অংশ বের হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) নামে নতুন দল গঠন করে বাম জোটে যুক্ত হয়েছে। এতে বাম জোটের শরিক সংখ্যা হয়েছে নয়টি।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি এবং গণস্বাস্হ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত ১৬ মে যেই জাতীয় সরকারের ফর্মুলা দিয়েছেন তাতে সায় বা আগ্রহ নেই তার নতুন-পুরোনো মিত্রদের কারোই। বরং তার প্রস্তাবিত দুই বছরমেয়াদি জাতীয় সরকারে কে কোন পদে থাকবেন সেটির নামসহ তিনি যে তালিকা দিয়েছেন তাতে লিখিত আপত্তি জানিয়েছে ভাসানী অনুসারী পরিষদ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ঐ ফর্মুলা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ব্যক্তিগত, এটির সঙ্গে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

Daily J.B 24 / Dewsdesk

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ