• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

Advertise your products here

Advertise your products here

ঢাকা  শুক্রবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ;   ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ভারত সফরে জিয়ার প্রাপ্তি একটি স্যুট পিস, খালেদা ফিরেছিলেন শূন্য থালা হাতে


Daily J.B 24 ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৪৭ পিএম
ভারত, সফর, জিয়া, প্রাপ্তি, স্যুট পিস, খালেদা, শূন্য, থালা, হাত

স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর ১৯৭৭ সালের ১৯শে ডিসেম্বর প্রথম ভারত সফরে গিয়েছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ সফর সম্পর্কে যা বলা হয়েছিল- 'প্রতিবেশীর সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক উন্নয়ন’।

জিয়ার সেই ২ দিনের সফরে কোনো চুক্তি দূরে থাক, একটি সমঝোতা স্বাক্ষরও হয়নি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সঙ্গে জিয়া এক চা চক্রে মিলিত হন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জিয়াকে একটি স্যুট পিস উপহার দেন। যা নিয়ে পরদিন ২০শে ডিসেম্বর কলকাতার ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকা একটি চমৎকার ইঙ্গিতবাহী প্রতিবেদন প্রকাশ করে লিখেছিল- ‘জিয়াকে উর্দি ছাড়তেই স্যুট পিস দিলেন মোরারজি।'

জিয়া তখন নানার বাড়ির সম্পত্তির মত একাধারে দেশের সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি। তুখোড় রাজনীতিবিদ দেশাই তাই স্যুট পিস দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিলেন উর্দি পরা স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয় না।

জিয়া তার শাসনামলে আরও দু’বার ভারত সফর করেছিলেন। ১৯৮০ সালে ২১শে জানুয়ারি ইউনিডো সম্মেলনে যোগ দিতে জিয়া ভারত সফর করেন। জিয়ার ভারত সফরের মাত্র ৭ দিন আগে ১৪ই জানুয়ারি ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। ঐ সফরের সময় জিয়াউর রহমান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শত চেষ্টা করেও মিসেস গান্ধীর সঙ্গে জিয়ার একটি সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি।

তারপর জিয়ার শেষ ভারত সফর ছিল ৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯৮০। আঞ্চলিক কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে জিয়া ভারতে যান। এবার তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি ফটোসেশনে অংশ নিতে সক্ষম হন। গঙ্গার পানি, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি কোনো বিষয়েই জিয়া টুঁ শব্দটিও করেননি। জিয়াকে যারা বীর সাজিয়ে উপস্থাপন করেন, তাদের জন্য সত্য ইতিহাস নিবেদন করা হলো।

এবার আসা যাক খালেদা জিয়ার ভারত সফরের প্রাপ্তি বিষয়ে।

খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৯২-এর ২৫শে মে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মূল আলোচনার বিষয় ছিল অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশ বন্ধ। খালেদা-নরসিমা বৈঠকের পরপরই ভারত থেকে 'পুশ-ইন' শুরু হয়। ৩ দিনের সফর শেষে ঢাকায় ফিরে খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

খালেদা জিয়াকে 'ম্যাডাম' সম্বোধন করতে হতো, নইলে তিনি রেগে গালাগাল করতেন। এতদিনে সাংবাদিকদের তা জানা হয়ে গেছে। দেশের সকল দৈনিকের সাংবাদিকরা সেখানে অপেক্ষায় রয়েছেন, ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেয়েছে, তা জানতে। এ সময় 'ম্যাডাম' সম্বোধন করে একজন সিনিয়র সাংবাদিক জানতে চান, ‘ম্যাডাম, গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না।’

জবাব দিতে গিয়ে হতভম্ব ভাবটি এড়াতে পারেননি খালেদা জিয়া। কোনোমতে লাজুক ভঙ্গিতে একটু হাসি দিয়ে বললেন, ‘ইশ! আমি তো এ বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলোম।’

যা-ই হোক, খালেদা জিয়ার ভারত সফরের পর শুরু হয় পুশ-ইন। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো শুরু করে ভারত। খালেদা জিয়া তার সফরেই এ-সংক্রান্ত মুচলেকা দিয়ে এসেছেন বলে তখনকার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এ সবই সত্য ইতিহাস।

এবার দেখা যাক খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সফরটি কেমন ছিল।

খালেদা জিয়া তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০০৬ সালের ২০শে মার্চ বিএনপি-জামায়াতপন্থী ৪০ জন ব্যবসায়ীসহ ৯৬ সদস্যের এক বিশাল প্রতিনিধি দল নিয়ে দিল্লি যান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে মনমোহন সিংয়ের সেই বৈঠকটি ছিল তিক্ততাপূর্ণ। খালেদা জিয়া সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো ভারতের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে, এ নিয়ে রাখঢাক ছাড়াই সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। সেই সাথে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ভয়াবহ সংখ্যালঘু নিপীড়ন এবং হিন্দুদের দেশত্যাগ নিয়েও কথা হয় দুই প্রধানমন্ত্রীর।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ সময় আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের স্পষ্ট ভূমিকা দাবি করেন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদদে এবং পাকিস্থানের সহায়তায় সৃষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোর ভারতবিরোধী তৎপরতা ও ধর্মীয় সন্ত্রাস নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক এতটাই তিক্ততাপূর্ণ ছিল যে, দুই দেশ যৌথ ইশতেহার পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। শুধু সৌজন্যতা হিসেবে একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিরাপত্তা, বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় দেশজুড়ে এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এখন তারাই যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরে ভারত থেকে দেশের জন্য কী এনেছেন, এ নিয়ে মিথ্যাচার করে এবং গুজব ছড়ায়, তাদেরকে কী বলা যায়?

তবে মজার বিষয় হলো, এরাই আবার প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা জাপান সফরে গেলে কী এনেছে, তা নিয়ে কথা বলে না। শুধু ভারত থেকে কী এনেছে, সেটা নিয়ে আলাপের বেলায় সরব। কারণ, তার খাস পাকিস্থানপ্রেমী পরাজিত শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর। মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত বন্ধু ভারতের বেলায় তাদের স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক অ্যালার্জি।

মূলতঃ ৭১-এ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, বিজয়ের পর তারাই বাংলাদেশে সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় ভারতবিরোধিতার জিগির তোল। ’৭৫-এ যে অপশক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তারাই ভারতবিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্থান বানানোর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল। ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারতবিরোধিতা’ ছিল সস্তা এক হাইপ। ‘ভারত জুজু’র ভয় দেখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারার পুনর্বাসন করা হয় জিয়ার হাত ধরে, যা চলছে এখনও।

একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত হোক বাঙালি, রাজাকারের বংশধররা নিপাত যাক অন্ধকারে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Daily J.B 24 / Newsdesk

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ